আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে এত সিরিয়াস কেন?
0
0
1 Answers
3.1 K
0
Answered
1 year ago
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমাদেরও উচিত প্রশ্ন করা কেন আমাদের দেশের সরকার এই অর্থনীতি বিষয়ে সচেতন নয়।
আমেরিকা ও রাশিয়ার মত দেশগুলো অর্থনীতি নিয়ে এত over obsessed তার কারণ একটা দেশের চলনশক্তি হলো অর্থনীতি। তবে কথাটা আমেরিকার ক্ষেত্রেই খাটে রাশিয়ার ক্ষেত্রে নয়। কারণ রাশিয়ার বর্তমান একনায়কের সরকার আর যাই হোক অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে এমনটা বলা যায় না। তাদের প্রাধান্য হলো যুদ্ধ। যদি বাজার ব্যবস্থার (Market system economy) কথা বলি তবে বলবো বাজার ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো চলে নিরপেক্ষ পরিস্থিতিতে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি হলো অর্থনীতিকে সরাসরি পরপারে পাঠানোর টিকিট। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে Investor confidence একেবারে লো পয়েন্টে পৌঁছে যায়। তার ফলে বিনিয়োগ হিসাবে নতুন পুঁজি তো দেশের মধ্যে আসেই না, উপরন্তু, দেশের অভ্যন্তরীণ পুঁজিও বাইরে চলে যায়।
ধরুন, আপনি একজন ভারতীয় বিনিয়োগকারী এবং ভারত কাল পাকিস্তানের ওপর যুদ্ধ ঘোষণা করলো। প্রথম দিনেই মার্কেট একটা ঝটকায় অনেকটাই পড়বে অর্থাৎ নিচে নেমে যাবে। সরকার হয়তো সম্পূর্ণ চেষ্টা করবে প্রবোধ দেওয়ার যে মার্কেট অচিরেই রিকোভার করবে। কিন্তু সরকার যাই করুক না কেন, যুদ্ধ যদি না থামে অর্থনীতির পাঁজর গুঁড়িয়ে যাবে। এখন আপনি একজন বিনিয়োগকারী। আপনার বিনিয়োগের পরিবর্তে আপনার রিটার্ন দরকার। এবার আপনার দেশে যুদ্ধ চলছে, বাজার মন্দা, এবং সেই সঙ্গে ধরে নেওয়া যাক আপনি ঝুঁকি নেওয়া একেবারে পছন্দ করেন না। আপনি এখানে ৪% রিটার্ন পাচ্ছেন সরকারি বন্ডে ও ৬% পাচ্ছেন হাইলি সিকিউরড কর্পোরেট বন্ডে , যা হলো একেবারে নিট অ্যান্ড ক্লীন রিস্ক ফ্রী। এখন আপনার পাশের দেশ চীনের সরকারি বন্ডে পাওয়া যাচ্ছে ৩% ও কর্পোরেট বন্ডে পাওয়া যাচ্ছে ৮% উইথ অ্যাবসলিউট মিনিমাম রিস্ক। আপনার দেশ ভারতে আপনার $10 M বিনিয়োগ ছিল। আমি যদি আপনার জায়গায় থাকতাম, প্রথম সুযোগেই আমার বিনিয়োগ চাইনিজ মার্কেটে স্থানান্তরিত করতাম। শুধু আমি না আপনি আমি একা নয় আমাদের মতো সিংহভাগ হয়তো পুরো বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীই একই কাজ করতো। রাশিয়ার সঙ্গে এখন তাই ঘটছে। এই পুঁজির স্থানান্তর করণ রাশিয়ার অর্থনৈতিক মন্দা কে আরো দীর্ঘস্থায়ী ও জোরালো করে তুলছে।
রাশিয়ার বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া থেকে। সেই বিনিয়োগের সিংহভাগই যাচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপে। সেই বিনিয়োগের পুঁজি ভারত, চায়না, ও অন্যান্য এশিয়ান মার্কেটে খুবই কম এসে পৌঁছচ্ছে। কারণ এরা এমার্জিং বা উঠতি মার্কেট। কাজেই ডেভেলপড মার্কেটের থেকে ঝুঁকি অনেক বেশী।
কাজেই রাশিয়া যে অর্থনৈতিকভাবে সিরিয়াস এটা আর যাই হোক এই পরিস্থিতিতে শুনতে খুবই হাস্যকর লাগে।
আমেরিকা কিন্তু বাস্তবে সেই দেশ যে আসলেই অর্থনীতির বিষয়ে সর্বদা সক্রিয় থাকে। মন্দা আসার সামান্যতম সম্ভবনা দেখা দিলেও ফেড ও আমেরিকান সরকার তৎক্ষণাৎ ড্রাস্টিক মেসার্স নেয়। তবুও, তা সত্বেও, দুনিয়ার সবথেকে বড়ো মন্দাগুলোর সৃষ্টি হয়েছে আমেরিকাতে। ১৯২৯ এর গ্রেট ডিপ্রেসন, ১৯৬৫ ক্রাশ, ১৯৮১ এর মন্দা, ১৯৯৯-২০০২ ডটকম বাবল, ২০০৮ এর সাবপ্রাইম ক্রাইসিস ইত্যাদি হলো বড়ো বড়ো কয়েকটা অর্থনৈতিক মন্দা যা আমেরিকায় সৃষ্টি হয়েছিল।
অনেকে বলবেন , যুদ্ধ তো আমেরিকাও করেছে, এবং রাশিয়ার থেকে বেশি করেছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম হলো প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তদসত্বেও, আমেরিকার অর্থনীতি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও রমরমিয়ে এগিয়েছে। আর রাশিয়ার ক্ষেত্রে তা হয়েছে পুরো উল্টো। এমন কেন হলো?
অর্থনীতিতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ঠিকই। কিন্তু আমেরিকা ও রাশিয়ার যুদ্ধ করার ধরনের মধ্যে একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ন পার্থক্য আছে। সেটা হলো দূরত্ব।
রাশিয়া যে যুদ্ধগুলো করে বা করেছে তা তাদের বেশিরভাগই নিজেদের বর্ডারের কাছাকাছি বা নিজের ভূমিতে। কিন্তু আমেরিকার ক্ষেত্রে সেটা উল্টো। সিভিল ওয়ারের পর ওরা যে যে যুদ্ধে লড়েছে তার অধিকাংশই কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে। কাজেই, যুদ্ধভূমি থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের নিজেদের দেশের মাটিতে অর্থনীতির উপর তার খুব একটা খারাপ প্রভাব পরে না। এছাড়াও তারা যেনো তেনো প্রকারেন, নিজেদের যুদ্ধটাকে ঠিকই লেজিটিমাইজ করে নেয় যাতে দুনিয়ার ক্ষোভ তাদের উপর না পড়ে ।
অতএব, আমি স্বীকার করছি আমেরিকা অর্থনীতির বিষয়ে অত্যন্ত সক্রিয় এবং সিরিয়াস। কিন্তু রাশিয়া কখনোই নয়।
এই সম্পর্কে আরো অনেক কারণ লেখা যায়। কিন্তু অযথা উত্তর লম্বা করে কাজ নেই।
বি: দ্রঃ - আজকাল কিছু লিখলেই কোনো না কোনো আহাম্মক এসে বলে বসছে " কমিউনিস্ট হয়ে অমুক লিখছেন কেন, তমুক লিখছেন কেন"। তা এখানে যদি কারো সেরকম কিছু জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে হয় তবে প্রথমেই উত্তরটা দিয়ে রাখছি যাতে করে বারবার না একই কথা লিখতে হয় - আমি কমিউনিষ্ট হই, যাই হই না কেন তাতে আপনার কি, আমার যা লেখার ইচ্ছে করবে তাই লিখবো এবং বেশ মজা করে রসিয়ে রসিয়ে লিখব, আপনার ওই অযৌক্তিক মতামত আপনার কাছেই রাখুন।
এত কিছু বলার পরেও অনেকেই ভ্রু কোঁচকাবে এবং বলবে " কমিউনিস্টবাবু পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে নিয়ে লিখছেন কেন?"
আরে মশাই, কমিউনিস্ট হলেও কলেজে আমাকে অর্থনীতি পড়তে হয়েছে, কাজেই ওটা আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার একটা অংশ। কাজেই কিছু করবার নেই।
romzanreza publisher