আমি ভালো ছাত্রী। কিন্তু ইদানিং অনেক ছেলে আমাকে প্রেম এর প্রস্তাব দিচ্ছে, এমন না যে তারা মজা করছে, তারা সিরিয়াস। এখন আমার মনও ডাইভার্ট হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কী করণীয়??

1 Answers   7.8 K

Answered 2 years ago

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আমি যখন হাইস্কুলে পড়তাম তখন আমার ক্লাসের ২ রোল ছিল যে মেয়েটার তাকে আমরা ডাক্তার বলে ডাকতাম। শুধু আমরা না আমাদের স্কুলের শিক্ষকরাই তাকে ডাক্তার বলে ডাকতো। এক ভাল ছাত্রী আসলেই খুব কম হয়। যেমন ক্রিয়েটিভ নলেজ এবং তেমন মুখস্ত বিদ্যা। আমার বান্ধবী খুবই সুন্দরী ছিল। তার জন্য রাস্তায় হেন ছেলে নেই যে দাড়িয়ে থাকতো না,েএকবার দেখার আশায়। কিন্তু সে পড়াশোনা নিয়ে মহাব্যস্ত।

আমরা এস.এস.সি পাশ করে কলেজে উঠলাম। উপজেলা শহরের কলেজে এডমিট না হয়ে শহরের কলেজে এডমিট হলাম। ছেলেরা ডিস্টার্ব করে বলে আমার বান্দবীকে মহিরা কলেজে এডমিট করা হয়। এর মধ্যে আশেপাশের ছেলেরাও তাকে জালাতন করতে থাকে। আমার বান্ধবী শখ করে ফোন কিনে। আর যে দিন ফোন কিনে সে দিনই ছিল তার মৃত্যর দিন। মানে এই ফোনই তার জীবনটাকে শেষ করে। নতুন ফোন নিয়ে একদিন , দুইদিন এর সাথে তার সাথে কথা বলা চলতে থাকে।

অবশেষে ঠিক যখন মেডিকেল কোচিং চলছে, তখন আমাদের জুনিয়র এক ছেলের সাথে মা-বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করে বসে। এর মাঝে এইচ.এস.সি রেজাল্ট হয় খারাপ। যে মেয়েটি গোল্ডেন পেয়ে এস,এস,সি পাশ করে সে তখন কোন রকম জি.পিিএ ৪ পেয়েছিল। মা-বাবা তাদের মেনে নেয় নি। একসাথে থাকার জন্য তারা ঢাকায় চলে আসে। এই দিকে মেডিকেল কোচিং শেষ। আমার বান্ধবী কোথায় আছে আমরা কেই জানি না।

আমরা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিট হই। একদিন এলাকায়গেলাম গিয়ে দেখি আমার বান্ধবীর দুই পরিবার একসাথে হয়েছে। যে ছেলে তাকে বিয়ে করেছে সে বান্ধবীকে অনেক মারধর করে। এই জন্য ছাড়াছাড়ি হবে। ওরা মাত্র ৬ মাস সংসার করতে পেরেছিল। ওদের ভালবাসা শাহরুখ খান- কাজল জুটিকেও হার মানিয়েছিল। কিন্তু ৬ মাসও সেই ভালবাসা টিকলো না।

এখন ভেবে দেখেছ মাত্র ৬ টি মাস এত মেধাবী একটা মেয়ের সমস্ত জীবনটা অতিষ্ট করে দিয়েছে। যে মেয়েকে ডাক্তার বলে ডাকা হতো সেই মেয়ে স্নাতক টাই পাশকরতে পারলো। সত্যিই বড় আক্ষেপ ওর জন্য।

এখন কথা আসতে পারে সবার জীবন কি এমন হবে? না সবার জীবনে এমন হবে না। কিন্তু প্রেম কেন করে মানুষ

তার কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে। আসলে প্রেম করার বয়স আছে। স্কুল, কলেজে যে প্রেম গুলো আশে পাশে ঘুরঘুর করে এইগুলোর মধ্যে ৯৫% যৌন চাহিদা। বিষয়টা একটু পরিষ্কার কিরছি। এই বয়সটাতে আমাদের শরীরের নানা পরিবর্তন দেখা দেয় তখন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ব্যাপক আকর্ষণ বাড়ে। আর এটা স্বাভাবিক কিন্তু এই সময়ের আবেগ কে যদি মনে করা হয় আমি প্রেমিক তাহলে সেটা ভুল।

প্রেম মানে শুধু প্রেম নয় অন্যের দায়িত্ব নেয়া। যেখানে আমি নিজে চলি বাবার টাকায় সেখানে অন্য আর একজন এর দায়িত্ব কিভাবে নিব। আর একটা মানুষ আর একটা মানুষের দায়িত্ব নেয়ার জন্য মিনিমাম একটা পড়াশোনা, চাকরি এবং টাকা-পয়সার দরকার হয়।

কথা আসতে পারে আরে আমরা তো বিয়ে করছি না, প্রেম করছি। একজন আর একজনকে সময় দিচ্ছি। এই ব্যাপারে আমার একটা উদাহরণ এর কথা মনে হচ্ছে। যে ছেলেটা প্রথম দিন সিগারেট খায় ও ভাবে আরে একদিনই তো একটু সিগারেট খেলে কিছু হবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই ছেলেই একদিন নেশা করা শিখে যায়। প্রেমটাও নেশা। িএকদিন একবার দেখা করি, আজকে ফোনে একটু বেশী কথা বলে ফেলি, কালকেই শুধু দেখা করবো এরপর আর না। এইরকম একদিন ,দুই ‍দিন করতে করতে কখন যে হাজার হাজার ঘন্টা চলে যায় তা টেরও পাওয়া যায় না। তাই নেশা গ্রস্ত হওয়ার আগে একটু ভাবা উচিৎ।

এখন অন্য আর এক শ্রেণীর মানুষ এর কথা বলি। ভাই তোমারে ভাল লাগছে কিছু দিন দুইজন একসাথে আছি এর পর যে যার মত। এদের কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু এরা একে অন্যের সাথে ইনজাস্টিস করছে তা কোন অপরাধ ই মনে করছে না। প্রেম মানুষ কেন করে?

এটা আগে জানতে হবে। প্রেম এর জন্য বয়স গুরুত্বপূর্ণ। তুমি কোন ক্লাসে পড় তা আমার ধারণা নেই। কিন্তু যে ক্লাসেই পড় আশেপাশের ছেলেরা খুব মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসার কথা বলছে ওরা একদিন চলে যাবে।

আর যদি কেউ থাকার ওরা আজকে, কালকে, এমনকি বহুবছর লেগে থাকবে। মনে রেখ ছোট বেলার প্রেম হয় আবেগে কিন্তু বড় বেরার প্রেম হয় স্টেটাসে। ছোট বেলায় যে বন্ধুটি তোমার সাথে পড়ে বড় হয়ে সে হয়ত মুদির দোকানদার। অথবা সে বড় কোন অফিসার আর তুমি কোনমতে ডিগ্রীটা পাশ করেছ। একবার ভাব তুমি ডাক্তার তখন কি তুমি মুদির দোকানদারকে বিয়ে করবে। আবার সেই বন্ধুটি যখন বড় অফিসার তখন কি তোমার মত সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করবে?

আর প্রেম এর পরিণতি হচ্ছে বিয়ে। প্রেমটা আমার সেই জন্যই করি যেন পছন্দের মানুষটির সাথে সারা জীবন কাটাতে পারি। আর আমরা যখন সারা জীবন কাটানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেই তখন আমরা বেশ বড় হয়ে যাই । চিন্তই পরিবর্তন আসে, রুচিবোধ ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার বান্ধবীর জন্য যে ছেলে গুলো ঘুর ঘুর করতো। যখন ওর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল তখন কোন একটা ছেলে এসে বলে নি আমি তোমাকে ভালবাসতাম এখনও বাসী। মাত্র ছয়টি মাসে ওর চেহারা তো আগের মতই ছিল, যেমন সুন্দরী তেমনই। কিন্তু কেন একটা ছেলেও এগিয়ে আসলো না ? খুব সহজ উত্তর ওর বিয়ে হইছিল এখন ছাড়াছাড়ি।

আমার কতটুকু আবেগী, আমার পরিবারের কি অবস্থা, আমি যার সাথে সম্পর্ক করতে চাচ্ছি তার বয়স কত, সে কি এস্টবলিস্ট কি না, তার পরিবার কেমন, ইত্যাদি নানা বিষয় ভাবা উচিৎ। বাস্তবতা হচ্ছে ভালবাসা তখনই গাঢ় হয় যখন সব কিছু ভাল ভাল হয়। তাই তুমি ভাল ছাত্রী কথাটা বলতেই আমার বান্ধবীর কথাটা মনে পড়ে গেল। তাই কিছু বলার চেষ্টা করা। মূল কথা প্রেম হচ্ছে একটা আবেগ যাকে যে প্রশ্রয় দিবে সে তার জীবনের দ্যৗড় থেকে পেছনে পড়ে যাবে। আবার প্রেমও শক্তি কিন্তু সেটা তোমার ক্ষেত্রে সম্ভবত নয়। তাই আবেগ নিয়ন্ত্রন করাই শ্রেয়। এই আবেগটা বেশী দিন থাকে না, বাস্তবতা যখন কঠোর হয়ে সামনে আসে। কেন মানুষ প্রেম করে এই নিয়ে একটা লিখা আছে আমার দেখে আসতে পার, লিংক উপরে দেয়া আছে।

Aabonti
aabonti
320 Points

Popular Questions