Answered 2 years ago
'একটা মিথ্যা গল্পকে এক হাজার মানুষ এক মাস ধরে বিশ্বাস করলে তা হয় ফেইক নিউজ, আর একটা মিথ্যা গল্পকে কোটি কোটি মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বাস করলে তা হয় ধর্ম, আর আমরা এই ধর্ম নামক ফেইক নিউজের সমালোচনা করলে ধার্মিকেরা অভিযোগ করে যে আমরা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে অশ্রদ্ধা করছি' --লেখক দার্শনিক ইউভাল নোয়াহ হারারি।
'ধর্ম সাধারণ মানুষের কাছে সত্য, জ্ঞানীর কাছে মিথ্যা আর শাসকের কাছে প্রয়োজনীয়'- সেনেকা।
ইশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে কোটি চিন্তক চিন্তা করেছেন। প্রধান ধর্মগ্রন্থ গুলো বছরের পর বছর ধরে স্টাডি করেছেন। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই যুক্তি আর বিজ্ঞানের দ্বারা ধর্মগ্রন্থগুলোতে ঈশ্বরকে খুজে পাননি। পাওয়া সম্ভবও নয়। কারণ প্যারালালিজম বলে যুক্তিবিদ্যায় যে টার্মটা আছে সেই শক্ত টার্ম দ্বারা একেশ্বরবাদী এবং বহু ঈশ্বরবাদী দুই ধরনের ধর্মই অসাড় প্রমাণিত হয়।
তবে ঈশ্বর কোথায় আছেন সেটা না খুজে ঈশ্বর কোথায় নেই সেটা খুজলে তার অস্তিত্বের ব্যাপারে আরও ভালোভাবে সিদ্ধান্তে আসা যায়।
অত্যাচারী শাসকদের সাথে ঈশ্বর নেই, আফগানিস্তানে যারা ঈশ্বর বা আল্লার নাম নিয়ে এই একবিংশ শতকে এসে একে ফোরটি সেভেন নিয়ে জোর করে ক্ষমতাগ্রহণ করে নারীদের অবরুদ্ধ করে,সংগীত শিল্পীদের হত্যা করে, বিজ্ঞান শিক্ষাকে নিষিদ্ধ করে আইন করে নারী,শিল্পী, বিজ্ঞানীদের জন্য দেশটাকে নরক বানিয়ে ফেলে দের সাথে ঈশ্বর নেই। থাকতে পারে না।
আমাদের উপমহাদেশে যেখানে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কোটি কোটি মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে থাকে— অর্ধাহারে থাকে সেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মসজিদ-মন্দির যারা নির্মাণ করে ঈশ্বর তাদের সাথে নেই,তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে যত যুক্তিই দেখাক না কেনো তার কিছুই আমি বিশ্বাস করিনা।
ঈশ্বর যদি থেকে থাকেন তবে সৃষ্টির মাঝে আছেন। তাই যারা সৃষ্টির সেবা করেন, সমস্ত সৃষ্টির মঙ্গলে ব্যাপৃত থাকেন তারাই ঈশ্বরের সেবা করেন। সেখানে মিথ্যাচার নেই, মিথ্যা পরকালের আশ্বাস নেই, হিংসা নেই। ঈশ্বরের সেবা করে থাকলে মাদার তেরেসা করে গেছেন, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল করে গেছেন, দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে আব্রাহাম লিংকন করে গেছেন, মহাত্মা গান্ধী সারাজীবন জেল জুলুম খেটে করে গেছেন, হাজার হাজার অনাথ শিশুদের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করছেন কৈলাস সত্যার্থী। করোনা নামক মহামারির ভ্যাক্সিন যে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন তারা ঈশ্বরের সেবা করেছেন। আর উক্ত মানুষেরা যে স্বর্গে জায়গা পাবেন না ভেবে নেবেন সেই স্বর্গ মিথ্যা, অস্তিত্বহীন, মানুষের কল্পিত। মুসলিমদের যে বেহেশতে মাদার তেরেসার স্থান নেই আমি সেই বেহেশতকে বিশ্বাস করিনা। হিন্দুদের যেই স্বর্গে আব্রাহাম লিংকনের স্থান নেই আমি সেই স্বর্গে বিশ্বাস করিনা, খ্রিষ্টানদের যেই হেভেন এ মহাত্মা গান্ধী বা কৈলাস সত্যার্থীর স্থান নেই আমি সেই হেভেন এ বিশ্বাস করিনা।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় বানী E=MC^2, এই তত্বকে বাদ দিলে বর্তমান সভ্যতা অচল।আধুনিক প্রযুক্তি,চিকিৎসা বিজ্ঞান যাই বলেন সব এসেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের হাজার হাজার বছরের চেষ্টার ফলে, কোনো ঐশ্বরিক গ্রন্থ থেকে না। অবশ্য সব ধর্মের ধর্মপ্রচারকেরাই দাবি করে যে তাদের ধর্মগ্রন্থ ঘেঁটে নাকি বিজ্ঞানীরা সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো করেছেন। এমনসব দাবি সোজা বাংলায় বাটপারি। কারণ এমন দাবি না করলে তাদের ধর্মব্যবসা টিকেনা,লাখ লাখ টাকা উপার্জন হয়না। এই বাটপারি চিন্তাশীল ও রেশনাল মানুষেরা বুঝতে পারেন। তাই ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতে নাস্তিকদের শতকরা হার এতো বেশি, বাসযোগ্য দেশ বা শহরের তালিকাতেও সেসব দেশ/শহরগুলো বেশি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা।
mrdevs publisher