Answered 2 years ago
যদি এ্যমাজন আছে, এবং তাই দিয়ে মানুষের কাজ চলছে, তাহলে লোক আপনার কাছে কেন আসবে? সবথেকে প্রথমে এই আইডিয়া নিয়ে কাজ করুন।
আপাতত আপনার কাছে একটি ‘ইচ্ছা’ আছে। আপনি ধনী হতে চান। তাই ধন আপনার কাছে নেই। জ্যেফের কাছে আইডিয়াটা ছিলো। তাই আস্তে আস্তে ধন ওর কাছে চলে গেল। সহজ কথায় আপনার কাছে এমন কোনো আইডিয়া থাকতে হবে, যা মানুষ গ্রহণ করতে পারে, কারণ তা তারা উপযোগী বলে মনে করবে। তাহলে তারা আপনাকে পয়সা দেবে।
তাহলে ধণী হওয়ার প্রথম বস্তুটি আপনার কাছে নেই।
আপনার বস্তু বা পরিসেবার সম্পূর্ণ বিক্রয় মূল্য -(বিয়োগ) আপনার নির্মিতির মূল্য হলো আপনার লাভাংশ।
আপনার আইডিয়াকে কার্যকর করতে, ক্রিয়ান্বিত করতে কি লাগবে। একটি নির্মিতি। এখন সেটা আপনি করবেন না আপনি অন্য কারুর নির্মিতি বেচবেন।
এ্যামেজন অন্যের নির্মিতি আপনাকে বিক্রি করে।সে অন্যের নির্মিতি আপনাকে দেখায়, আপনাকে জানান দেয় যে আপনি যা চাইছেন, তা কতো রকমের, কত দামে আছে, আপনি তা নিজের বাড়ীতে বসে তা কি ভাবে পেতে পারেন, সেই বস্তুর বিষয়ে অন্যদের মতামত কি?
যদি আপনি এই পরিসেবা নেন, তাহলে এ্যামেজন অন্য পরিসেবা প্রদানকারীর সাহায্যে আপনাকে সেই বস্তু উপলব্ধ করিয়ে দেয়।
আপনি তার মূল্য দেন। তার থেকে আসল নির্মিতি করা প্রতিষ্ঠান নিজের টাকা পায়, মধ্যের পরিসেবা প্রদানকারীরা যারা এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় বস্তুটি চালান করছেন তাদের টাকা বিয়োগ করে এ্যামেজন নিজের টাকা পেয়ে যান।
তাহলে এ্যামেজন এই পরিসেবার একটি পরিকাঠামো তৈরী করেছে। আপনাকে অনলাইনে একটি মঞ্চ তৈরী করে দেখিয়েছে। তা জনসাধারনের কাছে উপস্থাপিত করেছে। জনসাধারণ জাগরুক যে এমন একটি মঞ্চ আছে, যেখানে বাড়ীতে বসে জিনিস পাওয়া যায়, টাকা কম দিতে হয়, ধোকা খেতে হয় না।
এই পুরো বিশ্বাস যোগ্য একটি মঞ্চ হয়ে নিজেকে উপস্থাপিত করা ও প্রতিষ্ঠিত করার কাজ এ্যামেজন নিজে করেছে। তার পুরো খরচ সে নিজে করেছে। তার মঞ্চ ক্রেতার কাছে একরকম, বিক্রেতার কাছে একরকম, পরিসেবা প্রদানকারীর কাছে একরকম। এই এতবড় মঞ্চটির চালনা করার খরচ বিশাল। তার মঞ্চের ব্যেক এন্ড কি রকম হতে হবে, যা প্রায় বিশ্ব জুড়ে সকল দেশের লোকের কাছে ২৪*৭ উপলব্ধ হতে হবে। তার এ্যাপ কি হারে ডাউনলোড হচ্ছে, সেই হিসাবে তার ব্যেক এন্ড ডাটা প্রসেসিং এবং এনালিটিক্স চলছে। মানে তার কাছে তথ্য আছে কোন দেশে, কোন সময়ে কোন বস্তু কি হারে কতজন খুঁজছেন, বা আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা এটিও জানেন যে কোন ব্যক্তি তার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
এবার এই রকম পরিসেবা চালানোর জন্য তার বহর কি হতে পারে, তা কল্পনা করা-ই যায়। কিন্তু তার খরচ? তা কি ভাবে সম্ভব। যেমন আপনি যদি নিজের ব্যবসা চালান, তাহলে আপনার বস্তুর বাজার ধরতে হলে আপনাকে বিজ্ঞাপন দিতে হবে, রিটেইলার কে তার কমিশন দিতে হবে, ট্রান্সপোর্টের টাকা দিতে হবে, তারপরেও আপনি জানেন না যে আপনি নির্দিষ্ট বা আপনার জন্য উপযোগী ব্যক্তির দৃষ্টিতে পড়েছেন কি না? ১০০ জন আপনার বিজ্ঞাপন দেখেছে, কিন্তু যে কিনতে চাইছে সে দেখেছে কি? কিন্তু এ্যামেজনের মঞ্চে সেই ব্যক্তি নিজে জানান দিচ্ছে যে সে কি চায়। কি রকম দামের মধ্যে চায়। এতে আসল নির্মিতিকারের সুবিধা। তার রিটেইলারকে কমিশন দিতে হচ্ছে না। তার বিজ্ঞাপনের খরচ নির্দিষ্ট হচ্ছে বা কার্য্যকর ব্যায় হচ্ছে।
এ্যামেজন নিজের এই পরিসেবার যেই কাঠামো তৈরী করেছে, তার খরচ বহন করছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তাই যত বেশী প্রতিষ্ঠান তার এই পরিসেবার পরিকাঠামো ব্যবহার করছে, তাতে তার লাভাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এবার এই পরিকাঠামো সে শুধু এই কাজেই ব্যবহার করছে না। সে এই পরিকাঠামোকে অন্য ভাবেও কাজে লাগাচ্ছে। আপনি AWS এর কথা জানেন নিশ্চয়ই। তাও তার বিরাট ব্যবসা। আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেন, এবং তাদের পরিসেবা ব্যবহার করেন তাহলে তাদের সাহায্যে আপনি জানতে পারেন যে কোথায় কতজন কখন আপনার ওয়েবসাইটে কি দেখেছে। আপনার ওয়েবসাইট থেকে সে কি দেখতে অন্য সাইটে গেছে। এদের পরিসেবা দিয়ে আপনি নিজের হোস্টিং করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইট কখনো ডাউন হবে না। বিজনেস কন্টিনিউটি বা আপনার ব্যবসা অনলাইনে অক্ষুন্ন থাকবে। ইত্যাদি। এই সব পরিসেবা দিয়ে তার যা লাভ তাতে তার নিজের পরিসেবার খরচ বহন করতে কোনো অসুবিধা নেই।
এবার যত বেশী তার পরিসেবা সংখ্যায় বেশী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে, এবং বিক্রি হচ্ছে, তাতে ততবেশী লোক টাকা লেনদেন করছে। এবার ধরুন ১০০ জন ১০০০ টাকা দিয়েছেন এক ঘন্টায়।মানে ঘন্টায় লাখ টাকা। তাহলে ২৪ ঘন্টায় কত জন ও কত টাকা? এবার এই টাকা তার ব্যাঙ্ক একাউন্টে যাচ্ছে। সে কি এই টাকা যাদের দিতে হবে, তাদের তৎক্ষনাত দিয়ে দিচ্ছে? না। তার সেটেলমেন্ট হচ্ছে কয়েক দিনে। ততক্ষন সেই টাকা তার কাছেই আছে। এবার এই টাকা মানে আমাদের উদাহরণের ২৪ লক্ষ টাকা যদি ৩০ দিয়ে গুন করে নেন, বা সোজা ২৪০০০০০x ৩৬৫। তার মানে প্রত্যেক দিনে তার একাউন্টে কত টাকা দাড়িয়ে থাকে। এবার যদি এই হার প্রতি ঘন্টায় ১০ লক্ষ x ৬০০ টাকা হয়? তাহলে মাসে, বছরে তার হিসাব আপনি করতে পারেন। এবার যদি এক ঘন্টায় এক কোটি x ২৫০ টাকা হয় তাহলে? আর এই টাকা যদি সাতদিন আপনার কাছে থাকে তাহলে?
আজ থেকে অনেক বছর আগে আপনি PayPal শুনেছেন হয়তো। ইন্টারনেটে কোনো কাজ করলে, একজন আরেকজনকে টাকা দিতে এর ব্যবহার করতো। এতে আপনি ধরুন নিজের কনসাল্টেন্সির জন্য ঘন্টায় ৭০ ডলার পান। এবার যদি কেউ আপনাকে তা দেয় তাহলে PayPal তা তৎক্ষনাত আপনার একাউন্টে পাঠিয়ে দেবে না। তা দেবে ২১ দিন পর। হয় ৫ টি ট্রানজাক্সান হতে হবে, অথবা ২৫০ ডলার হতে হবে। তাহলে দু তিন দিন পরে দিয়ে দেবে। এই তিনদিন আপনার টাকা তারা ধরে রাখছে। এই ভাবে তারা আপনাকে মঞ্চ দিলো। এবার আপনার অর্জন করা ডলারের থেকে কিছু কমিশন কাটলো, আবার যখন আপনার একাউন্টে জমা হলো, তখন ব্যাঙ্ক তার থেকে টাকা বদলের চার্জ কাটলো।
এ্যামেজনের পেমেন্ট সেটেলমেন্ট এই Paypal এর কাছ থেকে নেওয়া।
এছাড়াও এখন এ্যামেজন প্রাইম আছে। আবার সেই পরিকাঠামোর ব্যবহার। এখন এ্যামেজন নিজের রিটেইল পরিকাঠামোকে আপনার মতন ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য উপলব্ধ করছেন, অনলাইন স্টোর ব্যবসার অন্তর্গত। আপনি তার পরিকাঠামো ব্যবহার করে নিজের অনলাইন স্টোর চালাতে পারেন।
এর উপর আপনার মঞ্চের সঞ্চালন খরচ আপনি একদম নিম্ন স্তরে নিয়ে এসেছেন তার বিভিন্ন ব্যবসায় ব্যবহার করে।
এই যে টাকা আপনার কাছে সব সময় দাড়িয়ে থাকে তার ফলে আপনি বিভিন্ন স্থানে নিজের দৈত্যাকার ওয়েরহাউজ তৈরী করেছেন। বিভিন্ন নির্মিতি আপনি নিজের কাছে প্রচুর মাত্রায় কিনে রাখছেন। তাতে আপনার জন্য তা আরো সস্তা হচ্ছে।
এই ব্যবসা আপনি করতে চান, খুব ভালো। আপাতত আপনি তার বহরের সাথে তুলনা করতে পারবেন না। তাহলে আপনার প্রথম দরকার হবে, তার গুনগত সমকক্ষ হওয়া, এবং এত বিজ্ঞাপন দেওয়া যে যেন প্রত্যেক মানুষ আপনার উপস্থিতি জানে। তাহলে যারা নিজের নির্মিতি বিক্রি করবে, তারা আপনার কাছে আসতে চাইবে। তাদের আপনাকে যেন কিছু কম টাকা দিতে হয়।
যখন ভারতে প্রথমবার আইফোন ৩ এসেছিলো বোধহয় ২০০৯ তে কিনেছিলাম, তখন তাতে এ্যামেজন এ্যাপ প্রিলোডেড থাকতো। যদিও ভারতে তখন এই পরিসেবা ছিলো না। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে যেই ব্যবসা আপনি আজ করতে চাইছেন তা কত বছর আগে শুরু হয়েছিলো। তাই যদি আপনি এ্যামেজনের ব্যবসা করতে চান এবং এ্যামেজনের মতন হতে চান তাহলে তার সহজ উপায় হলো তারই সবচেয়ে বড় কিছু কর্মচারীদের কাজে রেখে নিন।
আর তা না হলে, নিজের কোনো নতুন আইডিয়া খুঁজে বার করুন। এমন কেনো কাজ যা এখন দুজন ব্যক্তির মধ্যে চলছে, কিন্তু তার মধ্যে এমন কোনো ফাঁক ফোকর আছে, যা কারুর চোখে পড়েনি।
আশা করি একটি বাহ্যিক ধারণা করতে পারবেন।
mostofa publisher