Answered 2 years ago
মেনেজমেন্টে আমরা বলি whatever cannot be measured, cannot be assessed। আর নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে এই assessment হলো খুবই precarious একটি বিষয়।
আপনার প্রকল্পের কাঠামোটা কি রকম।
১. আপনি কি রকম প্রতিষ্ঠানের ফ্রানচাইজ নিতে চান। তার পরিচিতি/ ব্রান্ড ভ্যেলু কি রকম?
২. আপনি এই কাজ করতে হলে আপনার লগ্নী কত ধার্য্য করেছেন? তার বিবরণী কি রকম?
৩. আপনি কোন যায়গায় কাজটি করবেন?
৪. আপনি যেখানে কাজ করবেন সেখানে এই ব্যবসার সঠিক ভাবে চলবার সুযোগ সুবিধা কি রকম। মানে আপনার বস্তুর যা গড়পড়তায় দাম, তার হিসাবে সম্ভাব্য গ্রাহক কি সেখানে অন্য কোনো কারণেও আসবেন বা সেখানে থাকেন। মানে গ্রাহক কি সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই আসবেন?
আপনি যেই কাজ করবেন, তা করার জন্য কতটা দক্ষতা দরকারী, সেই দক্ষতা কি আপনার আছে? মানে আপনার কাজটা কতটা দক্ষতা সাপেক্ষ? কতটা ও কি রকম লোকবল চাই?
৫. আপনি যেই টাকা মূলধন হিসাবে ব্যাঙ্ক থেকে নিতে চাইছেন, তা আপনার সম্পূর্ণ লগ্নীর কত শতাংশ?
৬. আপনি নিজের কাছ থেকে কত শতাংশ মূল ধন লগ্নী করছেন?
৭. আপনি যত টাকার ব্যবসা করবেন, তাতে মাসিক আপনার খরচ বাদ দিয়ে, কত শতাংশ লাভ হওয়ার সম্ভাবনা?
৮. আপনি যা লাভ করবেন, তার কত শতাংশ আপনি সেই প্রতিষ্ঠানকে দেবেন? তাদের সাথে আপনার চুক্তি কি রকম?
৯. আপনার সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে কত বছরের চুক্তি?
১০. আপনি এই ব্যবসায়ীক হৃণ কত বছরে শোধ করতে চাইছেন?
১১. আপনি ব্যবসা শুরু করার পর আপনার মাসিক খরচ বাদ দিয়ে আপনার কাছে যা টাকা বাঁচবে, তা থেকে সেই প্রতিষ্ঠানের টাকা তাদের দিয়ে যেই টাকা বাচবে, তারপর আপনি ব্যাঙ্কের লোন শোধ করার পর, আপনার নিজের হাতে কত টাকা বাচবে? এই সবকিছুর হিসাব ব্যাঙ্ক করবে।
ব্যাঙ্ক সমীক্ষা করবে ঝুঁকির। আপনি কতটা বেশী ঝুঁকি পূর্ণ পরিকল্পনা করেছেন। এবং আপনার প্রকল্প পরিকল্পনা কতটা বাস্তবিক ও কতটা অবাস্তবিক। উপরিউক্ত কারণগুলি হলো আপনার কাজে ঝুঁকির বিষয়। যেটিই অনিয়ন্ত্রিত হবে, প্রকল্পকে পথচ্যুত করবে।
যদি এই প্রত্যেকটি বিষয়ে আপনি নিজের পরিকল্পনাকে সুরক্ষিত প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আপনি নিজের সম্পূর্ণ লগ্নীর ৮০-৮৫% টাকা লোন পেতে পারেন। কিন্তু সাধারণত নতুন ব্যবসায় এবং capital intensive প্রকল্পে ব্যাঙ্ক ততক্ষন এতটা লোন দেবে না, যতক্ষণ আপনি নিজের তরফ থেকে ঝুঁকি নিচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত, আপনার পরিকল্পনায় এই ফ্রানচাইজ ব্যাপারটা থাকায়, তাদের সাথে আপনি কি চুক্তি করছেন, তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাঙ্ক আপনাকে লোন দেওয়ার আগে এটি অতী অবশ্যই বুঝতে চাইবে। এবার সেই প্রতিষ্ঠান আপনাকে নিজের ফ্রানচাইজ বলে স্বীকার করার আগে কি কি শর্ত রাখছেন, মানে কোন পরিস্থিতিতে বা ব্যবহারিক ধরাতলে কি নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেই আপনি তাদের কাছে ফ্রানচাইজ পাবেন। সহজ কথায় এই দুই জনের আপনার সাথে সহযোগিতা করার মধ্যের অন্তরালে আপনার নিজের টাকা থাকতে হবে।
যদি আপনি আগে থেকেই কোনো ব্যবসা করছেন, এবং তা বাড়ানোর জন্য লোন নেন, তাহলে ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে লোন দিতে সুবিধা হয়। কারণ তখন এই ঝুঁকির সমীক্ষা একটু বদল হয়ে যায়। কারণ তখন অনেকগুলি বিষয় measurable হয়ে যায়।
আপনি নিজের খরচ গুলি কিছু হেড এ ভাগ করে নিন।
১. ওয়ান টাইম কস্ট
২. মান্থলি রেকারিং কস্ট
৩. এন্যুয়েল কস্ট।
এবার প্রথম হেডের- সাবহেড- সেই টাকা যা আপনি একবার খরচ করবেন। তাতে আপনার মেশিনারি, সাজ সরঞ্জাম, সাজ সজ্জা, কোনো সিকিউরিটি ডিপোজিট ইত্যাদির হিসাব।
দ্বিতীয় হেডের- সাবহেড - বিদ্যুৎ বিল, মাসিক জিনিস পত্র, কর্মচারী বেতন, ভাড়া, মেইন্টিনেন্স, মোবাইল ইন্টারনেট, অন্য যে কোনো মাসিক খরচ
তৃতীয় হেডের- সাবহেড- এমন খরচ যা বাৎসরিক। যেমন , ইনশিওরেন্স, কমপ্লায়েন্স, এনভায়রমেন্ট পলিয়ুশান, সিয়েজ, জলের টাকা, ফায়ার সেফ্টি, এ এম সি, ডাইরেক্টরর্স লায়বলিটি ইনশিওরেন্স, উকিল, সিঙ্কিং ফান্ড ইত্যাদি।
এবার তৃতীয় ভাগের যা খরচ তা বাৎসরিক হলেও আপনি তা উপার্জন করছেন মাসিক ভিত্তিতে। তাই এই টাকা পে আউট এ্যনুয়েল কিন্তু আপনি তাকে ১২ মাসিক বিভক্ত করে প্রত্যেক মাসে আলাদা করে প্রাবধান রাখতে বে। মানে এতটা টাকাও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না বা খরচের খাতে থাকবে।
এবার হেড (১) যেই টাকার মূল্য আছে, তাকে তিন বছরে ভাগ করে নিন। বা ৩৬ মাসে ভাগ করে নিন। এবার তার মাসিক মূল্য নির্ধারিত হবে।
এবার আপনি দেখে নিন, যে আপনার প্রথম তিনমাস ২৫%, তার পরের তিনমাস ৫০% এবং তারপর থেকে ৭৫-৮০% ব্যবসা হলে, আপনার মাসিক/বাৎসরিক ব্যবসা কত টাকার হবে। উপরের উল্লিখিত খরচ (২) ও (৩) উপার্জন থেকে বাদ দিলে আপনার হাতে কত টাকা বাচবে। তা থেকে আপনি (১) এর মুল্য ২৪ মাসে বা ৩৬ মাসে শোধ করবেন, ( যতটুকু ভাগ আপনি ব্যাঙ্ক থেকে নিয়েছেন) যত টাকা নিয়েছেন, তার সুদ দেবেন ১৬% থেকে আরম্ভ করে। কিছু ব্যাঙ্ক ১০% ও দেয়, কিন্তু তা বুঝে দেখতে হবে। আপনি স্টেট ইন্ডাস্ট্রিয়াল বোর্ডে খোঁজ করে দেখতে পারেন।
এবার আপনি একটি ফান্ড ফ্লো চার্ট তৈরী করে নিতে পারেন।
ক) উপরে ইন ফ্লো - আমদানী লিখে নিন।
খ)নীচে আউট ফ্লো- খরচ লিখে নিন।
গ) ক) - খ) =গ)
ঘ) ব্যাঙ্কের টাকা
গ) - ঘ) = বাকি যা থাকলো তা আপনার।
এবার প্রশ্ন থাকছে যে আপনি কোন ব্রান্ডের ফ্রানচাইজ নেবেন। ধরুন কে এফ সি র নিলেন। তাহলে তাদের গাইডলাইন অনুজায়ী ধরে নিন অন্তত ১৫০০ স্কয়ার ফিট যায়গা হতে হবে, এবং সব করতে ১ থেকে ২ কোটি লাগবে। আর যদি ধরুন আমুল আইসক্রিমের নেন তাহলে ১২০ স্কয়ার ফিট যায়গা লাগবে, আর খুব বেশী হলে ৭-১০ লক্ষ প্রাথমিক লগ্নী হবে। এটা উদাহরণের জন্য বললাম।
যদি সবকিছু ঠিক মনে হয় তাহলে নতুন ব্যবসাতে ব্যাঙ্ক ৩০ লক্ষ পর্য্যন্ত সাধারণত বিবেচনা করে থাকে।১০ লক্ষ পর্য্যন্ত সাধারণত খুব একটা ঝামেলা হয় না। কিন্তু বিবেচ্য বিষয়গুলি পরিষ্কার হতে হবে, তা দু লাখ হলেও তাই। যদি আগে থেকেই ব্যবসা চলছে তাহলে আরো অনেক বেশী লোন হতে পারে। এইসবকিছুই পরিস্থিতি সাপেক্ষ। যেই ব্যাঙ্ক থেকে নিচ্ছেন সেখানে চেনা জানা আছে কি না ইত্যাদি।
আশা করি মোটামুটি একটা ধারণা করে নিতে পারবেন।আমি সাধারনীকরণ করে লিখেছি।আর আমি অনেক কিছুই অঞ্চল ভিত্তিক লিখেছি। আপনার অঞ্চল ভিত্তিক তথ্য আলাদাও হতে পারে।
bristy.khatun publisher