Answered 3 years ago
আমার পিতা ও মাতা শিক্ষা দিতেন, আমি আর আমার স্ত্রী শিক্ষকতা করি, আমার ছেলেও শিক্ষক। এইসব মনে রেখে সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য কিছু সাধারণ উপদেশ দেওয়া যায়।
১। সকল ছাত্রছাত্রীর প্রথম কর্তব্য হলো মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা। পরীক্ষায় ভালো ফল করার সবচেয়ে বড় সুফল হল দৃঢ় আত্মবিশ্বাস অর্জন করা, যা জীবনের সকল সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বড় মানসিক শক্তি যোগাবে। নিজের উপর আস্থা থাকলে জীবনে সবচেয়ে বড় সফলতার উপাদানটি পাওয়া গেল।
২। মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়ে গেছে। আত্মধ্বংসী কিছু না করলে আপনি অন্তত ৮০ বছর বাঁচবেন এমন আশা করাই উচিত। সুতরাং তাড়াহুড়া করে অনেক বেশি কোর্স একসাথে শেষ করার চেষ্টা না করে এক সেমিস্টারে চারটির বেশি কোর্স নেবেন না। যত্ন করে ভালো রেজাল্ট করার সকল চেষ্টা করুন। সময় পালিয়ে যাচ্ছেনা, জীবন বড় হবার অনেক সময় পাবেন। ধীরেসুস্থে এগিয়ে যান।
৩। পড়ার সময় এক সিটিং এ একটানা আধা ঘন্টার বেশি পড়বেন না। আর মনস্তাত্ত্বিক কারণ আছে। ধীরে ধীরে পড়ুন, যা পড়লেন, তার মুল শব্দগুলি কলম দিয়ে কাগজে নিজের হাতে লিখুন (কম্পিউটারে কাট-পেস্ট না করে)। সম্ভব হলে (আশেপাশে বিরক্ত হবার কেউ না থাকলে) শব্দ করে পড়ুন; চোখে দেখছেন, আঙ্গুলে লিখছেন, কানে শুনছেনঃ এই তিন প্রক্রিয়া একসাথে আপনার মগজে তিন-দফা ইম্প্রেসন দেবে, আপনি আর সহজে ভুলবেন না। মনটাকে যোগ করা মানে এই সময় অন্য কিছু একদম করবেন না। গান শুনতে শুনতে, টিভি দেখতে দেখতে, ভিড়ে অন্যদের নানা কথা শুনে শুনে কিছুতেই অখন্ড মনোযোগ দিয়ে পড়া হবেনা, সেই পড়া মনে গেঁথেও যাবে না। ঠিকভাবে পড়লে যা একবার পড়েছেন তা চিরকাল মনে থাকবে।
অল্প করে পড়ুন, কিন্তু ভালো করে বুঝে নিন। কি শিখলেন তা নিজের ভাষায় নোট করুন। একই জিনিস কয়েকবার নোট করার পর দেখবেন এতো সোজা হয়ে গেছে, আপনি তা আর ভুলবেন না।
পড়ার বিরতি দিয়ে একটু উঠে দাঁড়ান, হাত পা নাড়া দেন, আড়মোড়া ভাঙ্গেন। এক গ্লাস পানি খান, কিংবা কিছু হাল্কা খাবার খান। তারপর মিনিট পাঁচেক চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিন, আস্তে আস্তে দম ছাড়ুন। আবার পড়তে বসলে দেখবেন মন দিতে পারছেন। তবে একই বিষয় একটানা পড়া উচিত নয়ঃ বিষয় বদল করুন। আমি নিজের জীবনে অন্যদের চেয়ে অনেক কম পড়েও বোর্ডে ও ক্লাসে প্রথম হতাম, কারণ আমি যেটুকু পড়তাম সমস্ত মনে দিয়েই পড়তাম। ফলে কিছু আর ভূলে যেতাম না।
লেখার অভ্যাস করুন। কি শিখলেন সেটা নিজের ভাষায় লিখুন, আবার নিজের লেখা সম্পাদনা করুনঃ আরো গুছিয়ে বলা যায় কিনা দেখুন, অদরকারী কিছু থাকলে বাদ দেয়া যায় কিনা দেখুন। কথাটা কত সহজ হচ্ছে দেখুন। পরীক্ষায় ভাল ফল পেতে গেলে কাজের কথা যথাসম্ভব সংক্ষেপে বলবেন, কিন্তু যা জরুরী তা বাদ দেবেন না। প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে তার বাইরে যাবেন না, যে প্রশ্ন করা হয়নি তার উত্তর দেবেন না। একই প্রশ্নের উত্তর দশ বারো বার বাসায় বসে লিখে অভ্যাস করুন, দেখবেন এক সময়ে আপনার উত্তর হয়ে উঠেছে খুব উন্নত ও যথার্থ।
৪। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দুইটা জিনিস বলেঃ আপনার দক্ষতার একটা গ্রেড আর আর চরিত্রের কিছু আবশ্যক গূনাবলী। আপনি যথা সময়ে ক্লাসে আসতেন, শৃংখলা মানতেন, সময়মত দায়িত্ব নিয়ে কাজ সমাপন করতেন, ক্লাসের লোকজনের সাথে মারামারি করতেন না, চুরি চামারি করতেন না, আপনি নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য ও দায়িত্বশীল। এই গূনের কথা আলাদ গ্রেড দিয়ে বলা হয় না। চাকুরীর ইন্টারভিউতে অনেক সময় শিক্ষকদের রেফারেন্স লাগে, কারণ রেফারি ছাত্রের এইসব চারিত্রিক বিষয় বলতে পারেন।
৫।চরিত্রের কথাটা এইজন্য বলা যে খুব ভাল গ্রেড নিয়ে পাস করে পরে একজন বড় চোর বা প্রতারক হয়ে খুব যে আগানো যাবে তা নয়। সাধু মানুষ শেষ পর্যন্ত টিঁকে থাকেন, চোরেরা দুই চারদিন পর ধরা খেয়ে যায়।
৬। দুনিয়া আর আগের মত গরিব নয়, আর মানুষের আয় আগের মত সীমিত নয়। অন্যের সম্পত্তি চুরি না করেই নিজের উৎপাদন দিয়েই বড় হওয়া যায়। বাংলাদেশে ভারতে এখনও এটা খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেনি যে সদুপায়ে আপনি জীবনের সকল সুস্থ প্রয়োজন মিটাতে পারবেন। সমাজে সফল হওয়ার সেটাই চাবিকাঠি।
৭।জনপ্রিয় হবেন কথার মিষ্টতা আর আচরণের ভদ্রতা দিয়ে (দুঃখিত, আমি নিজে তেতো কথা বলি, আচরণেও খুব অভদ্র, যার ফলে অর্থশাস্ত্রে বিশাল কিছু আবিষ্কার করা সত্ত্বেও কেউ আমাকে পাত্তা দেয় না।) ভাণ করে লাভ নেইঃ আপনি যা নন, তা দেখানোর ফাঁকিবাজি চেষ্টা করবেন না। চাটুকার হবেন না, কিন্তু ভদ্রতার সাথে মানুষের প্রাপ্য সম্মান দিবেন। দেখবেন সমাজে আপনার সুনাম হবে।
afiaislam publisher