আমি আমার এক বান্ধবীকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি, কিন্তু আমি হঠাৎ করে জানতে পারি ও অন্য একজনকে ভালোবাসে। একথা ভেবে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এ কষ্ট কীভাবে দূর করবো?

1 Answers   6.6 K

Answered 2 years ago

যদি এই কথা জানতে পেরে যে, যাকে আপনি ভালবাসেন, সে অন্য কাউকে ভালবাসে, আপনার দুঃখ না হয়, তাহলে হয় আপনি আমার মতন কোনো ভন্ড মহাপুরুষ আর না হলে আপনি তাকে কোনোদিন ভালবাসেন নি।

আপনার দুঃখ হওয়াটা ইঙ্গিত করছে যে আপনি একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। তবে, এই দুঃখ বলে বস্তুটির বদ স্বভাব যে এ আপনাকে আপনার ইচ্ছায় মুক্ত করে না। যাক-

আপনার এই প্রশ্নের আদর্শ উত্তর হতে পারে, এবার আপনি নিজের বান্ধবীকে একদম স্বাধীন হয়ে ভালবাসতে পারেন। আপনার কোনো অসুরক্ষার কারণ নেই। আপনি তাকে হারিয়ে ফেলতে পারেন, এমন কোনো ভয় নেই। কারণ আপনি জানেন যে সে অন্য কাউকে ভালবাসে। এখন বাকি থেকে গেলেন আপনারা দুজন। এক আপনি আর এক আপনার ভালবাসা। আপনারা দুজনে একে অপরের সাথে থাকতে পারেন। কি চলবে?

হয়তো চলবে না। তাই জন্যই বললাম আমার মতন ভন্ড মহাপুরুষ। এক সময় আমি যাকে খুব ভালবাসতাম, এবং মনে হতো যে সে আমার তাকে ভালবাসার চেয়েও বেশী আমাকে ভালবাসে, সে হঠাৎ করে জানিয়েছিলো যে তার অন্য কোথাও বিবাহ ঠিক হয়ে গেছে। এরপর আমি অনেকটা দেবদাস জাতীয় আচরণ করেছিলাম। কিছু সময় পরে আমাকে ডাক্তার দেখাতে হয়। কিছু ঔষধপত্র খেতে হয়। তাতেও খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না। খুব বড় দাড়ী ছিল। কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখবো না ঠিক করলাম। বিদেশে একা থাকতাম। অনেক জনের ডাকে সাড়া দেই নি। পরে অসুবিধা বেশী হচ্ছিলো। শেষে সেখানে কিছু বন্ধুর মারফত ইস্লামিক মেডিসিনের হাসপাতালে গেলাম। তাদের প্রমুখ প্রধান ছিলেন, ভারতের হায়দ্রাবাদের এক ডাক্তার হাফিজ। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে অনেকক্ষন পর্য্যন্ত নাড়ী শুনলেন। এমন ভাবে ছাদের দিকে তাকিয়ে মনযোগী হয়ে চুপ করে বসে ছিলেন মনে হচ্ছিল এই বোধহয় কোনো কবিতা রচনা করে বলবেন। তারপর কিছু রক্ত, ইউরিন পরিক্ষার কথা বললেন। ফলাফল দেখে, আমাকে বললেন “ মুঝে শক থা… মাশাল্লা, লহীম শহীম হট্টে কট্টে বন্দে হো, চেহরে পে জওয়ানী কা নুর হ্যেয়, বাবু মোশায় আপকো শাদী করনা চাহিয়ে।” তখন আমার বয়স ২৬ বছর। একদম সোজা সাপটা ভাষায় বলতে চাইলেন যে তোমার শরীরে যৌবন ও পৌরুষ টগবগ করছে। তোমাকে দেখে বলিষ্ঠ পুরুষ বলে মনে হয়েছে। তোমার শারীরিক সংসর্গের দরকার। কিন্তু তুমি মানসিক ভাবে তা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছো। তাই তোমার অসুবিধা হচ্ছে। এটা হলেই তুমি দেখবে কোনো অসুবিধা নেই।

বুঝুন ঠেলা। আমার মন প্রেমের বেদনা অনুভব করতে চাইছে। বিচ্ছেদের বেদনা উজ্জাপন করতে চাইছে। আর এই বুড়া বেটা আমাকে বলছে যে তোমার শরীরের এখন সেক্স করার দরকার। তাহলেই এই শরীর খারাপ লাগা, ঘুম না আসা, ইচ্ছা না করা এসব ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বললেন আমি সত্যি বলতে কোনো ঔষধ দিতে চাইবো না। কারণ তার কোনো ঔচিত্য নেই। তবে কিছু এমন জেনেরিক ঔষধ লিখেছি যা তোমাকে একটু রিলেক্স থাকতে সাহায্য করবে।

তাহলে, আপনি বুঝতে পারছেন যে, আপনি যেই বয়সে আছেন, তাতে প্রেম করে অসফল হলে দুঃখ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার দুঃখে প্রকৃতির কিছু আসে যায় না। সে আপনাকে বেশীদিন এই সুযোগ দেবে না। আপনি চাইলেও নয়। আমি এই দুঃখ সারা জীবন ধরে রাখবো মনস্থির করে ছিলাম। কিন্তু সাত-আট বছর। তার মধ্যেও যদি কোনো মেয়ের আকর্ষণ পেয়েছি, তাকে খুব সভ্য ভাবে প্রত্যাক্ষান করেছি, তাতে নিজেকে একটা কেউ কেটা মনে করেছি।

এরপর একজন মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। সে এসেছিলো শারীরিক সম্পর্কের উদ্দেশ্যে। আর আমি, এমন এক আনাড়ি, যে মনে করে যে সব জানে, বোঝে, কিন্তু আসলে বাস্তবিকতা থেকে একেবারেই অনভিজ্ঞ। কিছু উত্তেজক সিনেমা আগে দেখেছে, কিন্তু বাস্তবিক জীবনে কিছুই দেখেনি। তাই সে মনের ভীতর থেকে প্রেমের ভাবনাকে আবার বাঁচতে চাইছে। আর তার শুধু বার বার মনে হচ্ছে, প্রথম প্রেমে সে যখন একটুও মেয়েটির কাছে যেতো, মেয়েটির যা ভাব ভঙ্গিমা, প্রতিক্রিয়া হতো, এ তো একদমই তাই নয়। সেই ভালবাসাকে অনুভব করতে পারছে না কেন! তাহলে কি শুধু নিজে ভালবাসলেই হয় না? অপরজনের মধ্যেও তা থাকতে হয়? তাহলেই কি তা মন বুঝতে পারে?

সেই মেয়েটি নিজের মনের চিন্তা অনুযায়ী যা বুঝতো তাই করতো। তার দেশে যা আচার বিচার ছিলো তার অনুরুপ যেমন বিশ্বাস, যেমন কল্পনা, তার অনুরুপ, সে যেমন বুঝতে পারে… কিন্তু সে একটা কথা বুঝে নিয়েছিলো যে এই ব্যক্তি এইসব বিষয়ে একটি গাধা। এ এখনো কল্পনা জগৎ থেকে বার হয়নি। আর প্রথম বার প্রেমের শারীরিক অনুভুতি পেয়ে আমি, তখন নতুন ভাবে চিন্তা, বিবেচনা করা আরম্ভ করেছি। একজন মেয়ে শুধু অ নয়, আ, ক খ সব হতে পারে, এটা বুঝছি, মানছি, মানছি না, পছন্দ করছি, অপছন্দ করছি। কিন্তু সবকিছুই নতুন। অনেক সময় ভাবছি এই বিগত এত বছর আমি একা একা কি নিয়ে, কি ভেবে কি করছিলাম।

কিন্তু ভাগ্য… এখন আমি আর সেই আগের প্রেমের ধারণা ধরে রাখতে পারছি না। কিন্তু বুঝতে পারছি যে মেয়েটি আমাকে তেমন করে ভালবাসেই নি। অপর দিকে, মেয়েটি এখন প্রাণপণে ধরে রাখতে চাইছে, এখন সে নিজের আগের সব কথার বিপরীত। এখন সে সম্পর্কে স্থিরতা কামনা করছে। এখন সে এমন ব্যবহার করছে যেন সে প্রথম প্রেমে পড়েছে। এখন সে সবকিছু এমন ভাবে করছে, যেন আমরা দম্পতি। আর আমি তো এমন যায়গায় গিয়ে দাড়িয়ে… আমার প্রথম প্রেম বিচ্ছেদের দুঃখও আমার হচ্ছে না, কেন? এ সেটাও কেড়ে নিয়েছে। আর এই মেয়েটি তো আমাকে প্রকৃত ভালবাসেনি। সে তো এসেছিলো অন্য উদ্দেশ্যে। এখন যেহেতু সুখী বোধ করছে তাই.. এগুলি তার নিজের স্বীকারোক্তি। এমন সময় তার অতীত নিয়ে কিছু সত্য আমার সামনে এসে গেল। সে অনেক বার বললো যে সে আমাকে কিছু বলতে চায়, বোঝাতে চায়। কিন্তু কে শুনছে কার কথা। একদম শেষ করে দিলাম। লৌহ হস্তে দমন।

কিছু বুঝলেন? প্রেম, আর প্রেমের দুঃখ?

আপনার বয়সে প্রেমের দুঃখ হয়। এটি হলো একটি অতীব অমূল্য সম্পদ। এটি আপনি বার বার পাবেন না। এরপর আর চেষ্টা করলেও এই দুঃখ আপনি করতে পারবেন না। এরপর যখন প্রেমে দুঃখের গল্প আসবে, সাধারণত আপনি দুঃখ দেবেন। না দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দেখবেন নিজেরটা ঠিক বুঝে নিচ্ছেন, তাতে অন্যের দুঃখ হলে হোক। আপনি বলতেই পারেন, সবার এক গল্প হতে পারে না। একদম ঠিক। কিন্তু সিংহ ভাগের গল্পই তাই। সুতরাং যদি আপনি তার থেকে আলাদা, তাহলে সত্যি বিশেষ কেউ।

এই দুঃখ আপনার সুযোগ, নিজেকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে নেওয়ার, যে আপনি কাকে বেশী ভালবাসেন। সেই বান্ধবীকে না নিজেকে। সে তো জানেই না যে আপনি তাকে ভালবাসেন। আর এখন আপনি তাকে জানাবেন না বোধহয়। এবার দেখুন আপনি তাকে কতদিন ভালবাসতে পারেন। নিজের মধ্যেই। আপনি এই ব্যাথা ধরে রাখতে চাইলেও কতদিন ধরে রাখতে পারেন দেখুন।

আপনি ভাবুন, যে আমি একদম মনের গভীর থেকে তাকে ভালবেসেছি, আর কোনোদিন কাউকে এইরকম করে আর ভালোবাসতে পারবো না। হোক যে সে আমাকে কোনো কথা দেয়নি, আমি তো তাকে ভালোবেসেছি। আমি তাকে ভালোবেসে যাবো। যতদিন বেঁচে আছি, শুধু তাঁকেই ভালবাসবো। এই ভাবে রোজ দিন নিজেকে বলতে থাকুন। দুঃখের গান শুনুন। কয়েকটি কবিতা লিখবার চেষ্টা করতে পারেন। যদি উর্দু ভাষার শব্দ বোঝেন, তাহলে অত্যন্ত সুন্দর শেরো শায়রী র বই পেয়ে যাবেন, সেগুলি পড়ুন। বাংলা হিন্দির কত গান আছে, যা আপনি আগে শুনেছেন, কিন্তু এখন আপনি তার অর্থ উপলব্ধি করতে পারবেন।

মাঝে মধ্যে সোশাল মিডিয়াতে তার প্রোফাইল ঘাটতে পারেন। সে কি করেছে, কি পরিধানে, কি লিখলো, কোথায় গেল। ইত্যাদি। এগুলি হলো পারম্পরিক বিচ্ছেদ, বিরহ কাটিয়ে উঠবার প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া। এগুলো তো আপনার কাছে আছেই।

কিন্তু..

আপনি এই ব্যাথা সহ্য করে কি একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারেন, মানে এখন যা তার থেকেও বেশী ভালো। অন্যদের ব্যাথা হয় শুনেছিলেন, শুনে থাকেন হয়তো। কিন্তু এখন কি বুঝতে চেষ্টা করতে পারেন। তাদের জন্য কিছু করতে চেষ্টা করতে পারেন।

আপনার আসে পাসে যারা আছেন, তারা যা পেতে চাইছেন, পেলে খুশী হবেন, কিন্তু পারছেন না, তা পেতে তাদের সাহায্য করতে পারেন, এমন কিছু করতে পারেন কি।

যদি সেই বান্ধবী কোনো সাহায্য চায় পরামর্শ চায়, তাকে খোলা মনে দিতে পারবেন কি? না কি সে কথা বললেই আপনার বেদনা জেগে উঠবে। অভিমান জাগবে।

এইরকম অনেক বিষয় আছে যা দিয়ে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে আমরা নিজেকে সব থেকে বেশী ভালবাসি। আমার স্বপ্ন, আমার ইচ্ছা, আমার কল্পনা, আমার … । আর এটা হলো আমাদের বিরাট বড় একটি অস্ত্র। এই অস্ত্র আমাদের দেওয়া হয়েছে যে আমরা নিজেদের নতুন কাঠামোতে ফেলতে পারি। আমরা নিজেদের বোঝাতে পারি যে আমরা আজকে অমুক কে ভালবাসি আর কালকে তমুক কে ভালবাসি। এবং এই বার একদম সত্যিই ভালোবাসি। এই অস্ত্রটা আপনার কাছেও আছে। আপাতত আপনার ইচ্ছা করবে না, এই অস্ত্র ব্যবহার করার। এখন আপনার মনে হবে এই বেদনা আপনার একান্ত আপন। কিন্তু তারপর একদিন আবার পরিবর্তন হবে। এবং .. বিশ্বাস করুন এতে দোষের কিছুই নেই। মিথ্যার ও কিছু নেই। আসলেই কিন্তু আপনি দ্বিতীয় তৃতীয় চতূর্থ প্রেমে বেশী সুখী হতে পারেন। আপনাকে বার বার প্রেম করতে আশকারা দিচ্ছি না। বিষয়টা হলো আপনার নিজের সাথে সৎ হওয়া। সৎ হয়ে একটি সম্পর্ক যতক্ষণ আছে ততক্ষনই আছে। আপনি এমন কাউকে ভালোবেসেছেন, যে আপনাকে ভালবাসতো না। এটি দুঃখের। ব্যাস। আমি যখন এই দুঃখে ছিলাম তখন-

আমি জ্যোতিষ শাস্ত্রের গম্ভীর লেখা পড়া আরম্ভ করেছিলাম।

ছবি আঁকা আবার থেকে শুরু করেছিলাম।

আগে ঠিক করে চা করতে পারতাম না। এরপর বিভিন্ন রকমের রান্না করা শিখেছিলাম।

সেই সময় উইন্ডোজ ৯৫ এসে সদ্য কিছুটা সময় হয়েছে, তখন এই বিষয়ে নিজেকে প্রশিক্ষিত করেছিলাম।

আমার মা কে তার আকাঙ্খিত একটি বাড়ী কিনে দিয়েছিলাম।

নিজের ছোট ভাইকে তার আকাঙ্খিত লেখা পড়া করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।

কিছু এমন এন জিও তে যোগ দিয়েছিলাম যারা বিদেশে অসহায় ভারতীয়দের/ এশিয়াই নাগরিকদের বিভিন্ন আইনি সাহায্য জুগিয়ে দেয়। আর্থিক ভাবে সাহায্য করতো।

এমনিতে খুব শক্ত থাকতাম, সব কাজ করতাম, কিন্তু অনেক দিন পরে হঠাৎ হঠাৎ একদম ভেঙ্গে পড়ে কেঁদে ফেলতাম। তারপরের গল্পটা আগেই উল্লেখ করলাম।

দুঃখ কম করতে চাইলেই তো কম হয়ে যায় না। আর প্রেম করে দুঃখ পেয়েছেন। তা-ও এমন দুঃখ যা সে আপনাকে দেয়নি। এই দুঃখ করতে থাকুন।

Chayan
chayan524
290 Points

Popular Questions