আফ্রিকার কিছু দেশ এখনো কেন তাদের (আফ্রিকার দেশসমূহ) মোট বার্ষিক আয়ের অর্ধেক ফ্রান্সকে দিতে বাধ্য?

1 Answers   10 K

Answered 2 years ago

আফ্রিকা ছাড়া ফ্রান্স কিছুই না। যুগ যুগ ধরে ফ্রান্স আফ্রিকাকে লুট এবং শোষণ করে আসছে। ফ্রান্স এখনো তার 'সাবেক' আফ্রিকান উপনিবেশগুলোতে ডাকাতি করছে। কোন সন্দেহ নেই যে ফ্রান্সের শতাব্দী ব্যাপী ঔপনিবেশিক ইতিহাসের দীর্ঘ ছায়া আজও টিকে আছে। স্বাধীনতার পর থেকে আফ্রিকার দেশগুলো আজ পর্যন্ত ফ্রান্সকে ঔপনিবেশিক কর প্রদান করে যাচ্ছে!

১৯৫৮ সালে যখন গিনি ফরাসী উপনিবেশিক সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন প্যারিসের ফরাসী অভিজাতরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ দেশটা লুটপাট করে তারা। যা লুট করতে পারেনি তা ধ্বসং করে দিয়ে যায়। এই জঘন্য কাজের উদ্দেশ্য ছিল অন্য সব উপনিবেশের কাছে একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠানো যে ফ্রান্সকে প্রত্যাখ্যান করার পরিণাম অনেক বেশি ভয়ংকর হবে। ফরাসি উপনিবেশ স্থাপনের ফলে প্রাপ্ত তথাকথিত সুবিধার জন্য ফ্রান্সকে বার্ষিক ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হয় আফ্রিকার দেশগুলো। দেশে ছাড়ার আগে ফরাসিরা তাদের দেশকে ধ্বংস করে দেবে না — এই আশা ও আশংকায় আফ্রিকার ফরাসি কলোনিগুলো ট্যাক্স দিতে রাজি হয়।

ফ্রান্স ১৯৬১ সাল থেকে আফ্রিকার চৌদ্দটি দেশের জাতীয় মজুদ national reserves ধরে রেখেছে। এই আফ্রিকান দেশগুলোর বৈদেশিক মজুদের ৫০-৮০ শতাংশেরও বেশি ফরাসি কোষাগারে জমা হয়। অনুমান করা হয় ফরাসি কোষাগারে বার্ষিক প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা হয়। ফ্রান্স তাদের বছরে মাত্র ১৫ শতাংশ টাকা অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেয়। যদি তাদের এর চেয়ে বেশী প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের নিজেদের অর্থের অবশিষ্ট ৮৫ শতাংশ থেকে বাণিজ্যিক হারে ঋণ নিতে হবে- যা ফরাসি কোষাগার জিম্মি করে রেখেছে।

ফ্রান্স দাবি করে যে সাবেক উপনিবেশএলাকায় পাওয়া যে কোন প্রাকৃতিক সম্পদ কেনার প্রথম অধিকার তাদের । আফ্রিকার দেশগুলোকে স্বাধীনভাবে অন্য অংশীদার খোঁজার অনুমতি দেওয়া হয় না। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত প্রভাবের মধ্যে পড়া আটকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকায় ফ্রান্সের অব্যাহত উপস্থিতি সমর্থন করে।

ফ্রান্সের স্বার্থ রক্ষার জন্য আফ্রিকার দেশগুলোতে সেনা মোতায়েন ও হস্তক্ষেপের অধিকার দাবি করে ফ্রান্স। এক মিলিয়নেরও বেশি আফ্রিকান সৈন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের পরাজয়ে অবদান রাখে। এই অবদান প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। ফ্রান্স আফ্রিকার বিশাল সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এখনো আফ্রিকায় ফরাসি সামরিক ঘাঁটি এবং সৈন্য আছে। কিন্তু আসলে তারা স্থানীয় নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ এবং নিপীড়ন করার জন্য সেখানে আছে।

ফ্রান্স আফ্রিকার দেশগুলোকে সরকারী ক্রয় এবং নিলামের ক্ষেত্রে ফরাসি স্বার্থ এবং কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করে।

ফ্রান্স পশ্চিমা সাহারায় ইউএন মিশনকে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ আহ্বানের লজ্জাজনকভাবে বিরোধিতাও করেছে।

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাক চিরাক বলেছেন যে ফরাসি জনগণের এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া উচিত যে তাদের ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আফ্রিকা মহাদেশের সাবেক উপনিবেশগুলোর শোষণ থেকে এসেছে।

আফ্রিকার এই দেশগুলো ফরাসিকে দেশের দাপ্তরিক ভাষা করতে বাধ্য হয়েছে।

আমরা সবসময় আফ্রিকার দেশগুলোর নেতাদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে, নাগরিকদের স্বার্থে কাজ না করার জন্য দোষারোপ করি । তারা সৎ নেতা হতে চাইলেও তারা তা করতে পারবে না। ফরাসি এবং আফ্রিকান নেতাদের ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতারণার সৃষ্টি করে। ১৯৬৩ সাল থেকে ২২ জনেরও বেশি আফ্রিকান প্রেসিডেন্টকে ফ্রান্স হত্যা করেছে বলে অভিযোগ আছে।

লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি আফ্রিকার ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন। নতুন আফ্রিকান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি নতুন আফ্রিকান ইউনিয়ন তৈরির পরিকল্পনা তাঁর ছিল। তিনি সোনার দিনার প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন, যাতে আফ্রিকা ডলার থেকে মুক্ত হতে পারে। তিনি আফ্রিকার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদকে পশ্চিমা লুটপাট থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। সাম্রাজ্যবাদীরা তাকে হত্যা করে। ফ্রান্সের সাবেক রাষ্ট্রপতি সারকোজির নির্দেশে গাদ্দাফিকে হত্যা করেছে ফরাসি সিক্রেট সার্ভিস।

মাত্র কয়েক মাস আগে, ফ্রান্স অবশেষে ১৯ শতকের ঔপনিবেশিক বিরোধী আলজেরীয় যোদ্ধাদের ২৪টি খুলি আলজেরিয়ায় ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়- তাদের মধ্যে একজন প্রতিরোধী নেতা শেখ বুজিয়ান, যাকে ফরাসিরা গুলি করে হত্যা করে। খুলিগুলো মূলত ট্রফি হিসেবে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ফ্রান্সের জাতীয় ইতিহাস জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়। আলজেরিয়া সাত বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৬২ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, আলজেরিয়া সরকারের মতে লক্ষ লক্ষ আলজেরীয় নাগরিক মারা যায়।


Shajidur Rahaman
rahamanshajidur
284 Points

Popular Questions