অজ্ঞাতনামা হিসেবে লিখছি কারণ আমি চাই না কেউ আমার জন্য সহানুভূতি বোধ করুক।
২৯ মে, ২০১৫ তে আমি একজন অসাধারণ মানুষকে বিয়ে করি, যে আমাকে সবসময় আমার বাবা-মায়ের চেয়ে বেশি যত্ন নেয়। যেহেতু এটা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিল, আমরা এক বছর পরে বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যাতে আমরা একে অপরকে বুঝতে পারি এবং সময় দিতে পারি। এক বছর পরে, যখন আমরা বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন আমার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। তাই আমরা বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা আরও ৩ মাসের জন্য পিছিয়ে দিলাম। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের জন্য অন্য পরিকল্পনা করেছিলেন।
আমার ভাই এক দুর্ঘটনায় মারা যায় যা আমার পরিবারের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলে। সেই ক্ষতি আমাদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল তা হয়তো আমি এখানে প্রকাশ করতে পারবো না। আমার মা আজ পর্যন্ত সেই অবস্থা থেকে সুস্থ হতে পারেনি আর আমার বাবা কোনরকম বেঁচে আছে। এই দিনটাতে আমি সবচেয়ে বেশি কেঁদেছি এবং আমি এখনও কাঁদছি কারণ এখনও এধরনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
আমার ভাই চলে যাবার ৩ মাস পর, আমি এবং আমার স্বামী বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, যাতে বাচ্চাটা আমার বাবা-মায়ের মনের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। আমিও গর্ভবতী হলাম এবং বাবা-মাও খুব খুশি হয়েছিলেন এবং গর্ব করে বলছিলেন যে আমি যেন আমার ভাইকে ফিরিয়ে আনছি। ২১ এপ্রিল, ২০১৬ সালে একটা অ্যানামোলি স্ক্যানে দেখা গেলো যে বাচ্চাটার একটা জন্মগত হৃদরোগ আছে। চিকিৎসকরা বললেন, বাচ্চাটার জন্ম হলেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে, নয়তো ও মারা যাবে। চিকিৎসকেরা দাবি করলো, অস্ত্রোপচারের পরও তারা বাচ্চাটার বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে পারছেন না। তাই আমরা দুজনেই বাচ্চাকে জন্ম থেকেই সারা জীবন কষ্ট দেওয়ার পরিবর্তে গর্ভপাতের পরিকল্পনা করলাম। সেদিন আমি অমানুষের মতো কেঁদেছিলাম এবং এই অবস্থা থেকে সেরে উঠতে এক বছর লেগেছিল।
যেকোনোভাবেই হোক আমরা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারি এবং একটা সুখী ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করে চলি।
গর্ভপাতের এক বছর পরে, আমরা আবার বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা করি। এখন আমি ৭ সপ্তাহের গর্ভবতী এবং আমার বাচ্চার হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করার জন্য স্ক্যান সেন্টারে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তার বলেছেন যে, এবার আমার বাচ্চা ইতোমধ্যে মারা গিয়েছে, তার কোন হার্টবিট নাই।
আমাদের কষ্ট বর্ণনা করার মতো কোন ভাষা নাই। অনেকে বলে, আপনার জন্য ঈশ্বরের অন্য কোন পরিকল্পনা আছে। এটা মোটেও সত্য নয়। আমি আবারও আমার জীবনের, আমার বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না।
এই ঘটনাগুলো আমাকে কাঁদিয়েছে, কাঁদতে বাধ্য করেছে এবং আরও কাঁদাবে।
romzanreza publisher