Answered 2 years ago
দ্যাখো ..আমার ভীষণ ছোট বয়েসে বিয়ে হয়েছে বা ফ্রক পরতে পরতে বিয়ে হয়েছে এমন কিন্তু নয়। আমার বাইশ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে এবং আমি মাধ্যমিকের পর থেকেই বাড়ীতে শাড়ী পরা শুরু করি। সুতরাং বিয়ের পর আমি শাড়ী পরতে পারিনা এমন কথা কেউ শোনেনি।
তবে হ্যাঁ, বিয়ের আগে শাড়ী পরার সময় মা বা কাজের মেয়েটা আমাকে সাহায্য করতো। কুচি ধরা বা আঁচল পিন আপ করা ..এসব করে দিত।
বিয়ের পর তো শ্বশুরবাড়িতে আমার মা নেই বা কাজের মেয়ে শেবো নেই যে শাড়ী ধরে দেবে তাই স্বামীকে ধরলাম । নতুন কড়কড়ে শাড়ী, আমি ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। তখন সেই বয়সে বিয়ের পরদিনই বুঝতে পারিনি যে স্ত্রীর শাড়ী পরাতে সাহায্য করলে স্বামীদের খাটো করা হয়। আমি খাটের ওপর দাঁড়িয়ে শাড়ীতে কুচি দিচ্ছি আর স্বামী কুচিগুলো ধরতে বলছি। আমার দিদিশাশুড়ি সেটা দেখে সেকি হাইমাই চিৎকার। " ইতা কিতা দেখতেসি ? মেয়েটা বাপের বাড়ী থাকিয়া কিচ্ছু শিখিয়া আইসে না। স্বামীরে দিয়া কুচি ধরাইতেসে । অত বয়স হইসে আর জানে না যে এইসব করলে স্বামীর আয়ু কমে ? হায় হায়…. " । পুরকী যেমন হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো সেরকম আমিও হাঁ। যাইহোক তারপর আর শ্বশুরবাড়িতে পুরকীর সাহায্য নিইনি।
ফরাক্কাতে যখন দুবছর বাদে নিজেদের সংসার শুরু করলাম তখন দেখতাম প্রায়ই পুরকী বলতো..অত শাড়ী পরার কি ? সালোয়ার কামিজ পরে নাও না ? কিন্তু আমার তো শাড়ী পরতেই ভাল লাগে। প্রথমে বুঝতে পারতাম না ..পরে বুঝেছি আসল কারণ ..এই কুচি ধরা ব্যাপারটাই বাবুর পছন্দ নয়। কোথাও বেরোতে হলে আগেভাগেই রেডি হয়ে সিগারেট কিনে আনি জাতীয় বাহানা নিয়ে বেরিয়ে যেতো আর আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লাস্ট কুচিটাকে কিছুতেই বাগে আনতে না পেরে হিমসিম খাই। এদিকে দু খানা সিগারেট টেনে ফিরেও দেখে বৌ শাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেজাজ খারাপ হওয়ারই কথা। ইস্ত্রি করা শার্ট প্যান্ট পরে মাটিতে থেবড়ে বসে শাড়ীর কুচি ধরা বেশ কসরতের ব্যাপার ঠিকই কিন্তু কি করা.. এসব আনম্যানেজেবল শাড়ী কিনে দিতে কে বলেছিল ?
এতদিন হয়ে গেল..এত বছর হয়ে গেল কিন্তু পুরকীর শাড়ী ঠিক করে ধরাটা শিখল না। এটা আমার শেখানোর গাফিলতি ..নাকি পুরকীর অক্ষমতা জানিনা। এত সিম্পল একটা জিনিস কেন যে ছেলেরা শিখতে পারেনা সেটা ভেবে অবাক হই। চাঁদে রকেট পাঠিয়ে দিচ্ছে আর এদিকে শাড়ী ধরতে পারে না। কি আশ্চর্য না ? আসলে মন থেকে শিখতে না চাইলে যা হয় আরকি । তারপর যখন বলি শাড়ীর আঁচল টা ব্লাউজের সাথে আটকে কাঁধে একটা সেফটিপিন লাগিয়ে দাও না গো..তখন পুরকীর বিরক্তি দেখার মতো। এমন ভাবে সেপটিপিনটা লাগাবে যেন মনে হবে দেওয়ালে পেরেক পুতছে। এসব দেখি আর ভাবি মেয়ে হয়ে জন্মাওনি তো তাই জানো না মেয়েদের জ্বালা।
সেদিন অনলাইনে রেডিমেড একটা শাড়ী দেখে বলে ..বাহ্, কি সুন্দর ! এখন থেকে এমন শাড়ীই কিনবে। কি সুন্দর দেখ..সেলাই করা কুচি..টক্ করে টাক্ করলে ..হয়ে গেল শাড়ী পরা..বাহ্ বাহ্ ..অর্ডার করে ফেল দেখি একখানা । আমি বললাম..মরণ, ওসব শাড়ী পরতে আমার বয়ে গেছে। এসব শাড়ী বাচ্চাদের জন্য ।
পুরকী যদি আমার সাথে শাড়ী কিনতে যায় শাড়ীর রঙ কোয়ালিটি নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই। তার একটাই প্রশ্ন ..ভাইসব, ইয়ে শাড়ীকা কুচি ঠিকসে পড়েগা না? কিসিকা মদত কে বিনা ইয়ে শাড়ী কোইভী পেহেন সেকতে হ্যায় না ? আর চালাক দোকানদারও মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলবে…হাঁ হাঁ , বাবুজী একদম বড়িয়া শাড়ী হ্যায় ..বাচ্চা ভী একলা পহেন সেকেগা। পুরকীর চোখে সেই খুশীর ঝিলিক..একটা সোয়াস্তির নিশ্বাস । কিন্তু আমার সেদিকে নজর দিলে তো পছন্দের শাড়ীটা কেনা হবে না। শেষে ঐ টিস্যু শাড়ীটা কিনে ফিরি। মনে মনে হাসি আর ভাবি…পুরকীর সাহায্য ছাড়া এই ফোলানো শাড়ী পরা অসম্ভব । পুরকীর ও দোকানদারের ওপর অগাধ বিশ্বাস ..ইয়ে শাড়ী বাচ্চাভী একলা পহেন সকতা হ্যায় বাবুজী। ফিক্ ফিক্ ফিক্ …কষ্ট লাগে পুরকীর জন্য ।
rabiyaborshi publisher