আপনার জীবন হতে একটি ব্যার্থতার গল্প তুলে ধরুন?

1 Answers   9.5 K

Answered 2 years ago

সুন্দর প্রশ্ন। আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। আগাগোড়া একজন ব্যর্থ মানুষ। জন্মের পর থেকেই আমি ব্যর্থ মানুষ। যখন দুনিয়াতে আসি, আমার জন্য আমার মা প্রায় মারাই যাচ্ছিলেন। ডাক্তাররা কোনো মতে মাকে বাচিয়েছেন। আমি জন্মের পর বাবার ব্যবসায় ধ্বস নামলো। বাসায় একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। এই প্লেট ভাঙ্গে। কেউ পিছলা খেয়ে পড়ে পায়ে ব্যথা পায়। আমাকে যে দেখতে আসে। সে-ই অসুস্থ হয়ে যায়। কেউ কেউ এমন অসুস্থ হয় যে, তাকে হাসপাতালে ভরতি হতে হয়। তখন আমি ছোট। এসব বড় হয়ে জেনেছি। এজন্য আমার বাবা মা আমাকে খুব বেশী আদর স্নেহ দেয় নাই।

স্কুলে ভরতি হলাম। আর ফেল করতে শুরু করলাম। সব সাবজেক্টে ফেল করি। অথচ একই স্কুলে আমার অন্য ভাই পড়ে। সে পাশ করে। আমি আর আমার একই শিক্ষকের কাছে পড়ি। ফেল করি, আর অন্য স্কুলে ভরতি হই। কারন সব সাবজেক্টে ফেল করার কারনে স্কুল আমাকে আর রাখতে চায় না। শিক্ষকরা বলেন, আমার মতো বাজে ছাত্র তাঁরা তাদের জীবনে দেখে নাই। দুনিয়ার সব বিষয় আমি জানি। লেখাপড়া ছাড়া দুনিয়ার সব বিষয় আমার ভালো লাগে। বাবা সারাদিন থাকে বাইরে বাইরে। জন্মের পর থেকেই মা আর শিক্ষকদের হাতে মাইর খেতে খতে আমার জীবন যাচ্ছে। আমি শুধু ভাবি, আমি তো পৃথিবীতে নিজ ইচ্ছায় আসি নাই। তাহলে কেন আমার উপর জোর করে তোমাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিচ্ছো!

একদিন বাবা বললেন, প্রিয় পুত্র আমার জীবনে লেখাপড়ার দরকার আছে। কোনো রকমে মেট্রিক পাশ করে কলেজে ভরতি হও। এটাই তোমার কাছে আমার চাওয়া। তুমি ৩৩ নম্বর পেলেই আমি খুশি। বাবার জন্য মায়া হলো। কিছুটা পড়ালেখা শুরু করলাম। আর সত্যি সত্যি ৩৩ নম্বর পেয়ে-পেয়ে পাশ করে গেলাম। কলেজে উঠে প্রেম করার শখ হলো। অথচ কোনো মেয়ে আমার সাথে প্রেম করতে চায় না। কিন্তু আমার চেহারা ছবি ভালো। দেখতে বাংলা সিনেমার নায়কের চেয়ে কম নয়। বিশেষ দিন গুলোতে একাএকা ঘুরি। প্রেমিকা নেই। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়। কত অগা-বগা-যগা প্রেম করে বেড়াচ্ছে চোখের সামনে! রাগে নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছা করে। এমনই পোড়া কপাল! অথচ বাপে আমার নাম রাখছে আশিক।

একদিন বুঝলাম বড় হয়ে গেছি। বাবাকে বললাম, আমাকে বিয়ে করিয়ে দেন। আমার বিয়ে করা দরকার। বাবা চোখ মুখ লাল করে বললেন, শুয়োরের বাচ্চা- বাদাইম্মা, কাম কাজ নাই। বিয়ে করার শখ হইছে। নিলর্জ্জ শালা। তোর আপন ভাই মাসে লাখ টাকা ইনকাম করে। সে এখনও বিয়ে করে নাই। আর তুমি শালার পো আইছো বিয়া করতে! সারাটা জীবন আমারে জ্বালাইছো। বাবা কথা শেষ করার আগেই কাশতে শুরু করলো। বাবা অনেক অসুস্থ। বয়সও অনেক হলো। যাইহোক, বাবা বললেন, যেহেতু তুমি আমার সন্তান। আমার দায়িত্ব তোমাকে বিয়ে দেওয়া। আমি তোমার বিয়ে দিবো। মরার আগে বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে গেলেন। এই বিয়ে দিয়ে আসলে বাবা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করে গেলেন। বাবার উচিৎ ছিলো- আগে আমাকে একটা ব্যবসা ধরিয়ে দেওয়া। বাবা মায়ের ভুলের জন্য- আমার জীবনটা শেষ!

বিয়ে করলাম। সংসারে বাচ্চা হলো। একদিন বাবা মারা গেলো। তার ছয় মাস পর মা মারা গেলো। আমি পড়ে গেলাম বিশাল সমুদ্রে। জানি না সাঁতার। বাবা মারা যাওয়ার পর কিছুই পেলাম না। তার জমি নেই, বাড়ি নেই। মায়ের দিক থেকেও কিছু পেলাম না। এমনই পোড়া কপাল আমার। অথচ কত পোলাপান বাপ-মা মরার পর জমি পায়, টাকা পায়, বাড়ি পায়। আমি কিছুই পেলাম না! বাবা মা বেঁচে থাকতে থাকা, খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় নাই। এখন তাঁরা দুনিয়াতে নাই। এখন আমাকে বেগ পেতে হচ্ছে। তাদের উচিৎ ছিলো মরে যাওয়ার আগে আমার জন্য কোনো একটা ব্যবস্থা করে যাওয়া। এটা তাদের জন্য অসস্মভব ছিলো না। ইচ্ছা করেই তাঁরা আমাকে পথের ফকির করে রেখে গেছে। আমি তাদের ক্ষমা করবো না। এখন আমি পড়ছি ভয়াবহ বিপদে। শ্বশুর শালার পো কিছুই দেয় না। অথচ তার অনেক আছে।

এখন আমার মন মেজাজ অত্যাধিক খারাপ। কারে ধরি, কারে গালি দেই বলা যায় না। আমার মা বাবা দুইজনের প্রতিই আমার অনেক রাগ। তাঁরা আমাকে দুনিয়াতে এনেছে। এখন মরে গেছে। তাদের কি উচিৎ ছিলো না মরার আগে আমার জন্য কিছু রেখে যাওয়া। তাঁরা যদি একটা পাঁচতলা বাড়ি রেখে যেত- মাস শেষে লাখ লাখ টাকা ভাড়া পেতাম। পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে জীবনযাপন করতে পারতাম। বাপ মার ভুলের কারনে ছেলে মেয়ের কষ্ট। এজন্য আমি আমার মা-বাপ কাউকে পছন্দ করি না। তাদের উপর আমার অনেক রাগ। এমন কি শ্বশুর শালার পোর উপরেও অনেক রাগ। তাদের আমি ক্ষমা করবো না। যাইহোক, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। দেখি সামনে কপালে কি আছে। যতদিন বেঁচে আছি, খেলে যেতে হবে।


Abir Ahmed
abirahmed
358 Points

Popular Questions