Answered 2 years ago
আমার কন্যার বয়স ২১ মাস। আগামীকাল সকালে কন্যাকে কি খেতে দিবো জানি না। ঘরে কনো খাবার নেই। আমার কাছে কোনো টাকা নাই। দীর্ঘদিন ধরে আমি বেকার। বাড়িওলা ১৭ মাসের ভাড়া পায়। তবে আমার বাড়িওলা ভালো মানুষ। সে বলেছে, ভাড়ার টাকার জন্য চিন্তা করবেন না। চাকরী পেলে অল্প অল্প করে দিয়ে দিবেন। আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আমার সাথে কথা বলে না। কারন, যে পুরুষ একটা চাকরী জোগাড় করতে পারে না। ছোট মেয়ের জন্য খাবার কিনতে পারে না। এমন পুরুষকে সে বিয়ে করেই ভুল করেছে। অথচ আমাদের প্রেমের বিয়ে ছিলো।
আমরা পাঁচ ভাই। আমার বাকি চার ভাইয়ের বিরাট ভালো অবস্থা। তাঁরা প্রতি বছর দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। এই তো গতকাল আমার ছোট ভাইয়ের ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান করা হলো- বিশাল এক রেস্টুরেন্টে। ব্যুফে'তে। যত পারো খাও। ছোট ভাই দুইশ' মানুষ দাওয়াত দিয়েছে। আমাকে দাওয়াত দিয়েছিলো কিন্তু যাইনি। খালি হাতে যাই কি করে? সবচেয়ে বড় কথা যাতায়াত খরচ আমার কাছে নেই। আমার ভাইয়েরা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমার দিকে তাকানোর তাদের কোনো সময় নেই। এমন কি আমার মা-ও আমার কোনো খোঁজ খবর নেয় না। সে ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। অথচ আমার মা এবং আমার ভাইরা আমার বর্তমান অবস্থা খুব ভালো করেই জানে।
আমি যে এলাকায় থাকি, সেখানে এখন আর আমাকে কেউ বাকি দেয় না। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই। তাঁরা অনেক টাকা পায়। দীর্ঘদিন হয়ে গেছে, বাকি পরিশোধ করতে পারি না। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব কেউ আমার খোজ নেয় না। আজিব ব্যাপার! তাদের সাথে আমি দেখা করতে গেলে- তাঁরা আগেই বলে, হাত খালি। কোনো সাহায্য করতে পারবে না। তারপরও কারো কারো কাছে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে হাত পাতি। কেউ কেউ দুই শ', পাঁচ শ' টাকা দেয়। হাত পেতে টাকা নিতে আমার ভীষন লজ্জা করে। কিন্তু উপায় নেই। আজ সকালে নাস্তা খাওয়া হয়নি। ঘরে আটা শেষ।
দীর্ঘদিন মাথায় শ্যাম্পু দিতে পারি না। অভাবে অভাবে আমার চেহারায় স্থায়ী দরিদ্রতার ছাপ পড়ে গেছে। গাল ভেঙ্গে গেছে। আমার ওজন ৯ কেজি কমেছে। চোখের নীচে কালি পড়েছে। রাতের পর রাত আমার ঘুম আসে না। কন্যা কত কিছু খেতে চায়- তাকে খাওয়াতে পারি না। এটা যে কেমন কষ্ট বলে বুঝাতে পারবো না। কন্যার একজোড়া জুতো খুব দরকার। কন্যা হাঁটতে পছন্দ করে। কন্যাকে নিয়ে বাইরে যাই। কোলে রাখি। খালি পায় নিচে নামাতে ইচ্ছা করে না। সেদিন এলিফ্যান্ট রোড গিয়েছিলাম। জুতো দেখলাম- কন্যার জন্য। খুব সুন্দর জুতো। লাল রঙ্গের। টাকার ব্যবস্থা হলেই সবার আগে জুতোটা কিনে ফেলব। ৮০০ শ' টাকা দাম।
আজ রাতে আমাদের খাবার কি জানেন? মুড়ি। তাও সেই মুড়ি মিইয়ে গেছে। পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে ফেলব। আমার মনে হয়- আমার মতো অসহায় মানুষ এই গ্রহে আর নেই। একজন রাস্তার ভিক্ষুকও আমার চেয়ে ভালো আছে। তার প্রতিদিন কম বেশি ইনকাম আছে। অথচ আমার হাত পা আছে। টানা তিন বছর ধরে আমার কোনো আয় নেই। অথচ আমি পরিশ্রমী ও সৎ মানুষ। কিন্তু আমার কোনো চাকরী নেই। ক্ষমতাবান মামা চাচা থাকলে একটা চাকরী জুটিয়ে নিতে পারতাম। আমার মায়ের মতো মা এবং ভাই যেন আল্লাহ দুনিয়াতে আর কাউকে না দেয়। আমার বিশ্বাস একদিন আমার একটা ভালো চাকরী হবে। প্রথম মাসের সেলারি পেয়ে সবার আগে কন্যার জন্য একটা লাল জুতো কিনবো। আর নানান রকম ফল।
khalidrimon publisher