Answered 2 years ago
হ্যাঁ অবশ্যই।
দু-দিন আগেকারই কথা, সম্ভবত রবিবার হবে। হাতের ঘড়িটা ঠিক মতো কাজ না করায় ভাবলাম সুনীল মামার দোকানে দিই। তিনি আমার মা ও বাবার সঙ্গে একসাথে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। তাই কখনো তিনি হয়ে যান কাকা তো কখনো মামা। তবে আমি তাঁকে বেশীরভাগ সময়ই মামা বলে ডাকি
আনন্দপুরের বাসস্ট্যান্ডের কাছে তাঁর ছোট-খাটো একটি ঘড়ির দোকান আছে। সেইদিন ঘড়ি দেখানোর জন্যে সবে মাত্র ঘর থেকে বেড়িয়েছি, এমন সময় এলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। বৃষ্টির জেরে অবশেষে রহিম কাকার হোটেলের সাহায্য নিতে হয়েছিল। সেখানেই দেখি কাকা একটি বাচ্চা মেয়েকে খুব বকাঝোকা দিচ্ছে।
বৃষ্টি থামতে তখন ও বেশ দেরি ছিল। তাই তখন মেয়েটির কাছে গেলাম। সে তখন একটা ছোট্ট খুঁটি ধরে দাঁড়িয়েছিল, বোধহয় বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় ছিল।
তার কাছ থেকে সমস্ত কথা শোনার পর তাঁর জন্যে খাবারের কিছু অর্ডার দিলাম। সে বলেছিল যে সে প্রায় দু-দিন ধরে কিছু খায়নি। এখানে সে কিছু খাওয়ারের আশায়ই এসেছিল কিন্তু কাকা তো তা প্রত্যাখ্যান করেন। সুনীল মামাকে আমি পরে ও টাকা দিতে পারবো। এই ভেবেই তার জন্যে কিছু আনালাম।
রহিম কাকাকে খাওয়ারের অর্ডার দিচ্ছিলামই, এমন সময় বৃষ্টি সামান্য পরিমাণে কম হয়েছিল। আর সেই সুযোগেই সে সেখান থেকে চলে যায়, ফিরে এসে দেখি সে সেখানে আর নেই। আমার ও অবশ্য বলে যাওয়া উচিত ছিল যে আমি তার জন্য খাবার আনতে যাচ্ছি। বুঝতে পেরেছিলাম যে খাওয়ারের সন্ধানেই কোথা ও গেছে। তাই একটু-ওদিক খুঁজতে লাগলাম, বৃষ্টি ও ততক্ষণে প্রায় থেমে গেছিল।
মিনিট-খানেক পর দেখতে ও পেলাম । দেখলাম.. সে কোনো এক অন্ধকারময় রাস্তা ধরে কোথা ও যাচ্ছিল। অনেকক্ষণ ধরে সেই রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে, সেই রাস্তায় থাকা একটি ভিক্ষারীর কাছে থামে, যেন কিছু বলতে চায়ছিল।
সেই সময় আমি কিছু না বুঝলে ও সেই ভিক্ষারীটি বুঝেছিল, বুঝেছিল মানবিকতার ভাষা। ছোট্ট মেয়েটির পরিস্থিতি বুঝে, তাকে কিছু না বলাতেই সে তাকে কিছু খেতে দিল। নিজের পড়ে থাকা অবশিষ্ট খাওয়ার থেকে আর তা পেয়েই সেই মেয়েটি যা খুশী হয়েছিলো তা না দেখলে বোঝা মুশকিল!! অবশিষ্ট খাওয়ারের এক টুকরো কাউকে এতটা খুশি করতে পারে তা এর আগে অবধি জানা ছিল না।
পুরো ঘটনার মধ্যে সবথেকে অবাক এটা ভেবে লাগে যে ভিক্ষারীটা মেয়েটার পেটের অবস্থা বোঝার পরে ও রহিম কাকার মতো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়নি। অভাবের পরে ও দিয়েছে নিজের অবশিষ্ট খাবার। তাই পয়সার দিক দিয়ে গরিব হলে ও মনের দিক দিয়ে তিনি রহিম কাকার চেয়ে বেশি বড়লোক।
bristy.khatun publisher