Answered 2 years ago
১। কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়ে সরকারের কাছে ৫ বছর মেয়াদে সঞ্চয়পত্র কিনলে আগে টাকা দ্বিগুণ করে দিত। প্রায় ১২.৫% হারে চক্রবৃদ্ধিতে বাড়লে ৫ বছরে টাকা দ্বিগুণ হয়। এখন সরকার আর এত চড়া সুদে ধার নিতে রাজী নন, আবার ব্যাঙ্কের সুদের হার কমাতেও চান।
২। ৫ লাখ টাকাই মাত্র যার পুঁজি, তার উচিৎ নয় বড় কোন ঝুঁকি নেওয়া। যদি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তাহলে তিন বছরেই টাকা দ্বিগুণ করতে দামী কাপড়ের ব্যবসা ধরতে পারেন। সমস্যা হল বাজারজাত করা। আসলে ১২০০০ টাকায় কিনা শাড়ী ২০০০০ টকায় বেচা খুব সোজা কাজ নয়। দেখা যাবে ২০০ কাস্টমারকে বলেকয়ে মোটে একজনকে রাজি করানো যায়। নিজেই যদি কাপড় না চিনেন, আর কি ধরণের লোকের কাছে মাল গছানো যাবেন না বুঝেন, তাহলে এই ব্যবসা করতে গিয়ে সব লোকসান হয়ে যাবে। ব্যবসায়িক জ্ঞান ছাড়া ব্যবসা হয় না।
৩। কৃষি জমি কিছুতেই কিনবেন না। শহরের পাশে যেসব জমিতে ভবিষ্যতে দোকানপাট বা বাড়ি করা যাবে সেসব কিনে রাখতে পারনে। কিন্তু আপনার জমি বেদখল হলে কি করে তা উদ্ধার করবেন সেটা আগে ঠিক করুন। আমার চেনা বেশ কিছু লোক জমি কিনেছেন, কিন্তু দখল নিতে পারেন নি, যদিও কাগজপত্র ঠিক আছে। মানুষ খুন করার ইচ্ছা না থাকলে জমির ব্যবসায় যাওয়া মানে নিজে খুন হওয়া।
৪/ কত টাকা চাই সেই টার্গেট করে ব্যবসা করা খুব ভালো বুদ্ধি নয়। আপনি কোন ব্যবসা করতে পারবেন, সেটা দেখুন আর লেগে পড়ুন। ৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ৫ কোটি টাকাও তো করতে পারেন, যথাসময়ে। ব্যবসায়ে লেগে থাকা চাই, কখন সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায় আগে থেকে বলা যায় না। একটা সত্যি গল্প। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক হতচ্ছাড়া ছেলে একবার আমার ১৭০০ টাকা মেরে দিল ১৯৮২ সালে, আমি তাকে ৫০০০ টাকা দিয়ে কিছু টেবিল-চেয়ার কিনে দিতে বলেছিলাম সেখান থেকেই। কারণ, তার চাকরী নেই, পয়সা নেই, বিস্তর ধারদেনা, দোকানদার তাকে আর বাকিতে চা দেয় না। টোটো করে ঘুরে আর ধান্দা করে। কি করে হাজির হল বড় একশহরে (সে এখন বিশাল নামকরা লোক তাই শহরের নাম বলছিনা পাছে লোকে বুঝে ফেলে কে সেই লোক।) কপালগুণে এক জেলখানায় সবজি সরবরাহের ছোট একটা অর্ডার পেল। নিয়মিত ঠিকাদার হজ্জে যাওয়ায় তার এই সাময়িক সুযোগ, হাজী সাহেব নিজেই দয়া করে তাকে ঐটা পাইয়ে দেন। কিন্তু একবার জেলার সাহেবের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েই সে জেলার সাহেবের মন জয় করে ফেলল। পরে সারা দেশের অনেকগুলি জেলের নিয়মিত খাবার সরবরাহকারী হয়ে পড়ল। খুব মিশুক ছেলে। এক বুড়ার কথা শুনে একবার এক ভাঙ্গা জাহাজের লোহা কিনতে গিয়ে বিরাট বড় দাঁও মারে সে। ৩৫ বছরে পরের এখন সে কি জানেন? তার দৈনিক আয় দুই লাখ টাকার বেশি, মানে বছরে সে সাড়ে সাত কোটির বেশি রুজি করে। আমার ১৭০০ মেরেছিল, আমি নিজে তার ২০,০০০ মেরে দিয়েছি, সে হেসে বলে, কি আর মারলেন? আমার পেছনে লাখ টাকার বেশি খরচ করেছে। যেখানে হাত দেয় সেখানেই সে সফল।
বছর বারো আগে এক লোক তাকে ধরে বল্লঃ আমার দশ বিঘা জমিতে কাঠের চারা লাগিয়েছি, কিন্তু কানাডার ভিসা পেয়েছি, বাগান বেচে দেব। মাত্র ৭ লাখ টাকায় কিনে ফেল্ল বাগান। ২৪০০ গাছ, একেটার বর্তমান দাম ৪০০০০ টাকা। হিসাব করেন কয় টাকার গাছ আছে । আর জমির দাম আকাশের উপরে আকাশ_ শুধু জমির দাম এখন ৮০ লাখ টাকা। জলের দরে ভাঙ্গাচোরা বন্ধ ফ্যক্টরি কিনে সেটা চালু করে ফেলে।
তার মত সবাই পারবে না, কিন্তু মুল কথা হলঃ ব্যবসায়ে নামবেন তো সারা জীবনের জন্য নামুন। নিবেদিত প্রাণ না হলে সফল হবেন না। লাভ-ক্ষতি আপদ-বিপদ আছেই, সবের ভেতরদিয়েই টিকে থাকা চাই।
আর একটা খারাপ কথা। নিজের বাপ-ভাই থেকে শুরু করে কোন ফেরেস্তাকেও এক টাকাও ধার দিবেন না। আমি ৭০ জনকে টাকা দিয়েছি, মাত্র দুইজন ফেরত দিয়েছে, বাকি সবাই মেরে দিয়েছে। ধার দেবেন না। কিন্তু নেবেন , আর সেটা নেবেন ব্যঙ্ক থেকে, আর সময় মতে ফেরত দেবেন
ahmedhelin publisher