Answered 2 years ago
প্রথমে ভেবেছিলাম প্রশ্নটির উত্তর দিবোনা তারপর ভাবলাম যেই ইসরাইলের গোয়েন্দার একজন সদস্যের সঙ্গে সাবেক ভিপির ছবি নিয়ে এত বিতর্ক, সেই ইসরাইল-বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বিষয়টি একটু পরিস্কার করে ফেলি।
সবথেকে বেশি অবাক হয়েছি যারা চোরের মতো পিছন পিছন লুকিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে যন্ত্রপাতি ক্রয় করার চুক্তি করে, তারা একটা ছবি নিয়ে নির্লজ্জভাবে আবার কিভাবে সমালোচনা করে, তা আমার মাথায় আসেনা।
আওয়ামী লীগ সরকার ইসরাইল থেকে কেন আঁড়িপাতা ডিভাইস ক্রয় করেছে?
তাদের এই জিনিসপত্র ক্রয় করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ জনগণের মোবাইল ফোনের উপর নজরদারি বাড়ানো। একটা জিনিস এখানে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা(DGFI) এই ধরনের প্রযুক্তি ক্রয় করেছে ইসরাইল থেকে। সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা যথেষ্ট sensitive হতে পারে।
ইসরাইল থেকে কেনা মনিটরিং সিস্টেম IMSI যেকোনো আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের মোবাইল ট্রাক করে রাখতে পারে। ব্যাংকক ভিত্তিক একজন আইরিশ নাগরিক জেমস মোলোনি যিনি এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করার সময় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি এই ধরনের প্রযুক্তিকে Aggressive and Intrusive (আক্রমণাত্মক এবং অনুপ্রবেশকারী) বলেছেন, অর্থাৎ এটি যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনার মোবাইলের উপর নজরদারি রাখতে সক্ষম।
শুধু তাই নয়, এসব যন্ত্রপাতি একই সময়ে একসঙ্গে ২০০-৩০০ টি মোবাইল ফোন ট্রেস করতে সক্ষম। এছাড়া একটি নির্দিষ্ট সেল টাওয়ারের সমস্ত ফোনগুলিকে শনাক্ত করতে সক্ষম এই প্রযুক্তি। অর্থাৎ, আপনি আপনার ফোনে যা কিছু করতেছেন, সবগুলোই তারা দেখতে পারবে।
ছবি: আল জাজিরা থেকে সংগৃহীত যেখানে ইসরাইলের সঙ্গে জিনিসপত্র ক্রয় করার চুক্তি হিসেবে মিথ্যাভাবে হাঙ্গেরি দেশকে বুঝানো হয়েছে।
এবার এই ধরনের প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করার কিছু কারনও বিশ্লেষণ করা যাক।
প্রথমত অনেকেই এখানে একটা ফালতু যুক্তি দিবে যে বাংলাদেশ নিজেদের প্রযুক্তি খাতে উন্নতির জন্য এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে। তবে এই যুক্তি হচ্ছে উলো বনে মুক্ত ছড়ানোর মতো। চোরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে জিনিসপত্র ক্রয় করা তাও DGFI কতৃক, এটা তো প্রযুক্তি খাতের উন্নতির করার কোনো পদ্ধতি হতে পারে না।
এই প্রযুক্তি ক্রয় করার কারন হতে পারে বিরোধী দলসহ সরকার বিরোধী সকল ব্যক্তিবর্গের উপর গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি বাড়ানো। ফলে সরকার বিরোধী ব্যক্তিদের যেকোনো আন্দোলন বানচাল করতে সুবিধা হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নের জন্য এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সংগ্রহ করা যাবে।
জনগণের উপর তা কেমন প্রভাব ফেলবে?
একটা বিষয় বলে রাখি যে, যারা সাধারণ জনগণ বিশেষ করে যারা রাজনীতি থেকে দূরে, তাদের উপর এসব প্রযুক্তির নজরদারি কম। তবে গুরুত্বপূর্ণ সভা সমাবেশের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সোস্যাল মিডিয়ায় কার্যকলাপ নজরদারি হয়তো রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কেউ জেনে যেতে পারে।
আপনি আমি কখনোই চাইবোনা যে আপনার আমার ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কেউ জানুক। তবে যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কিংবা রাজনীতি নিয়ে সচেতন, তাদের উপর অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি রাখা হবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের উপর নজরদারি মানবাধিকার লঙ্ঘন যেটা আপনি আমি কখনোই চাইব না।
Declaration Of Human Rights এ বলা হয়েছে,
No one shall be subjected to arbitrary interference with his privacy, family, home or correspondence, nor to attacks upon his honour and reputation. Everyone has the right to the protection of the law against such interference or attacks.
এখন এইসব মানবাধিকার আইন শুধু কাগজ কলমেই লিখিত। আপনি আমি হয়তো ভাবতেই পারব না যে, আপনার আমার ব্যক্তিগত বিষয় আইনি সংস্থা নজরদারি রাখছে।
Suroviislam publisher