Answered 2 years ago
অ্যাডলফ হিটলার এমন এক নাম যে নামের আগে-পরে কোনো বিশেষণের দরকার নেই। পুরো ইউরোপের প্রায় ৬০ লাখ ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষকে হত্যা করা হয় শুধু তারই নির্দেশে। তিনি পদ্ধতিগতভাবে ইহুদিদের হত্যা করতে বানিয়েছিলেন অসংখ্য ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’। এসব ক্যাম্পে গণহারে ইহুদিদের ধরে এনে নানা নির্মম পদ্ধতিতে হত্যা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
হিটলারের কারণে সংঘটিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কোটি মানুষের প্রাণহানির জন্য দায়ী তিনি...
অ্যাডলফ হিটলার ইতিহাসের এক ঘৃণিত নাম। এই একনায়কের নিষ্ঠুর প্রতিহিংসার কারণেই এ পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে তার নির্মমতায় রক্তে ভেসে গিয়েছিল পৃথিবীর বিশাল জনপদ।অ্যাডলফ হিটলার। পৃথিবীর ইতিহাসে তার নামটি নাৎসিদের নেতা ও স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে উল্লেখ হলেও জামার্নিদের কাছে তিনি মহানায়ক। তার উগ্র জাতীয়তাবাদই এ জনপ্রিয়তার কারণ। কিন্তু কী কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন একজন ইতিহাসবিদ। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে তা নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই গবেষণার অংশ হিসেবে এক বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন ওই ইতিহাসবিদ। তিনি জানান, নাৎসি পার্টির প্রধান হওয়ার পেছনে হিটলারের মনে ছিল অন্য এক রাজনৈতিক দল থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার যন্ত্রণা। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একাধারে কুখ্যাত এবং বিখ্যাত এই স্বৈরাচার প্রথমে জার্মান সোশালিস্ট পার্টিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। ইতিহাসবিদ থমাস ওয়েবার বলেন, যদি সেই সময় জার্মানির ডানপন্থি সোশালিস্টরা হিটলারকে নিতেন, তবে দলের ছোট কোনো দায়িত্বেই বসানো হতো তাকে। কিন্তু নাৎসিদের থেকেও অনেক বড় হতো সেই ভূমিকা। হিটলার তার আগে যোগ্য নেতৃত্বের কোনো গুণাবলি দেখাতে পারেননি। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা পালন করেই অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু হিটলারের কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়ার আশা বা আত্মবিশ্বাস মেলেনি সোশালিস্টদের। যদি হিটলার ওই দলে যোগ দিতেন, তবে সোশালিস্টরা হয়তো নাৎসিকে নিজের মধ্যে নিয়ে নিতেন। তখন নাৎসিদের ইতিহাস হয়তো এমন হতো না। তারা অন্য কোনো পথে চলত, বলেন ওয়েবার। যদি তাই ঘটত, হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই ঘটত না। হতো না হলোকাস্ট। ইউনিভার্সিটি অব অ্যাবারডিন ওয়েবার ইনডিপেনডেন্টকেও জানান এসব কথা। ১৯১৯ সালে মিউনিখের এক আর্কাইভে বলা হয়, জার্মান সোশালিস্টরা হিটলারকে নিজেদের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে নেয়নি। এমনকি ওই দলের কোথাও কিছু লেখারও সুযোগ মেলেনি তার। পরে হিটলার নাজিদের সঙ্গে যোগ দেন। ১৯২১ সালে তাদের নেতা হয়ে ওঠেন। পরের বছর জার্মান সোশালিস্ট পার্টিকে বিলুপ্ত করা হয়। আসন্ন বইয়ে ওয়েবার লিখেছেন, হিটলার তার শত্রুদের বিরুদ্ধে আজীবন প্রতিশোধের খেলায় মেতে ওঠেন। কিন্তু কেন সোশালিস্টরা হিটলারকে নিজেদের দলে টানেনি? ওয়েবারের মতে, হিটলার মতামত প্রকাশে স্পষ্টবাদী ছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ঘৃণিত এই ব্যক্তিকে কম করে হলেও ২৭ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে! এটাই স্বাভাবিক ছিল। যার কারণে বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় তাকে মারার চেষ্টা হবেই। এ রকমই একটি ঘটনা ২০ জুলাইয়ের বিস্ফোরণ নামে পরিচিত। হিটলারকে যতবারই হত্যার চেষ্টা করা হয়ে থাকুক না কেন প্রতিবারই তা ব্যর্থ হয়েছে। তবে ২০ জুলাইয়ের বিস্ফোরণ ছিল বেশ গুরুতর। সেদিন কাউন্ট স্টাফেনবার্গ হিটলারকে প্রায় খুনই করে ফেলেছিলেন এবং তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি হিটলারের গায়ে কিছুটা হলেও আঁচড় ফেলতে পেরেছিলেন! দিনটি ছিল ২০ জুলাই। হিটলারের টপ সিক্রেট কনফারেন্স রুম ‘ওলফ’স লেয়ার’-এ ঢোকার সুযোগ পান কাউন্ট স্টাফেনবার্গ, যেখানে ফুয়েরার তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোকদের নিয়ে সামরিক কলাকৌশল পর্যালোচনা করেন। স্টাফেনবার্গ তার সঙ্গে ব্রিফকেস ভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে আসেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। ‘ওলফ’স লেয়ার’-এর এক রুমে একফাঁকে ঢুকে ব্রিফকেস থেকে বিস্ফোরকের ফিউজ জ্বালিয়ে দেওয়া শুরু করতেই এক কর্মচারী তাকে ডাকা শুরু করেন। স্টাফেনবার্গ তাড়াহুড়ো করে মাত্র একটা বিস্ফোরকের ফিউজই জ্বালাতে পারেন এবং তা নিয়েই কনফারেন্স রুমে ঢুকে পড়েন। তিনি টেবিলের নিচ দিয়ে যতটা সম্ভব হিটলারের দিকে ব্রিফকেসটা ঠেলে দেন। বিস্ফোরণ ঘটে ঠিকই কিন্তু একটা বিস্ফোরক হিটলারকে পরপারে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। স্টাফেনবার্গকে ধরে ফেলা হয় এবং পরে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সেই বিস্ফোরণের আঘাতে চারজন মারা গিয়েছিলেন।
Neha Khatun publisher