Green tea কেন আবিষ্কার করা হয়েছিল?

1 Answers   4.5 K

Answered 3 years ago

বেশ ভালো-ভালো উত্তর আছে এই থ্রেডে তবে আমি আজ এমন একটা আবিষ্কারের কথা বলব যা খুবই সাধারণ হলেও তা মানব সভ্যতার দ্রুত অগ্রগতির জন্য দায়ী। সেই আবিষ্কারটা হল আলু। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তাহলে সবিস্তারে বলি।

আপনি যে আলু খান তা প্রাকৃতিকভাবে খুবই বিষাক্ত ছিল এবং মানুষের খাওয়ার অযোগ্য। আলু Solanaceae পরিবারের সদস্য এবং এই পরিবারের নাইটশেড থেকে রোমানরা বিষ প্রস্তুত করত। আমরা যে আলু খাই সেই গাছ সোলানিন বলে এক Glycoalkaloid তৈরি করে যা খুবই বিষাক্ত। আপনি যদি আলু গাছের আলু বাদে অন্য কোনয় অংশ খাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে পটল তুলতে হবে। এই কারণে গরু, ছাগল আলু গাছের পাতা খায় না। যদি আলুকে ঠিক করে চাষ করা হয় এবং সূর্যের আলো থেকে বাঁচিয়ে জমিয়ে রাখা হয় তাহলে আলুতে যে পরিমাণ গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড থাকে তা মানুষের খাওয়ার জন্য ঠিক আছে। কিন্তু সূর্যের আলোয় রেখে দিলে আলুর খোসা সবুজ হয়ে যাবে এবং কল বেরোতে শুরু করবে সেক্ষেত্রে ওই আলু আপনার শেষ আলু হতে পারে।

তাহলে প্রশ্ন হল আলু খাওয়ার যোগ্য হল কী করে?

জেনেটিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে জঙ্গলি আলু মানুষ সিলেক্টিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে খাওয়ার যোগ্য করে তোলে ৭০০০-১০০০০ বছর আগে Solanum brevicaule থেকে, দক্ষিণ আমেরিকার, দক্ষিণ পেরু এবং উত্তর পশ্চিম বোলিভিয়াতে।

মনে করা হয় ৩০০০-৪০০০ মিটার উচ্চতায় এন্ডিজ পর্বতমালায় সেখানকার মানুষ আনাজ চাষ করতে পারত না, সেখানকার আবহাওয়া এবং মাটির জন্য। তখন তারা আলুর পূর্বসূরির থেকে বিষ বের করার উপায় খুঁজে পায়‌। তারা এটির ছাল ছাড়িয়ে, পা দিয়ে মাড়িয়ে তার থেকে সব জল নিংড়ে বের করে নিত এবং বাইরে শুকোনোর জন্য ফেলে রাখত। পাহাড়ের রাতে সেগুলো ফ্রিজ ড্রাই হয়ে যেত। পরদিন তা আবার মাড়িয়ে বাকি জল বের করা হত এবং আবার শুকানোর জন্য বাইরে ফেলে রাখা হত। এই প্রক্রিয়া বেশ কয়েকবার চালানোর বাদে যা পাওয়া যেত তাকে চুনো বলা হত। এই চুনো খাওয়া যেত এবং এগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য জমিয়ে রাখা যেত কারণ এগুলো নষ্ট হত না। তাই কঠিন সময়ের জন্য এই খাবার আদর্শ ছিল। এছাড়া Solanum brevicaule এটেল মাটি, নুন এবং জলের মিশ্রণে চুবিয়ে রেখেও তার বিষ বার করে চুনো বানানো হত।

এই চুনো থেকে আবার গাছ হত এবং এগুলোকে সিলেক্টিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে আধুনিক আলুর আবিষ্কার হয়।

আপনার হয়তো দক্ষিণ আমেরিকার ইংকা সভ্যতার নাম শুনেছেন। তাদের বানানো মাচু পিচু আজ ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। দুর্গম পাহাড়ে বানানো এই শহর ছিল তাদের রাজধানী।

মাচু পিচু।

এই ইংকা সভ্যতার উত্থান হয় আলুর জন্য। এই গাছটি তাদের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তারা আলুকে পুজো করত। তারা সূর্যকে আলু মা বলে মানতে এবং বিশ্বাস করত মা আলু এই খাদ্য আলু সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতিকৃতিতে। আলুর ইংকা নাম ছিল পাপা। ইংকাদের কাছে এই আলু ছিল এক অসাধারণ উপহার কারণ একটা আলু মাটিতে পুঁতে দশটা আলু পাওয়া যায় এবং তাই এটি খাবার জোগান দিতে পারে প্রায় অফুরন্তভাবে।

১৫৩৫ সালে পেদ্রো দে সিজা লিওন নামক এক স্প্যানিশ কঙকিস্টাডোর, পেরুর টিটিকাকা হ্রদের কাছে প্রথম এই আলু দেখতে পান এবং তিনি তার Chronicles of Peruতে লেখেন,

The roots…are the size of an egg, more or less, some round, some elongated; they are white and purple and yellow, floury roots of good flavour, a delicacy to the Indian and a dainty dish even for the Spaniards.[1]

(এই শেকড়…মোটামুটি ডিমের সমান, কোনটা গোল, কোনটা লম্বাটে; সাদা, বেগুনি, হলুদ রঙের; গুঁড়ো যুক্ত ভাল স্বাদের শেকড় গুলো, ইন্ডিয়ানদের জন্য একটা উপাদেয় খাবার এবং স্প্যানিশদের জন্যেও সুস্বাদু খাবার।)

আলুর ইউরোপ যাত্রা।

যখন স্প্যানিশ কঙকিস্টাডোররা ইউরোপ ফেরত যায় তারা সোনা, রূপোর সঙ্গে সমান মূল্যবান এই আলু নিয়ে আসে। ১৫৭০ এর কিছু আগে আলু স্পেন পৌঁছোয়। সেভিলের এক মঠের বাগানে আলু গাছ পোঁতা হয়। ইংকারা আলুকে পাপা বললেও স্প্যানিশরা এর নাম দেয় potato ইংকা শব্দ batata থেকে। ইংকারা মিষ্টি আলুকে batata বলত এবং স্প্যানিশরা এর থেকে potato নাম দেয়। যদিও মিষ্টি আলু আদতে আলু নয় তাও নামটা রয়ে গেছে।

তবে প্রথম প্রথম ইউরোপীয়রা এই আলুকে সন্দেহ এবং ঘৃণার চোখে দেখত। যেহেতু বাইবেলে আলুর উল্লেখ নেই এবং বিজ থেকে আলু হয়ে না তাই তারা বিশ্বাস করত এটি শয়তানের গাছ এবং তাই মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী। তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের মত ছিল আলু নাকি মাটির উর্বরতা নষ্ট করে দেয়। ডাক্তাররা জানায় আলু খেলে লেপ্রোসি, সিফিলিস এবং স্ক্রোফুলা হয়। অনেক দেশে বিশ্বাস ছিল আলু খেলে যৌন উত্তেজনা বাড়ে। লাইনাসের মত মহান উদ্ভিদ বিজ্ঞানীও আলুকে সন্দেহের চোখে দেখত কারণ এই গাছের বিষাক্ত নাইটশেডের সাথে সম্পর্ক ছিল।

তবে আস্তে আস্তে গরিব চাষিরা আলু চাষ করতে লাগলো। ১৭ই এবং ১৮ই শতকের সেনাবাহিনীরা কোন গ্রামে গেলে সেখানকার সব ফসল এবং খাবার কেড়ে নিত। চাষীদের ফসল কেটে তা জমিয়ে রাখতে হত নাহলে তা মাঠে নষ্ট হত তাই তারা এই উপদ্রব থেকে বাঁচার এক উপায় খুঁজছিল। এই সমস্যার উত্তর ছিল আলু। আলু মাঠে ফেলে রাখা যায় এবং সোজা খাওয়া যায়, নষ্ট হয়ে না। তাই তারা আলু চাষ করতে লাগলো এবং সেনারা খাবার কাড়তে এলে চাষীরা তাদের কোদাল ধরিয়ে বলত নিজে নিয়ে নিতে। যুদ্ধ করে কেউ আলু চাষ করতে রাজি ছিল না তাই বলা বাহুল্য এর ফলে আলু, চাষীদের বেশ প্রিয় হয়ে উঠল।

১৭০০র শেষে ইউরোপীয়রা ব্যাপকভাবে আলু চাষ শুরু করে এবং এটি খাবারের ব্যপারে যুগান্তকারী হয়ে দাঁড়ায়। Antoine Parmentier ফ্রান্সের লুই XIV কে বোঝান সাহী বাগানে আলু লাগানোর জন্য। চাষীরা এই দেখে ভাবে আলু রাজাদের খাবার এবং তা বাগান থেকে চুড়ি করতে লাগে এবং এর ফলে সারা ফ্রান্সে আলু ছড়িয়ে পড়ে। জার্মান সম্রাট ফ্রেডরিক দি গ্রেট এবং গ্রিসের রাজা ওটো I রাজ্যবাসীদের মন্বন্তর/দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচার জন্য আলু চাষ করতে বলেন।

খাবারের জোগান বেড়ে যাওয়ার ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় ইউরোপে। আয়ারল্যান্ডে ১৫৯০ থেকে ১৮৪৫ মাঝে জনসংখ্যা ১০ লাখ থেকে বেড়ে ৮০ লাখ হয়ে যায়। কিন্তু আলু গাছের জেনেটিক তফাৎ কম থাকায় ১৮৪৫ সালে আয়ারল্যান্ডে লেট ব্লাইট নামক এক ছত্রাক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং দেখা দেয় Great Famine। এই মন্বন্তর ১৮৫২ সাল পর্যন্ত চলে যার ফলে আয়ারল্যান্ডের জনসংখ্যা ২০% - ২৫% হ্রাস পায়। এই মন্বন্তরে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এবং ২০ লাখ মানুষ দেশান্তরে গমন করেন। এই বিপুল পরিমাণ শরণার্থী শিল্প বিপ্লবের জন্য দরকারি কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এর ফলে ইউরোপীয় শক্তিগুলো এশিয়া এবং আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করতে সক্ষম হয়। তাই আলু প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে শিল্প বিপ্লবের ইন্ধন যোগায় যার ফলে উপনিবেশ চালাতে সুবিধা হয়। আজকের বিশ্বের মানচিত্র এবং পাওয়ার স্ট্রাকচারের জন্য আলুর বিশেষ অবদান আছে। বিশ্বযুদ্ধেও সৈনিকদের খাবারের জোগান দিতে আলু ব্যবহার করা হয়েছিল।

মন্বন্তরের সময় কারখানার বাইরে রিফিউজিদের ভিড়।

পরের বার আপনার প্রিয় আলু সেদ্ধ ভাত কিংবা আলুর চিপস খেতে খেতে একবার ভেবে দেখবেন এই বিষ্ময়কর আবিষ্কারের ব্যপারে। বুঝবেন মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে এই আনাজের কী বিশাল অবদান।

ছবি নেওয়া হয়েছে গুগল ইমেজের মাধ্যমে।


Moushumi Hamid
Moushumi Hamid
530 Points

Popular Questions