১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যদি ভারত নিউট্রাল থাকতো অর্থাৎ কোনও পক্ষই না নিতো তবে অবস্থা কী দাঁড়াতো?

1 Answers   14 K

Answered 2 years ago

এই প্রশ্নের আজ অব্দি ৩টি জবাব এসেছে। ৩টিই দিয়েছেন আমাদের ভারতীয় বন্ধুরা। আমি উনাদের মতামত প্রকাশের অধিকারকে সম্মান করি। এবার আমি এ প্রশ্নের জবাব দেবো, একজন বাংলাদেশী হিসেবে। নিরাবেগ, বাহুল্যবর্জিত পয়েন্ট ধরে জবাব। কেউ পারলে খন্ডন করবেন দয়া করে।

১। প্রথমত, এই প্রশ্নটিই অবান্তর। যদি আপনি ইতিহাসের খবর রাখেন, তাহলে দেখবেন ১৯৬৮ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ ৩৫ জন বাংলাদেশী সামরিক, অসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। এই মামলার নাম নিয়ে কিছু কিছু বাংলাদেশীর মনে দ্বন্দ্ব কাজ করে। অনেকেই ভাবেন আগরতলার বিষয়ে এটি পাকিস্তান সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। কিন্তু মামলাটির নাম পড়তে হবে, "আগরতলায় গিয়ে করা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা" হিসেবে। কাকতালীয় মনে হবে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা "রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইং" বা "র" এর জন্মও হয় ওই একই বছর। তাদের প্রথম মিশনই ছিল, পাছার থেকে পাকিস্তান হটাও অর্থাৎ পূর্বদিক থেকে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বাংলাদেশ তৈরি করো। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পুরো অরক্ষিত পূর্বপাকিস্তানে ভারত একটি ফুটো বুলেটও ছোঁড়েনি, কারণ তারা জানতো, আজ বা কাল বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই এবং এই স্বাধীনতা বাঙালিদের জন্য যতো দরকার, এর চেয়ে বেশি দরকার ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষা আর ভেঙে পড়া ঠেকাতে। তাহলে, ভারত কোন দুঃখে নিউট্রাল থাকবে! তারা তো সেই মধুক্ষণেরই অপেক্ষা করছিল। এর পরেও তারা বাংলাদেশে সরাসরি যুদ্ধে নেমেছে ৩ ডিসেম্বর, ততোদিনে ৭৫ ভাগ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত করে ফেলেছে এবং পাকি আর্মি কার্যত সেনানিবাসগুলোতে অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।

২। যেমনটি বলছিলাম, আরও কিছু তথ্য দেই। বাংলাদেশের নৌপথগুলিতে মাইন বসিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর নৌবাহিনীর চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্রান্স থেকে পালিয়ে আসা বাঙালি নৌ-কমান্ডোদের দল এবং মুক্তিযোদ্ধারা। যুদ্ধের সময় ব্রহ্মপুত্র নদীতে পাকিস্তানিদের অস্ত্র বোঝাই লঞ্চ দখল করেন কাদের সিদ্দিকী। আর প্রায় প্রতিটি সফল অপারেশন থেকেই মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানিদের থেকে অস্ত্র আর গোলাবারুদ দখল করে নিচ্ছিল। ১২০০ মাইল দূরে, কোন সাপ্লাই লাইন ছাড়া, নদী জল জঙ্গলের পূর্ববাংলায় পাকিস্তান আর্মির বেঁচে থাকাই ছিল এক সংগ্রাম। হ্যাঁ, ভারত সাহায্য করায় যুদ্ধটা ৯ মাসে শেষ হয়েছে। ভারত অস্ত্র দিতে দেরি করায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পাওয়া ২য় বিশ্বযুদ্ধের আমলের অস্ত্র দেবার ফলে এই দেরিটা হয়েছে। পাকিস্তান আর্মির হাতে থাকা চীনা অস্ত্রের সমতুল্য অস্ত্র পাওয়া এপ্রিল থেকে পাওয়া গেলে ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যেত। সোভিয়েত অস্ত্রের বিষয়ে রেফারেন্সটি পাবেন, পিএন হাকসার এর জীবনীতে। আর শুরুতেই অস্ত্র দেবার বিষয়ে ভারতের দ্বিধার ইতিহাস পাবেন গোলক মজুমদার এবং বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা বইয়ে। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পাকিস্তান আর্মির সারেন্ডার করা অস্ত্র ট্রেনে করে ভারতের নিয়ে যাবার, খুলনার শিল্প অঞ্চল থেকে ভারতীয় বাহিনীর লুটপাটের কাহিনী এবং ব্রিগেডিয়ার নাগরা কর্তৃক এরকম কয়েকজন ভারতীয় অফিসারের বিচারের কাহিনী নাগরা সাহেবের লেখাতেই পাবেন। ভারতীয় এক অফিসার যশোর সেনানিবাস থেকে বাথটাব খুলে নিয়ে গিয়েছিলেন ভারতে, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। যা হোক, সর্বশেষ জেনারেল অরোরা'র একটা কমেন্ট দিলাম।

৩। একটা কথা মনে রাখবেন, পূর্ববঙ্গ চিরকালই একটা বিপ্লবী জনপদ ছিল যারা দূরের শাসকদের কোনদিনই মেনে নেয়নি। সেটা আর্যাবর্ত থেকে শুরু করে ইসলামাবাদ যে শাসকই হোক। স্বাধীন পূর্ববঙ্গের জন্ম ইতিহাসের একটা অনিবার্য পরিণতি। ১৯০৬ সালে সেটা ছুটে গিয়েছিল কারণ পূর্ব বাংলার অশিক্ষিত জনগণ ব্রিটিশের সেই উদ্যোগের মর্ম বোঝেনি সেদিন। সদ্য প্রয়াত আকবর আলি খান এর রচিত "অবাক বাংলাদেশ বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি" নামের একটি গবেষণামূলক বইয়ে এ বিষয়গুলি খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আফসোস যে বাংলাদেশের লোকজন উনার বই সেভাবে পড়েনা।

Cat Lover
cat.lover
137 Points

Popular Questions