Answered 3 years ago
এরশাদ মূলত ভারতের কোচবিহারের লোক। জন্মসূত্রে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় কিন্তু জাতীয়তাসূত্রে তিনি বাংলাদেশি। ভারতের মাটিতে জন্মে বাংলাদেশে বসবাস কিংবা বাংলাদেশের মাটিতে জন্মে ভারতে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম না। এরশাদ তাদের মধ্যে একজন। জীবনের কিশোর বয়স তিনি কাটিয়েছেন কোচবিহারে। তরুন বয়স থেকে আছেন পূর্ব বাংলা বা বাংলাদেশে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জিয়া অংশ নিলেও এরশাদ অংশ নেয় নি এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উনার অবস্থান সব সময় অস্পষ্টই রেখেছেন। তিনি মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষেই ছিলেন। বাংলাদেশ হওয়ার পক্ষে তিনি ছিলেন না। জিয়া যেমন যুদ্ধে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসেবে ছিলেন, তেমনি এরশাদ পাকিস্তানে বসে পশ্চিম পাকিস্তানের হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেন। তিনি শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন।
১৯৭১ সালে যারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলা ও সিলেটে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানে যে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয় সেই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
এরশাদ যুদ্ধের পরে যখন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসে তখন এরশাদকে মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য চাকুরিচ্যুত করা হয়। পরে তিনি লবিং করে নিজের চাকরি ফিরে পান।
শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পরে জিয়া যখন ক্ষমতা নেন তখন জিয়া সেনাপ্রধান হিসেবে এরশাদকে নিযুক্ত করেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজাকার শাহ আজিজকে নিযুক্ত করেন।
এরশাদ ছিলেন ধরি মাছ না ছুই পানি টাইপের রাজাকার। তিনি অন্যান্য রাজাকারদের মতো বরাবরই নিজের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
সেনাবাহিনীর ভিতরে জিয়ার আমলে ব্যাপক অস্থিরতা চলছিলো। একদিকে জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করছিলো। অন্যদিক করছিলো রাজাকার তোষন। সেই তোষন করতে গিয়ে জিয়া এরশাদকে সেনাপ্রধান করেন।
সেনা ছাউনির ভিতরে একসময় কারা যেনো জিয়াকে হত্যা করে। কে হতে পারে? মুক্তিযোদ্ধারা নাকি রাজাকারেরা? নাকি অন্য পক্ষ? কেউ সঠিক জানে না। এই ব্যাপারে কখনো কোনো তদন্তই হয় নি।
তবে এই হত্যাকান্ডের পরে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পান এরশাদ। তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করেন। সেই সময় খালেদা জিয়া নিজের স্বামীর হত্যাকারী হিসেবে এরশাদকে দায়ী করেন। সেটা ধামাচাপা দিতে জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে ১ টাকায় গুলশানের একটি বাড়ি ও ক্যান্টনমেন্টের সরকারী সেনা অফিসারের বাড়ি দেন রাষ্ট্রপতি এরশাদ।
এরশাদের মন্দ কাজগুলো হচ্ছেঃ
১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। রাজাকার ছিলেন বলা যায়।
২. জিয়াকে হত্যার পিছনে এরশাদের কোনো ইন্ধন থাকতে পারে যদিও সেটা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার।
৩. খালেদা জিয়াকে বেআইনীভাবে দুটি সরকারি বাড়ি দেন।
৪. এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে নিজের সম্পদ বহু গুন বাড়িয়েছেন। দূর্নীতির জন্য পরে জেলও খেটেছেন। মহা দূর্নীতিবাজ এক শাসক ছিলেন।
৫. সবচেয়ে ভয়াবহ যে অভিযোগ উনার বিরুদ্ধে সেটা হচ্ছে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম করে তিনি ধর্মকে নিজ স্বার্থে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় নিয়ে এসেছিলেন এবং দেশে ধর্মীয় বিভাজন করে হিন্দু, বোদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের দেশের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক করে রেখেছিলেন। সেই সময় দেশের সকল দল রাষ্ট্রীয় ধর্ম করার বিরোধিতা করেছিলো এবং ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করার বিরোধিতা করেছিলো।
৬. এরশাদ বাংলা সনের তারিখ পরিবর্তন করে ফেলেছিলেন বাংলাদেশে। ১৯৮৭ সালের আগে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা একই দিন ১৫ই এপ্রিল নববর্ষ পালন করতো। এরশাদ এটা পাল্টিয়ে ১৯৬৬ সালের শহীদুল্লাহ কমিটির বিতর্কিত নতুন বাংলা ভূয়া ক্যালেন্ডার অনুসরন করতে শুরু করেন ১৯৮৭ সাল থেকে। সেই থেকে বাংলাদেশ ও ভারতে দুটি ভিন্ন দিনে বাংলা নববর্ষ পালন হয়ে আসছে। বাঙালিকে বিভক্ত করতেই এরশাদ এই পদক্ষেপ নেন।
৭. এরশাদ তার বিরোধীদের দমন করতে ১৯৫২ সালের পাকিস্তানি পুলিশের স্টাইলে রাজপথে লাশ ফেলে দিতো। দেশে মোশতাক, জিয়া, এরশাদ এরা নিজেদের বিরোধীদের নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যা করতো। মোশতাক করেছিলো জাতীয় চার নেতা হত্যা, জিয়া করেছিলো বহু মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা, সেই সাথে শেখ মুজিব হত্যার পিছনেও কলকাঠি জিয়া নাড়ে। এরশাদ করেছিলো বহু রাজনীতিবিদদের হত্যা এবং সাধারন নূর হোসেনদেরও হত্যা করেছিলেন তিনি পুলিশ দিয়ে।
ভালো কাজঃ
১. জিয়া ক্ষমতায় থেকে শুধু খাল কেটেছিলেন। ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের আমলে নেয়া প্রকল্প যমুনা সেতু প্রকল্প ১৯৭৬ সালে ক্ষমতায় এসে জিয়া বাতিল করলে ১৯৮২ সালে এরশাদ সেতু নির্মানের পুনরায় উদ্দ্যোগ নেন। এরশাদের আমলে নির্মান শুরু না হলেও অর্থের যোগানের ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ তিনি নেন। সেতুটির নির্মান ১৯৯৪ সালে শুরু হয়ে ১৯৯৮ সালে শেষ হয়। যমুনা সেতু হওয়ার পিছনে এরশাদের বড় অবদান আছে।
২. দেশের রাস্তা ঘাট করার পিছনেও এরশাদের ভূমিকা তার বিরোধীরাও স্বীকার করবে।
৩. উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
breadrana05 publisher