Answered 3 years ago
১২৫৭ সালের নভেম্বর মাসে বাগদাদ অবরোধ করেন মোঘল শাসক হালাকু খান। চেংঘিস খান এর নাতি হালাকু খান তার মোঘল সেনাবাহিনীকে নিয়ে বাগদাদ রওনা হন। শহরের কাছাকাছি এসে তার মোঘল বাহিনীকে দুইটা ভাগে ভাগ করে দেয় আর টাইগ্রিস বা দজলা নদীর পুব ও পশ্চিম দিক থেকে শহর কে ঘিরে ধরে আক্রমনের হুমকি দিতে থাকেন।
হালাকু সেই সময় খলিফা আল মুস্তাসিম কে আত্মসমর্পণ করতে বলে কিন্তু খলিফা প্রত্যাখ্যান করেন। আবু আলকামা নামক এক বিশ্বাসঘাতক যে আল মুস্তাসিমের একজন উপদেষ্টা ও ছিল তার জন্য বাগদাদ সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়। আর এভাবেই বাগদাদ অবরোধ শুরু হয়।
মোঘল বাহিনী পরিখা খনন করে বাগদাদের সৈন্য দের কে বন্যায় আটকে দেয়। খলিফার বেশিরভাগ সেনাই হয় পানিতে ডুবে মরে নয় তাদের কে স্রেফ জবাই করা হয়।
২৯ জানুয়ারি, ১২৫৮। চৈনিক সেনানায়ক গুও খান এর অধিন মুঘল সৈন্যরা শহরটাকে অবরোধ করে রাখে। এই অবরোধ লোহার বেড়া ও পরিখা খনন করে করা হয়। তারা পাথর ছোড়ার জন্য ক্যাটাপুল্ট আমদানি করে।
ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে মোঘল বাহিনী বাগদাদের প্রাচীর এর একটা বড় অংশ দখলে নেয়। খলিফা মধ্যস্থতা করতে চাইলেও প্রত্যাখ্যাত হন। ফেব্রুয়ারি ১০, বাগদাদ এর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ওই দিন বাগদাদ আত্মসমর্পণ করে।
মোঘল রা ১৩ ই ফেব্রুয়ারি শহরে স্রোতের বেগে ঢুকে পড়ে। এভাবেই শুরু হয় ধংসযজ্ঞ। বাগদাদের বিখ্যাত লাইব্রেরি বাইতুল হিকমা যা অসংখ্য, অগুনতি মুল্যবান ঐতিহাসিক দলিল আর চিকিৎসাবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সহ অন্যান্য বিষয়ের উপর লেখা বিভিন্ন বইয়ের এক অতুলনীয় ভান্ডার, সেই বাইতুল হিকমাকেও মোঘল বাহিনী ধংস করে দেয়। বাগদাদের নাগরিকরা সেইসময় পালাতে যায় কিন্তু মোঘল বাহিনী তাদেরকে আটক করে।
প্রায় মিলিয়ন এর মত মানুষ এই সময় মারা যায়৷ মোঘলরা লুট আর ধংসযজ্ঞে মন দেয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যে সব মসজিদ, প্রাসাদ, লাইব্রেরি, হাসপাতাল গড়ে উঠেছিল তা পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। খলিফা কে আটক করে তার প্রজাদের খুন এবং রাজকোষ লুন্ঠন চাক্ষুষ করতে বাধ্য করে মোঘল বাহিনী।
অধিকাংশ ইতিহাসবিদ এই মুঘল আর মুসলিম তথ্যে বিশ্বাস করেন যে,খলিফা কে মাদুর বা কম্বল দিয়ে জড়িয়ে তার দেহের উপর দিয়ে মোঘল রা তাদের ঘোড়া চালিয়ে দেয়। এইভাবেই তারা খলিফা কে মেরে ফেলে। তারা বিশ্বাস করত যে, মাটিতে রাজার রক্ত পরলে মাটি অসন্তুষ্ট হবে। নিহতদের দুর্গন্ধের জন্য হালাকু খান তার বাহিনী কে বাতাসের উল্টো দিকে নিয়ে যান।
কথিত আছে, ধংস হয়ে যাওয়া বাইতুল হিকমার বইয়ের কালিতে টাইগ্রিস নদীর পানি কালো হয়ে গিয়েছিল৷
এই হলো বাগদাদের ধংসযজ্ঞ সম্পর্কে কিছু তথ্য। আশা করি ভালো লেগেছে আপনার। ধন্যবাদ৷
sumona publisher