সম্প্রতি ইরানে ঘটে যাওয়া মাশা আমিনীর মৃত্যু এবং তৎ-পরবর্তী আন্দোলনকে কিভাবে দেখেন?

1 Answers   8 K

Answered 2 years ago

ইরানে ঘটে যাওয়া মায়শা আমিনীর মৃত্যু ইরানের প্রেক্ষাপটে অতিসাধারণ ঘটনা। কিন্তু তার পরবর্তী আনন্দোলন ইরানে প্রয়োজন ছিলো অনেক আগে যা এখন হচ্ছে , শুধু হিজাব ইস্যুতে নয়। এই আন্দোলন ইরানে হওয়া নারীদের প্রতি হওয়া নানা অন্যায় সামনে তুলে এনেছে। দিনদুপুরে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের আচরণ জানিয়ে দেয় বন্ধ দরজার পিছনে কি করে নারীদের সাথে এরা।

ছবিটি কোন একদিনের প্রেক্ষিতে নয়, ৪০ বছরের ফলাফল। সরকার কোন ঈশ্বর নয় যে কি পরলে পরকালে কোথায় যাবে ঠিক করে দিবে। সর্বোচ্চ উদ্বুদ্ধ করতে পারে শালীনতা বজায় রাখতে। জোর করে যাই হোক ধর্ম পালন হয় না।

যারা ইরানের বাধ্যতামূলক হিজাবকে সমর্থন করে তাদের যুক্তি কি? জোর করে কাউকে জান্নাতে নেওয়া যায়? হিজাব কিংবা বোরকা পরলে ধর্ষিত হবে না তার নিশ্চয়তা দিচ্ছে সরকার? একজন নারী আইনের কারণে হিজাব পরলো কিন্তু ধর্ম মানে না, নামাজ-রোজা করে না, তাকে হিজাব পরানোর মানেটা কি? যে ধর্ম পালন করে সে এমনিতেই হিজাব পরবে, পর্দা করবে, তাকে জোর করতে হয় না। এরফলে আর কিছু হোক আর না হোক ধর্মের প্রতি নেতিবাচক চিন্তা চলে আসছে এবং দেশ ছাড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেদিন Miami State University এর একজন ইরানি শিক্ষিকার লাইভ দেখছিলাম যিনি হিজাব পরে, উনি বুঝ হওয়ার পর থেকে সবসময় হিজাব পরেছে। কিন্তু ইরানে বাধ্যতানূলক হিজাব পরার আইনের কারণে ইরান ছেড়েছে কারণ এটি একটি আতংক। শুধু হিজাব পরলেই হয় না সেখানে মোরাল পুলিশ নামক ইমমোরাল পুলিশ আছে।


গ্রেফতারের আগে মাহশার শেষ ছবি, সে তো হিজাব পরাই ছিলো।

ইরানের নারীদের নিত্যদিনের পোশাক এগুলো। (চিন্তা করুন বাংলাদেশের নারীরা এসব পরা শুরু করেছে)। আমি মাঝে মাঝে ট্রাভেল ভ্লগ দেখি, হিজাব না পরলে বোঝাই যেত না এটা ইউরোপের কোন দেশ না। পৃথিবীর সব নামীদামী ফ্যাশন ব্যান্ডের দোকান আছে ইরানে, ইরানিরা পশ্চিমা পোশাক পরে। তাহলে মাথার উপর জোর করে হিজাব চাপিয়ে দেওয়ার মানেটা কি?

ধর্মের থেকে পুরুষতন্ত্র এবং নারীদের নিয়ে রাজনীতি ইরানে বেশি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৯ এ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে ইসলামি আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামি শাসন নামক শাসন ইরানে প্রতিষ্ঠিত হলেও জনগণ তখনই বুঝতে পেরেছিলো রাজতন্ত্রের বদলে Supreme Leader তন্ত্র চলে এসেছে। রাজা মাফ করলেও Supreme Leader মাফ করে না। ফলে দলে দলে মানুষ ইরান ছাড়তে শুরু করে এবং মানুষের ভেতরে শাসনব্যবস্থার অল্প দিনের মধ্যে মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়। নিজেদের গদি রক্ষায় । Iran Regime তখন মাস্টারট্রোক খেললো; জনসংখ্যার অর্ধেককে নিয়ন্ত্রণ এবং আতংকে রাখা।

১৯৭৯ সালের পর ইরানে আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকর, সরকারের মদদে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, অনার কিলিং, এসিড নিক্ষেপ, জোরপূর্বক বিয়ে, হেনস্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য দেশের ৫০% জনগণকে আতংকে রাখা, আর নারীদের বিরুদ্ধে কোন কিছু গেলে পুরুষের বড় অংশ এমনিতেই তার পক্ষ নেয় সেই নীতি কাজে লাগানো।

ইরানে অকারণে মারা যাওয়া এমন নারীদের লম্বা সারি আছে

এখন দুটি কথা বলে বিদায় হইঃ

১. ধর্ম সবার জন্য, শুধু নারীদের নয়

পর্দা তো পুরুষকেও করতে বলেছে, শুধু চোখের নয় দেহেরও। কখনো তো পুরুষদের হাফপ্যান্ট পরে খেলা নিয়ে কটুক্তি শুনিনি! তারা জাহান্নামে যাবে সেটা কেউ বলে না। তাহলে জান্নাতে যাওয়ার টিকিট কি পৃথিবীতে বসে কেটে দেওয়া হয়?


ধর্মে নিষেধ করা আছে প্রতিটি কাজ বাংলাদেশের পুরুষেরা করে, জনসম্মুখে করে, তাদের তো অনলাইনে ধর্ষণ করা হয় না! একজন পুরুষ যতোই পোশাক না পরুক নারীরা তাকে হেনস্তা করে না, কারণ জন্ম থেকে নারীকে ঠিক আর ভুল শেখানো হয়, যেখানে পুরুষকে শেখানো হয় তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন পুরুষ হয়ে জন্মানো এবং এর সার্থকতা টাকা উপার্জনে।

পৃথিবীতে যদি নাশকতা করা হয় বেশিরভাগ পুরুষেরা করে, বোরকা-হিজাব পরিহিতা খুবই নগণ্য। কিন্তু কখনো শুনিনি দাঁড়ি, টুপির উপর নিষেধাজ্ঞা যা ফ্রান্স-বেলজিয়াম করেছে। অর্থাৎ পশ্চিমে থাকলেই মানসিকতা উন্নত হয় না, নারীদের নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা প্রতিটি জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

২. ইসলাম সমতার কথা বলে, সব মুসলমানেরা নয়

আল্লাহ সবাইকে সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহর সব সৃষ্ট মানুষ সমান। বিদায় হজে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (আঃ) মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূরীকরণের যে বাণী দিয়েছে তা মানবকল্যাণে চিরকাল অনুসরণীয়। খলিফা থাকাকালীন হযরত উমর (রাঃ) কে একটুকরো কাপড়ের হিসাব জনসম্মুখে দিতে হয়েছিলো।

তাহলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে এই ভেদাভেদ কেন? ↓

Ahona Sardar
ahonasardar
463 Points

Popular Questions