Answered 2 years ago
ছেলেদের সাথে কথা বলার পর কিভাবে বুঝবো তিনি লম্পট না হরিশ্চন্দ্র?
শুধু কথা বলে বোঝা সম্ভব কি কোনো একজন মানুষ আদপে কেমন?
যদি সম্ভব হত তাহলে পৃথিবীর ৯০% অপরাধ অনাচার কমে যেত। প্রশ্নে ব্যবহৃত "ছলনাময়ী" ও "ভালো", শব্দ দুটোই আপেক্ষিক এবং তুলনামূলক। তাই আপনার সাথে মেয়েটির ব্যবহার ও আচরণ কেমন হবে তার উপর এই বিশেষণগুলো প্রযোজ্য করা হবে। মেয়েটির ব্যবহার আবার আপনার ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। আপনি এটা তো আশা করতে পারেন না যে আপনি তাঁকে কিল - চড় উপহার দেবেন আর সে আপনাকে আদর করে মিষ্টি খাওয়াবে। প্রতিক্রিয়া জানান দিয়ে বরং সে ঘুষিই মারবে বা মারতে পারে। তখনই সে খারাপ হয়ে যাবে। তাহলে নিজের ব্যবহার আচরণ সুন্দর করুন, পরিস্থিতি সুস্থ রাখুন - তারপরেও যদি কেউ খারাপ আচরণ করেন তাহলে তো বুঝেই গেলেন।
আর ছলনাময়ী? এটা বেশ মজার বিষয়। মেয়েরা যদি সোজাসাপটা ভনিতাহীন কথা বলে তাহলে শুনতে হবে - কি ক্যাটকেটে কথা বলে।ছেলেদের মত কথাবার্তা। অর্থাৎ ঘুরিয়ে "মেয়েছেলে"। মেয়েরা একটু নরম - সরম হবে, একটু ছলাকলা করবে - তবে না মেয়ে।
এবার কোনও মেয়ে যদি ইনিয়ে বিনিয়ে রহস্য করে কথা বলেন, তাহলে শুনতে হবে - ন্যাকার হদ্দ। ছলাকলার শেষ নেই। গায়ে পড়া মেয়ে।পরিশেষে "ছলনাময়ী"। অর্থাৎ ঘুরিয়ে "ছেলেধরা"।
তাহলে কি দাঁড়ালো? যাই করুক না কেন শেষ অবধি "মেয়ে তো" ধাব্বাটা আমাদের কপালে লেগেই থাকবে। যেদিকেই যাই বিচারসভা বসবেই। সুতরাং সোজা হিসাব হল -
মেয়ে সঙ্গ পরিত্যাগ করুন।মাথা খাটিয়ে কে ভালো কে খারাপ, কে ছলনাময়ী কে শান্তিময়ী আবিষ্কারের দরকারই পড়বে না।
নারীসঙ্গ ত্যাগ করা আর পৃথিবী ত্যাগ করা এক বলে মনে হচ্ছে তো? ভাবছেন এই বুড়ি মহিলার ভীমরতি হয়ে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মেয়ে ছাড়া থাকা যায় নাকি? তাহলে থাকতেই যখন হবে তখন এই সব আবোল তাবোল চিন্তা বাদ দিন।
নিজেকে সুস্থ চিন্তায় মানুষ করুন। জীবনে ঠকে যাবেন, প্রতারিত হবেন - এটা ভেবে দিন শুরু করুন। কিন্তু এইগুলো হলে হেরে যাবেন না, আবার নতুন করে জীবনে এগিয়ে যাবেন সেই মনের জোরও রাখুন।
মানুষকে সঠিকভাবে চেনাজানার যদি কোন ফর্মুলা থাকত তাহলে পৃথিবীর চেহারাই আলাদা হত। Quora র জন্মই হয়ত হত না।
অন্যকে চেনার দরকার নেই। নিজেকে বাঁচাতে শিখুন। নিজের স্বার্থ দেখুন। কেউ সম্পূর্ণ ভালো বা খারাপ হন না। পরিস্থিতি পরিবেশ মানুষকে ছলাকলা করতে, ভালো, খারাপ হতে বাধ্য করে।
তাই মানুষের পরিবেশ-পরিস্থিতি-শিক্ষা-রুচি, সর্বোপরি আচরনের দিকে নজর দিন।অন্ততপক্ষে কথার সাথে কাজের মিল থাকে কিনা সেটা লক্ষ্য রাখা খুব দরকার।ইংরাজিতে একটা কথা আছে - " action says more than words" । তাই ব্যবহার ও আচরণ লক্ষ্য করলে কিছুটা হলেও একজন মানুষের পরিচয় পাবেন। তা সে মেয়েই হোক আর ছেলে।
কোনও মানুষ প্রকৃতপক্ষে কি ভাবেন, কি চিন্তা করেন, কি পরিকল্পনা করেন সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। অন্য কারো পক্ষেই তা জানা সম্ভব নয়। কথা বলে তো নয়ই। তবে হ্যাঁ দীর্ঘদিন মেলামেশা করলে বা কথা বলার সাথে সাথে যদি আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তীক্ষ্ণ হয়, জীবনের কিছু কঠিন অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন মানুষটি প্রকৃতপক্ষে কেমন। অন্তত আপনাকে প্রতারিত করছেন কিনা বা মিথ্যাচার করছেন কিনা। এগুলো বলে শেখানো যায় না। নিজেকে বুঝতে হয়।
একটা দরকারি কথা এই বিষয়ে বলব - কখনও কোনও মানুষকেই সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করবেন না। বিশেষ করে নতুন আলাপে শুধুমাত্র মুখের কথায় বিশ্বাস না করে, তাঁর বলা কথাগুলো একটু তলিয়ে দেখবেন যে আদৌ বিষয়গুলো বিশ্বাসযোগ্য কিনা, একটু খোঁজ নিতেও পারেন সত্যাসত্য জানার জন্য। অনেক সময় এই বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা অনেক ভুল বা ক্ষতিকারক তথ্য জানতে পেরে যাই।
ঝোঁকের বশে কিসব যেন লিখে ফেললাম। মূল বিষয় হল একজন মানুষের (নারী - পুরুষ উভয়ই) সাথে কয়েক দশক এক ছাদের তলায় থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়েও আমরা তাঁর বিষয়ে সম্পূর্ণ জানতে বুঝতে পারিনা। সেখানে শুধুমাত্র কথা বলে কাউকে বিচার করাটা অসম্ভবও এবং অর্বাচীনও। তাই এসব চিন্তা ছেড়ে নিজেকে সুন্দর ব্যক্তিত্বের সুন্দর মননের প্রকৃত শিক্ষিত মানুষের মত মানুষে পরিণত করুন। বাকিসব এমনিই বুঝে যাবেন। মেয়েরা আলাদা গ্রহের প্রানী নন। অতিমানব ও নন। কারো সাথে তাঁদের তুলনা না করে প্রত্যেক নারীকে তাঁর নিজস্বতায় চিনুন। দেখবেন জীবন খুব কঠিন নয়।
zahirahmed publisher