মাকাল ফল কী?

1 Answers   8.6 K

Answered 3 years ago

‘ওপরে ভালো ভেতরে কালো’-প্রবাদটার সংক্ষিপ্ত রূপ মাকাল ফল। ছোটবেলায় দাদি-নানির মুখে কতবার একথা শুনেছি।

‘কেন এমন বলা হয়?’ শুধোতাম দাদিকে।

‘মাকাল ফল দেখতে খুব সুন্দর।’ জবাবে বলতেন দাদি। ‘ঠিক যেন আপেলের মতো। তাই বা বলি কেন? আপেলের চেয়েও সুন্দর। কিন্তু ভেতরটা একেবারে যাচ্ছেতাই। যেন বিড়ালের বিষ্ঠা!’


‘কোথায় পাওয়া যায়?’

‘মাঠে?’

‘কই, দেখি না তো?’

‘আজকাল কি ওসব বালাই পোষে কেউ! কোথায় হারিয়ে গেছে সেসব গাছপালা।’


আসলেই হারিয়ে গেছে। মাঠ-ঘাট, বন-জঙ্গল দাপিয়ে বেড়িয়েছি, ‘কোনোদিন আপেলের মতো কোনও ফলের দেখা পায়নি। হঠাৎ এক দিন রাখালের হাতে দেখি সুন্দর মতো কয়েকটা ফল। মাঠ থেকে পেড়ে এনেছে ও। দাদি বললেন, ‘এই হলো মাকাল ফল।’

সত্যি ভারি সুন্দর ফলটা। দেখলেই কামড় দিয়ে খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু খাওয়া চলে না। ছোট ছোট দুই চাচাতো ভাই ফলগুলো নিয়ে খেলল দিনভর। আমি তক্কে তক্কে আছি, কখন ওদের আগ্রহ ফুরায়। পর দিন সকালে দেখি উঠোনে গড়াগড়ি খাচ্ছে ফলগুলো। এই সুযোগ, একটা নিয়ে ফাটিয়ে ফেললাম। তারপর ‘ওয়াক থু!’ সত্যিই খুব বিশ্রী ভেতরটা। দাদি যথার্থই বলেছেন। ঠিক যেন বিড়ালের বিষ্ঠা।


এরপর কেটে গেছে এক দশক। শহরেই থেকেছি বেশির ভাগটা। মাঝে মাঝে গ্রামে যাই। কিন্তু মাকাল ফলের নাগাল আর পাইনি। এখন তো ঢাকায় থাকি। বাড়ি যাওয়া হয় বছরে দুবার-কি তিনবার। তখন রাতে ঘুম। দিনের বেশির ভাগ সময় মাঠে-ঘাটেই কাটে। মাকাল ফলের দেখা আর পাই না। আসলে ওর কথা ভুলেই গেছি।

আমি ঢাকায় থাকি, কিন্তু তিন-চার জোড়া চোখ গ্রামের জলাজঙ্গল খুঁজে ফেরে বুনো গুল্ম-লতা। এরা আমার সাগরেদ। চাচাতো-খালাতো ভাই।

২০১৪ সালের কোরবানী ঈদ। বাড়ি গিয়ে শুনলাম সুসংবাদটা। আমার খালাতো ভাই সাহেদ নাকি মাকাল ফলের একটা আড়ৎ দেখে এসেছে সরিষাঘাটের মাঠে। সরিষাঘাট আমাদের পাড়া থেকে দু-কিলোমিটার দূরে। আঁট-ঘাট বেঁধেই যেতে হবে।

তবে ভয় একটা আছে। সাহেদ দেখে এসেছে বর্ষাকালে। এখন শরতের শেষ প্রায়। এতদিনে গাছ মরে গেছে কিনা সন্দেহ।

ঈদের তৃতীয়দিন। শাহেদের বড় ভাই পারভেজকে নিয়ে চললাম সরিষাঘাট। সাইকেলে।

পিসরাস্তা আর বাওড়ের মাঝখানে জঙলা একটা গর্ত। বুনো গুল্ম লতায় ঠাঁসা। গর্তের ভেতর মাঝারি আকারের একটা মেহগনি আর একটা শিশু গাছ। সেই গাছদুটে বেয়ে, জড়িয়ে-কুড়িয়ে উঠেছে হাজার লতার একটা উদ্ভিদ। এটাই আমাদের চরম প্রার্থিত মাকাল ফলের গাছ। মাকালের লতা-পাতায় চাপা পড়ে গাছদুটোর ‘ত্রাহি মধুসূদন’ অবস্থা।

সাইকেলটা রেখে নেমে পড়লাম গর্তের ভেতর। দু-’ভাইয়ের চারচোখ তন্ন তন্ন করে ঘুরল মাকালের লতায়-পাতায়। সম্পূর্ণ হতাশ। একটা ফলও নেই। পারভেজ হাল ছেড়ে দিয়েছে। বলল, ‘এখন বোধহয় ফল আর পাওয়া যাবে না।’

আমি বললাম, ‘ধৈর্য ধর, একটা না একটা পাবই। একবার একটার দেখা পেলে অন্যগুলোও সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসবে, দেখিস।’

অনেক খোঁজাখোঁজি করেও যখন পেলাম না, তখন বললাম, ‘চল, গর্তের ওধারে যাই। ওই দিকে আরেকটা গাছ দেখছি শিশুগাছ বেয়ে ওপরে উঠেছে।

বুনোকাঁটার খোঁচা খেয়ে, কাঁটা ঝোপঝাড়ের মুড়িতে গোত্তা খেয়ে অনেক কষ্টে আবার গর্ত ছেড়ে ওপরে উঠলাম। ফল শূন্য! কিছুক্ষণের জন্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর ইউরেকা! প্রথম ফলটা আমিই দেখলাম। আধাপাকা হলুদ রঙের রপবান ফল! তারপর আমার ভবিষ্যদ্বাণীই সত্যি হলো। একে একে কাঁচা-পাকা, বড়-ছোট মাঝারি ফলগুলো আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এলো।



Jannatul
jannatul
485 Points

Popular Questions