Answered 3 years ago
এক কথায় বললে, সেটা হল প্লাস্টিক! সেটাও আবার মহাসাগরের সবচেয়ে গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চে!! আর তা দেখেই বিজ্ঞানীরা হতবাক!!! কিন্তু প্লাস্টিক তো আর কোন ভিনগ্রহের বস্তু নয়, প্লাস্টিক দেখে হতবাক হওয়ার কি আছে?
চলুন বিষয়টা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
👉 প্লাস্টিক কি?
প্লাস্টিক এমন একটা বস্তু যা কোন সিন্থেটিক বা আধা-সিন্থেটিক জৈব যৌগ দ্বারা তৈরি। কম খরচ,সহজে উৎপাদন এবং প্লাস্টিকের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য এর উৎপাদন এবং ব্যবহার প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে।
👉 আবিস্কার
ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে জন্ম নেওয়া 'আলেকজান্ডার পার্কস' ১৮৫৫ সালে পার্রকসাইন আবিষ্কার করেন।পার্রকসাইনকে প্রথম মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
👉 প্লাস্টিকের উপকারিতা
মানুষের প্রয়োজন মেটানোর তাগিদেই প্লাস্টিকের আবিস্কার,আবিস্কারের পর থেকে এর সহজ ব্যবহার,সহজলভ্যতার জন্য আমরা পুরোপুরি প্লাস্টিক নির্ভর হয়ে গেছি। প্লাস্টিকজাত পণ্য যেমন- টুথব্রাশ, চিরুনি, চশমা, জুতা, স্যান্ডেল, মোবাইল সেট, কলম, স্যানিটাইজারের কনটেইনার, খনিজ পানির বোতল সবই প্লাস্টিক। শুধুমাত্র ভ্রমণকালেই যে পাতলা প্লাস্টিকের গ্লাসে পানি, চা, কফি খাওয়া হচ্ছে তা নয়, ক্রোকারিজ, কাটলারিজ ধোয়ামোছার ভয়ে এখন বাসাবাড়িতে ও প্লাস্টিকের একবার ব্যবহৃত সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে সরবরাহকৃত রেডিমেড খাবারের পুরোটাই পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর সাহায্যে প্যাকেট করা হচ্ছে। বাসাবাড়িতে মসলাপাতিসহ রান্নার বিভিন্ন সামগ্রী প্লাস্টিক কৌটায় আবদ্ধ। বালতি, ড্রাম, পানি সংরক্ষণের ওভারহেড ট্যাংকি, পিভিসি পাইপ, পানির ট্যাপ ইত্যাদি প্লাস্টিকের তৈরি।এক কথায় আমাদের পক্ষে এসব সামগ্রী ছাড়া জীবন ধারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
⚠️⚠️⚠️⚠️প্লাস্টিকের অপকারিতা ⚠️⚠️⚠️⚠️
আমরা এতক্ষণ যে প্লাস্টিকের উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম, তার সকল উপকারী দিকের চাইতে এর ক্ষতিকর দিক এতটাই বেশি, এতটাই বেশি, যে তা সমগ্র জীব জগতের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা পরিবেশে পচতে অথবা কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রচুর সময় লাগে ৷ তাই একে "অপচ্য পদার্থ" হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তাই প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে ৷ সাধারনত উদ্ভিদকূল, জলজ প্রাণী, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণীরা প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে৷ প্লাস্টিক বর্জ্য ঐসকল প্রাণীর বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রহের স্থান ও উদ্ভিদের খাদ্য গ্রহণের পথে বাধার সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণী নয়, মানুষ নিজেও প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমরা আমাদের অসচেতনার জন্য ব্যবহার শেষে ব্যবহৃত প্লাস্টিক যত্রতত্র ছুড়ে ফেলি,আর ব্যবহৃত প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ বিভিন্ন ভাবে নদী হয়ে সাগরে পতিত হচ্ছে।যা সাগরের সবচেয়ে গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চে ও গিয়ে পৌছেছে। যা সাগরের জীববৈচিত্র্যের উপড় ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বলাবাহুল্য সামুদ্রিক প্রাণীর উপর প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সামুদ্রিক কচ্ছপের মৃত্যু প্লাস্টিক দূষণের কারণে ঘটছে ৷ সম্প্রতিকালে কিছু মৃত তিমির পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক পাওয়া গেছে৷ যখনই এমনটা ঘটে, তখন ঐসব প্রাণী ক্ষুধায় ভোগে কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য তাদের পরিপাকতন্ত্রকে বন্ধ করে দেয় ৷ এতে প্রাণীর মৃত্যুও ঘটে ৷ এছাড়াও সামুদ্রিক ছোট মাছের পাকস্থলীতে প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে ৷ তাই প্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। আর বিজ্ঞানীরা যখন জানতে পারল এই প্লাস্টিক মহাসাগরের মহা- গভীরতম মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও পৌঁছাতে বাকি নেই! তখন তারা হতবাক হয়ে গেল।
👉 পরিশেষে আমরা একটি কথাই বলতে চাই যে, আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটিকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদেরই, আসুন না,
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে পৃথিবীটাকে একটু সুন্দর রাখার চেষ্টা করি। যদিও আপনি আমি ব্যক্তিগত ভাবে, প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ থেকে এই পৃথিবীকে বাঁচাতে পারবনা, কিন্তু যদি আমরা মাত্র একটি প্লাস্টিকের টুকরোর ও কম ব্যবহার করতে পারি, একটি পলিথিন ব্যাগ ও কম ব্যবহার করি তাহলেও মনে রাখবেন, এই একটি বাড়তি প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ থেকে বেঁচে যাবে আমাদের পৃথিবী। আসুন নিজে বেঁচে থাকি,অন্যকেও বাঁচতে দেই। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
👉 বিঃদ্রঃ আশার কথা হল বিজ্ঞানীরা অতি সম্প্রতি এক ধরণের প্লাস্টিক খেকো ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন বলে জানা গেছে। যদি তারা সফল হয়,তাহলে আমাদের জন্য সেটা অনেক আনন্দদায়ক খবর হবে। বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে দেখুনঃ-
surdhasuraiya publisher