ভারতে অনেক মুসলমানকে মূর্তি পূজার অনুষ্ঠানে দেখা যায়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

1 Answers   14.1 K

Answered 3 years ago

আমি ভারতীয় মুসলিম নই, হিন্দু। কিন্তু আমার অগুনিত মুসলিম বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, পরিচিত রয়েছেন। প্রশ্নের অভিযোগ দেখে মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে মারামারি লাগানোর প্রচেষ্টা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এটি একটি বিফল প্রয়াস।

ভারত এক বিচিত্র জায়গা। এরকম জায়গা বিশ্বে অনেক কম আছে, যদি আদৌ থেকে থাকে তাহলে। রসায়নে যাকে বাফার বলা হয় সেই বস্তুটিকে যদি দেশের আকার দেওয়া হয় তাহলে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে ভারত। আপনি চাইলেও ভারতে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারবেন না। আপনার আনন্দ ও দুঃখে একগাদা লোক ঝাঁপিয়ে পড়বে। সেখানে আপনি ধর্মের বাতুলতা করার সময় খুব কম পাবেন।

এবার আসি মূল প্রশ্নে। ভারতে কি মুসলিমরা মূর্তিপূজা করেন? এর সাধারণকৃত উত্তর হচ্ছে- "না"। ভারতে মুসলিমরা এমন কিছুই করেন না যাতে ওনারা ধর্মসংকটে পড়তে পারেন। ভারতের মুসলিমরা বিশ্বের কোন অংশের মুসলিম থেকে এক বিন্দুও কম ধার্মিক নন। ইসলাম ধর্মের জ্ঞানপিঠ গুলোর মধ্যে অনেকগুলো ভারতে অবস্থিত। ইসলাম ধর্মের অনেক বড় বড় পন্ডিত জন্মগ্রহণ করেছেন ভারতে। তাই ওনারা নিজেদের ধর্ম জানেন না এটি একটি হাস্যকর অভিযোগ।

এবার কথা হচ্ছে ভারতীয় মুসলিমরা কি অন্যধর্মের উৎসবে যোগদান করেন? অবশ্যই করেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে ভারতে একক ধর্মীয় উৎসব বলে কিছু নেই। যা আছে তা সবার। আপনার বন্ধুর বাড়িতে ঈদে বিরিয়ানি হবে আর আপনি যাবেন না, বড়দিনে কেক খাবেন না, দুর্গাপুজোতে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে ফাস্টফুড খাবেন না; এ অসম্ভব। বিষয়টি এতটাই সাধারণ যে আলাদা করে ভাবতেও হয় না, সব অটোমেটিক। আমাদের মূলকথা হচ্ছে যত বেশি উৎসব তত বেশি মজা।

এই যেমন ধরুন ভারতে অনেক দুর্গাপুজোর কমিটিতে মুসলিমরা থাকেন, আমার জানাশুনা এক পুজোতে একজন চাচা থাকেন ক্যাশিয়ার। ক্যাশিয়ার থাকা আর পুজো করা কি এক কথা?

এই যেমন আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ভেতরেই রয়েছে দরগা। সেখানে প্রতিবৎসর পীরের উৎসব হয়। কয়জন মুসলিম আছেন প্রতিষ্ঠানে? কমিটির অর্ধেক লোকই হিন্দু নয়তো শিখ। এবার? আবার এই দরগা থেকে গুনে গুনে ২০-২৫ বার পা ফেললেই পৌঁছে যাবেন রোমান ক্যাথলিক চার্চে। সেখানে আমাদের যাওয়াতে কে না-খুশ হচ্ছে? উৎসবে অংশগ্রহণ করা আর ধর্ম পালন করা দুটো আলাদা বিষয়।

আমাদের হোস্টেলের কথা ধরুন। এখানে ছাত্র আছে প্রায় একশো জন। মুসলিম বড়জোড় ১৫ জন। বাকি খ্রিস্টান, শিখ, জৈন আর হিন্দু। কিন্তু মাংস সরবরাহ করে জুবের চিকেন/ ববি চিকেন। দুটোই হালাল মাংস দেয়। এমন নয় যে এখানে হিন্দুদের মাংসের দোকান নেই; আছে। কিন্তু সবার যাতে সুবিধা হয় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গুরুদ্বার এ গিয়ে দেখুন, প্রচুর লোক করসেবা করছে যারা শিখ নয়। তো? ধর্মীয় সহাবস্থান ই ভারতের মূল ভিত্তি। এবার কথা হচ্ছে ভারতে যে দাঙ্গা হয় সেগুলো কি? ১৫০ কোটি লোকের গণতান্ত্রিক দেশে একটু আধটু মারপিট যদি না হয় তাহলে তো মনেই হবে না আমরা মর্ত্যে আছি; মনে হবে স্বর্গলোক। গণতন্ত্র থাকায় দেশে বওয়াল দেওয়া যায়; আর বিশ্ব সেই বাওয়াল দেখতে পায়। অধিকাংশ দাঙ্গায় যে লোক আগুন লাগায় তারা দেখবেন হয় অশিক্ষিত নয় রাজনৈতিক দলের লোক। একদম সিম্পল। কোরা যদি বিএনবিএর না দেয় তাহলে আমি এই লোক গুলোকে "ক্ষুদ্রলোক" বলে ডাকতাম।

তবে সব ব্যাপার একদম গোলাপী নয়। সমস্যা আছে। সব থেকে বড় সমস্যা যদি কিছু থাকে তা হচ্ছে শিক্ষার অভাব। এতো এতো স্কুল খোলার পরও মুসলিম সমাজ বাকি ধর্মীয় লোকেদের তুলনায় শিক্ষায় পিছিয়ে আছেন। এর সমাধান কি? সমাধান হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের একদম পাত্তা না দেওয়া, যে যে কোন দলেরই হোক না কেন। যারাই ভোট চাইতে যাবে তাদের বলতে হবে আমাদের কিচ্ছুটি চাইনা শুধু আমাদের পাড়ায়/গ্রামে স্কুল কলেজ বানিয়ে দাও। বাকি যা প্রয়োজন সব আমরা নিজেরা বানাবো। আর বুঝতে হবে আধুনিক বিজ্ঞানের কোন বিকল্প নেই, পরিশ্রম এর কোন বিকল্প নেই। অতএব পড়াশুনা করতেই হবে। আর সেটাও কো-এড স্কুলে। সব ধর্মের, বর্ণের লোকেদের সাথে।

বাকি রইলো অভিনেতা অভিনেত্রীরা। ওনারা ধার্মিক লোকের রোলমডেল নন। ওনাদের দেখে সাধারণ মানুষ কেমন হয় তা অনুমান লাগানো হচ্ছে সয়া চাপ খেয়ে চিকেন চাপ খেতে কেমন তা অনুমান লাগানোর সমান।

Sumona
sumona
259 Points

Popular Questions