ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে এনে ব্যবসা শুরু করতে চাই। ১ লক্ষ টাকায় কিভাবে ও কোন পণ্য দিয়ে শুরু করা যায়?

1 Answers   11.5 K

Answered 3 years ago

এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতাম না, কিন্তু প্রশ্নকর্তার প্রতি সম্মান জানাতে কিছু লিখছি।

আমার প্রথম পরামর্শ হলো ২০২০ সালে এক লক্ষ টাকা এতোই কম যে আমি কাউকে এই পরামর্শ দিতেই চাই না। যদি পারেন তাহলে এক নম্বরে আপনার নিশ্চিত গ্রাহক কে বা কারা তাদের কাছ থেক অগ্রীম অর্ডার নেন আর সম্ভব হলে অন্ততঃ ৩০% এডভান্স দিতে বলেন। তারপর অর্ডার প্লেস করেন। নিজে ভ্রমণ করতে গেলে যা খরচ হবে তা পুষাতে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার অর্ডার দরকার।

আমার এক ভাইপো আছে, নিতান্ত ছাপোষা মানুষ, জামা সেলাই করে। তাকে একটা বড় হোটেল কর্মচারীদের ইউনিফর্ম বানাতে ১২০ লাখ টাকার অর্ডার দেবার পর ৪০ লাখ টাকা এডভান্স নিয়ে তারপর কলিকাতা গিয়ে কাপড় কিনে কাপড়ের বান্ডিল সাথে নিয়ে ট্রেনে করে ফিরেছে, যদিও গিয়েছিল বিমানে চেপেই। এমন ধরণের অর্ডার না থাকলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করা যায় না।

আপনি যদি ট্রেনে করে ভারতে যান, আর মাল যা কিনবেন নিজে সাথে করে নিয়ে এসে নিজে টাকা গুণে নিয়ে বেচতে পারেন, তাহলে বলি আগে কি মাল বেচবেন আর কার কাছে বেচবেন ঠিক করুন। একদম খাঁটি সোনার অলঙ্কার লস দিয়ে বেচতে বাধ্য হবেন যদি আপনি আগে থেকে সব ঠিক না করে যান।

আমার কাছে ২০ লাখের ও কিছু বেশি টাকা একদম পড়ে আছে, কিন্তু আমি ব্যবসায়ী লোক নই, আর কাউকে বিশ্বাস করার কারণ দেখি না। টাকা তাই ব্যাঙ্কেই পড়ে আছে। আপনি যদি ব্যবসা জানেন, তাহলে যাদের হাতে টাকা পড়ে আছে তাদের সাথে আল্প করে লাভের অংশ দেবার চুক্তিতে টাকা নেন, কাগজে কলমে লিখে,আদালতে প্রমাণ করা যাবে এমন সব দলিলাদি বানিয়ে। কিন্তু আপনি কি ব্যবসা জানেন? কোন ব্যবসা জানেন?

আমার এক শ্যালিকা নিতান্তই বাঁশ আর বেত দিয়ে বানানো কিছু মোড়া জাতীয় জিনিস কানাডায় রফতানি করে দেড় কোটী টাকা আয় করেছে, কিন্তু একটা মাত্র চালান পৌঁছাতে তার লেগেছে চার মাস, আর টাকা আদায় করতে লেগেছে ১১ মাস। আমি যা বুঝলাম শেষ পর্যন্ত এর থেকে তার লাভ হয়তো হবে ৩৫-৩৬ লাখ টাকা। তের মাস চাকরি করে এই টাকা সে পেতো না, কিন্তু আমি জানি সে চাকরি করার সময় মাসে ১৬০,০০০ বেতন পেত। দারুণ চাল্লু নারী, তার এই অবস্থা।

কিছু শুরু করার আগে অবশ্যই কয়েকটি ব্যাঙ্কে যাবেন, ঋণ পাবার শর্ত কি জেনে নেবেন আর শর্ত পূরণের জন্য ধাপে ধাপে আগাবেন। ব্যাঙ্ক ঋণ না নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা করাই উচিত হবেনা।

সব ব্যবসায়ে গোপন গোমর আছে, না জেনে কিছু শুরু করবেন না।

আপনার নিজের ব্যাক্তিগত পূঁজি ৫০ লাখ টাকা না হওয়া পর্যন্ত এক পয়সার মাল বাকিতে বেচবেন না, চেষ্টা করবেন মালের ৯০% অগ্রীম অর্ডারে ডেলিভারি দেবেন, ৩০% এডভানস নেবেন। অন্যদের চেয়ে কমদামে দেবেন, কিন্তু মাল বিক্রি হবে।

কিনার সময় নিজে সমস্ত মাল যাচাই ও পরিমাপ করবেন।

নিজের মা-বাপ থেকে শুরু করে পীর-ফকির সহ কাউকে এক পয়সা ধার দেবেন না। কেউ ধার চাইলে ব্যঙ্কে যেতে বলবেন। ব্যঙ্ক যাকে টাকা দেয় না, তার টাকা পাওয়ার অধিকার নাই।

যেদিন আপনার নিজের পুঁজি ৫০ লাখ টাকা ছাড়াবে, সেদিন এর অতিরিক্ত থেকে কিছু ধার দিতে পারেন কিছু রিস্ক নিতে পারেন।

আমি খুব উৎসাহ দেইনি বলে রাগ করবেন না। দুনিয়া খুব খারাপ যায়গা।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।


Ripon Mollah
riponmollah
502 Points

Popular Questions