Answered 3 years ago
এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় কেনো বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই- এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলছে না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বায়নের ব্যাপার থাকে। যেখানে বিদেশি ছাত্র থাকবে। মাল্টিকালচারাল ব্যবস্থা থাকবে। বিদেশি শিক্ষক থাকবে। আমাদের দেশে শিক্ষকদের গবেষণা নেই বললেই চলে। আমাদের অধ্যাপকদের যোগ্যতা নিয়ে বিদেশে একজন ব্যক্তি সহকারী অধ্যাপক হতে পারেন না। এরকম পরিস্থিতি যদি হয় তাহলে আমরা কীভাবে র্যাঙ্কিংয়ে আসবো? আমাদের ছাত্ররা যেভাবে আবাসিক হলে থাকে যেটি বস্তির জীবন। ছাত্রদের হল থাকবে অলমোস্ট থ্রি-স্টার হোটেলের মতো। ছাত্ররা যদি বস্তির জীবনযাপন করে তাহলে পড়াশুনা কীভাবে করবে?”
“ক্যাম্পাসে হাঁটলে কি মনে হয় আমরা কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হাঁটছি? ক্যাম্পাসে থাকবে মনোরম পরিবেশ। সুন্দর গাছ-গাছালি থাকবে। সবকিছু পরিপাটি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। তা কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাওয়া যায়? এসব কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে বিশ্ববিদ্যালয় না। এখানে কিছু ভবন আছে, কিছু শিক্ষক আছে। শিক্ষকরা সারাদিন শুধু রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকেন। গবেষণা, পড়াশুনার মধ্যে কি কেউ রয়েছেন?”
“প্রতিবেশী নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় রয়েছে। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ চমৎকার। সেখানকার ছাত্রাবাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো ছাত্রাবাসের চেয়ে উন্নত। নেপালের শিক্ষকরা রাজনীতি নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকেন না। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকটি বিভাগ থেকে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী আমেরিকায় যায়, সারা বাংলাদেশ থেকেও অতো শিক্ষার্থী আমেরিকায় যায় না।”
“ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি বাজেট দেওয়া হয়। শুধু নেপাল নয়, শ্রীলঙ্কার কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ও সেই তালিকায় রয়েছে। কিন্তু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এটি আমাদের জন্যে লজ্জার।”
“পাকিস্তানের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় রয়েছে। ইমরান খান ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী ভবনকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বানানোর জন্যে দান করেছেন। তার লক্ষ্য হলো একটি বিশ্বমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করবে ওখানে। ওখানকার শিক্ষকরা ভারতীয় শিক্ষকদের চেয়ে বেশি বেতন পান।”
“সেই প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কী অবস্থা?- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যান তারা কেউই শখ করে যান না। ঢাকার যানজট পেরিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যাওয়াটা কোনো আরামের কাজ না। তারা বাধ্য হয়েই যান। শিক্ষকদের বেতন যদি সেভাবে দেওয়া হতো আর যদি নিয়ম বেঁধে দেওয়া হতো যে এরপর আর কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারবেন না, গবেষণা করতে হবে, আর গবেষণার জন্যে টাকা দেওয়া হতো, তাহলে কেউ যেতেন না। গবেষণা করলে যদি পুরস্কৃত করা হতো, আর না করলে যদি শাস্তি দেওয়া হতো কেউ আর খণ্ডকালীন পড়াতে যেতেন না। সবকিছু মিলিয়ে একটি পরিবেশ যদি দেওয়া যায় তাহলে এর সুফল পাওয়া যাবে।”
তাহলে আমাদের মূল সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা হল শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগের অভাব। ইউনেস্কোর পরামর্শ- জিডিপির অন্তত ৫.৫ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ করলে এটি দেশ উন্নত হতে পারে। আমরা গত ২০ বছর যাবত জিডিপির ১.৮ শতাংশ থেকে ২.১ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ করি। যেখানে নেপাল ৩.৪ শতাংশ বরাদ্দ করে। শিক্ষায় আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন বরাদ্দ দিয়ে থাকি। এমনকী, সারা পৃথিবীতেও সর্বনিম্ন। আফ্রিকার দেশগুলোও আমাদের চেয়ে শিক্ষাখাতে বেশি বরাদ্দ দেয়।”
-অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন(DU)
Arif Khondokar publisher