Answered 2 years ago
বিল্ডিং এর বেইজ ডিজাইন করার আগে
অবশ্যই বিল্ডিং এ আগত লোড সম্পর্কে অবগত হতে হয় ।
যেসব লোডগুলো অবশ্যই হিসাব করা উচিত,
সেগুলো নিয়েই আজকের আলোচনাঃ
১। ডেড লোডঃ কাঠামোর উপর স্থায়ীভাবে চাপানো লোডই হলো ডেড লোড।
যেমন- ছাদ, বীম, দেয়াল, কলাম, স্থায়ী যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ।
কাঠামো, মালামালের আকার-আকৃতির মাধ্যমে এ লোডের হিসাব করা হয় ।
২। লাইভ লোডঃ কাঠামোর উপর অস্থায়ীভাবে চাপানো লোডই হলো সচল লোড । যেমন- লোকজন, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ।
সঠিকভাবে এ লোডের হিসাব করা কঠিন ।
তাই বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এসব লোড হিসাব করা হয় ।
৩। উইন্ড লোডঃ কাঠামোর বাইরের পৃষ্ঠে ঝড়, বাতাস ইত্যাদির কারনে
উদ্ভুত লোডই, উইন্ড লোড ।
কাঠামোর যেদিকে বাতাস লাগে, সেদিকে ভিত্তির উপর চাপ কমে যায়
এবং অপরদিকে চাপ বেড়ে যায় ।
এ লোডও বিল্ডিং কোড অনুযায়ী হিসাব করা হয় ।
৪। মাটির চাপঃ কাঠামোর উপর মাটি কর্তৃক প্রদত্ত চাপকেই মাটির চাপ বলে ।
র্যানকিনের সূত্র অনুযায়ী এ চাপ হিসাব করা হয় ।
৫। পানির চাপঃ যখন কোন ভিত্তি পানি তলের নিচে অবস্থিত থাকে,
তখন পানি ঐ ভিত্তিকে আনুভূমিক ও উর্দ্ধমুখী চাপ প্রয়োগ করে ।
এটাই পানির চাপ ।
৬। ভূকম্পন লোডঃ ভূ-কম্পন জনিত কারনে সৃষ্ট বল
সাধারনত ভিত্তিতে উলম্ব নিচের দিকে বা
মোচড়ানোভাবে যে কোন দিকে কাজ করে ।
ভূ-কম্পন বল বাংলাদেশের জন্য খুবই হুমকি সরূপ ।
তাই এটিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত ।
৭। তুষার লোডঃ শীত প্রধান দেশে সমতল পৃষ্ঠে বা ছাদে প্রচন্ড বরফ পড়ে ।
তাই এসব দেশে এই লোডেরও হিসাব করা হয় । ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নির্দেশনা গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
নতুন বিল্ডিং বা কাঠামো নির্মাণ করার ক্ষেত্রে করণীয়:
১। যে কোন বিল্ডিং-এর নকশা তৈরি করার পূর্বেই স্ট্রাকচারাল নকশার বিধিগুলোর অনুসরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সঠিক স্ট্রাকচারাল নকশা না হলে ভূমিকম্পরোধক বিল্ডিং হবে না।
২। বিল্ডিং ডিজাইনের আগেই অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা মাটির গুনাগুণ বিশ্লেষণ ও মাটির ধারণক্ষমতা নির্ভুলভাবে নির্ণয়পূর্বক রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।
৩। বিল্ডিং নির্মাণের সময় অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) তদারকি রাখতে হবে যাতে গুণগত মান ঠিক থাকে।
৪। সঠিক অনুপাতে গুনগতমানের সিমেন্ট, রড, বালির ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। কংক্রিটের চাপ বহন ক্ষমতা কোনো অবস্থাতেই ৩০০০ পিএসআই-এর নিচে নামানো যাবেনা । তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নির্মানাধীন সাইটে দায়িত্বে নিয়োজিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরকে কিউব অথবা সিলিন্ডার টেস্ট করতে হবে। কংক্রিটের মিক্সাচারে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ঢালাই’র পরে পানির ব্যবহার করে কংক্রিটের কিউরিং করতে হবে।
৫। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রড পরীক্ষাপুর্বক ব্যবহার করতে হবে। রডের বহন ক্ষমতা ৬০ হাজার পিএসআই-এর কাছাকাছি থাকতে হবে। স্ক্র্যাপ বা গার্বেজ থেকে প্রস্তুতকৃত রড ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে ।
৬। বিল্ডিং-এর প্ল্যান ও এলিভেশান দুই দিকই সামাঞ্জ্য থাকতে হবে।
৭। নির্ধারিত ডিজাইনের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ফ্লোর নির্মাণ করবেন না। বিল্ডিং কোড অনুসারে এক্সপানশান ফাঁক রাখতে হবে।
৮। বেশি পরিমান সরু ও উঁচু বিল্ডিং-এর পাশ হঠাৎ করে কমাবেন না। যদি কমাতে হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।
৯। বিল্ডিং-এর উচ্চতা যদি ভবনের প্রস্থের ৪ (চার) গুণের অধিক হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক ডাইমানশন বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।
১০। ‘সেটব্যাক’ বা হঠাৎ করে বিল্ডিং-এর পাশের মাপঝোপ কমানো যাবেনা। যদি কমাতেই হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক বিশ্লেষণ করে সাইট অ্যাফেক্ট জেনে ডিজাইন করতে হবে।
১১। জটিল কাঠামোগত প্লানের জন্য অবশ্যই ত্রিমাত্রিক ভূমিকম্প বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।
১২। ‘শেয়ার ওয়াল’ বা কংক্রিটের দেয়াল সঠিক স্থানে বসিয়ে ভূমিকম্পরোধ শক্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে।
১৩। সা¤প্রতিক সময়ে যে হারে ঋষধঃ চষধঃব ইঁরষফরহম ঝুংঃবস (বিম ছাড়া কলাম ও স্ল্যাব) বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে, তা মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলেই ধ্বসে যাবে। সুতরাং বিম, কলাম ও স্ল্যাব বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করতে হবে।
১৪। দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ারকে “বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড” অনুসরণ করে বিল্ডিং-এর প্ল্যান/ ডিজাইন করে ভূমিকম্প রোধক বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে।
১৫। নিচের তলা পার্কিং-এর জন্য খালি রাখতে হলে, ঐ তলার পিলারগুলো বিশেষভাবে ডিজাইন করতে হবে। প্রয়োজনমতো কংক্রিটের দেওয়াল দিয়ে পিলারগুলোতে বেষ্টনীবদ্ধ করতে হবে।
১৬। বিল্ডিং-এর ‘বিমের’ থেকে ‘পিলারের’ শক্তি বেশি করে ডিজাইন করতে হবে। কমপক্ষে ২০% বেশি করতে হবে।
১৭। মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে যথাযথ ফাউন্ডেশন প্রকৌশলগতভাবে যাচাই বাছাই করে ডিজাইন করতে হবে।
১৮। ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়ালগুলো ভূমিকম্পের জন্য আদৌ নিরাপদ নয়। তাই এই দেয়ালগুলো ছিদ্রযুক্ত ইটের ভিতরে চিকন রড দিয়ে আড়াআড়ি ও লম্বালম্বিভাবে তৈরি করে ‘লিন্টেলের’ সাথে যুক্ত করে দিতে হবে। সবদিকে ‘লিন্টেল’ দিতে হবে। বিশেষ করে দরজা বা জানালার খোলা জায়গায় চিকন রড দিয়ে ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়াল যুক্ত করতে হবে।
১৯। মনে রাখতে হবে, নতুন বিল্ডিং নির্মাণে ভূমিকম্প-প্রতিরোধক নিয়মাবলি প্রয়োগ করলে, শুধুমাত্র ২-৩% নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পায়।
ভূমিকম্পের সময়ে করণীয়:
১। মানসিকভাবে শান্ত থাকুন ও অন্যদের শান্ত রাখুন।
২। বিল্ডিংটি বিম ও কলামের কাঠামোর ওপর নির্মিত হলে কলামের গা ঘেঁষে থাকুন। আর বিল্ডিংটি দেয়াল-নির্ভর হলে বাইরের কাছাকাছি কোনো কক্ষে অবস্থান নিন। যাতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেলেও উদ্ধার-কর্মীদের খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।
৩। লিফট্ ব্যবহার করবেন না।
৪। বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে টর্চ ব্যবহার করুন।
৫। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হতে পারে, সজাগ থাকুন।
৬। মাথায় হেলমেট, কুশন বা বালিশ দিয়ে দরজার নিচে অথবা লোহার টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
৭। মাটির বাড়ি ও পরিত্যক্ত বিল্ডিং থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন।
ভূমিকম্পের সময় রাস্তায় থাকলে করণীয়:
১। খোলা জায়গায় অবস্থান নিন, শান্ত ও সচেতন থাকুন।
২। দৌড় দেবেন না।
৩। ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর থেকে দূরে থাকুন।
৪। মাটির বাড়ি থেকে নিরাপদ জায়গায় চলে আসুন।
৫। পুরাতন বিল্ডিং থেকে দূরে থাকুন।
৬। বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকুন।
৭। ঢালু জায়গা বা দেয়াল থেকে দূরে থাকুন।
চলন্ত গাড়িতে থাকাকালীন সময়ে করণীয়:
১। চলন্ত গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখুন।
২। খোলা জায়গায় গিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে অবস্থান নিন।
৩। বৈদ্যুতিক তার থেকে গাড়িটি দূরে কোথাও পার্কিং করুন।
৪। দেয়ালের পাশে বা গাছের নিচে গাড়ি পার্কিং করবেন না।
৫। যদি খোলা জায়গা না থাকে, তাহলে গাড়ির গা ঘেঁষে বসে পরেন?
ধন্যবাদ সবাইকে
Rumi publisher