Answered 3 years ago
বিদেশে ( মালয়েশিয়া ) থাকতে এসে সত্যি বলতে কি আমার তো আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট সব কিছুই বেশি দামি মনে হয়। বলতে লজ্জা নেই আমি একটু হিসাবী গোত্রের মানুষ। হুটহাট করে জিনিস পত্র কিনে ফেলার ব্যাপারটা সহজে আসে না। প্রয়োজনের জিনিস বিশেষ করে খাবার-দাবার, পড়াশোনার জিনিস বা অন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে যেমন কোনো আপস করিনা, তেমনিই কোনো ততোধিক প্রয়োজনীয় নয় জিনিসে বিশেষ করে নিজের জিনিসের ক্ষেত্রে একটু বাড়াবাড়ি রকমের হিসাব শুরু করি। এটা ইদানিং অন্য একটা আকার ধারণ করেছে।
আমার কিছু বন্ধু যারা বিদেশে থাকেন তাঁদের থেকেও শুনেছি যে তাঁরাও এই অভ্যাসে আক্রান্ত। সেটা হল আমরা সব সময় অবচেতনেও মুদ্রার রুপান্তরিতকরণ করতে থাকি। মানে কিছু কিনতে গেলে এখানের মূল্য আমাদের ভারতীয় মুদ্রায় কত হবে সেটা হিসাব করে দেখি জিনিসটার দাম আমাদের দেশে বেশি না এখানে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখি ভারতে জিনিসটা সস্তা। সাথে সাথে "কলকাতা থেকে কিনব, সস্তা হবে " বলে পিছিয়ে আসি। খারাপ অভ্যাস জানেন। আমিও জানি। বকুনিও খাই মাঝে মাঝে । তবু
তাই এইভাবে কলকাতায় কেনাকাটার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।যদি সম্ভব হত আমি হয়ত সব কিছুই দেশ থেকে নিয়ে আসতাম। বর্তমানের অবস্থা যা তাতে " কবে রাম রাজা হবে, তবে সীতা বনে যাবে " ধরণের হয়ে গেছে। তাই আপাতত সেসব আশা ত্যাগ করেছি।
যাইহোক। ধান ভাঙ্গতে শিবের গাজন করে ফেললাম। আমাদের দেশে প্রচুর পাওয়া যায় এবং সস্তা এরকম জিনিসের তালিকা সত্যিই দীর্ঘ। প্রথমত বলি ভারত, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য অনেক দেশ থেকেই কিন্তু এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি হয়। যেমন - আলু, চাল, পেঁয়াজ,আটা, ডাল, চিঁড়ে, সর্ষের তেল, মশলা প্রভৃতি। এগুলোর দামের তুলনা করলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এখানে আমদানি করা হয় বলে আমাদের দেশের তুলনায় যথেষ্ট দাম বেশি।
এছাড়া আমদানি করা যেতে পারে এমন জিনিস ( এখন করা হয় কিছু, কিন্তু পরিমানে কম)
সুতির কাপড়। বিশেষ করে তাঁতবস্ত্র। চাহিদা প্রচুর, সরবরাহ কম।
পাটজাত বিভিন্ন শৌখিন ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এখানে ভালো বাজার আছে । কিন্তু সরবরাহ কম।
ভালো মানের সিল্ক। মুগা, তসর প্রভৃতি সিল্ক।
পিতলের তৈরি জিনিসপত্র।
কৃত্রিম গয়না।
দুগ্ধজাত যে কোনো জিনিস।এখানে ডেয়ারি ফার্ম নেই, অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয় সব। দাম আকাশ ছোঁয়া।
দার্জিলিং ও আসামের সুগন্ধী পাতা চা।
নদীর মাছ । এখানে মূলত সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে অল্প পরিমানে কিছু রুই, কাতলা আসে। তাও বাছাই করা কিছু বাজারে।
প্রাকৃতিক ও ভেষজ প্রসাধনী সামগ্রী। এখানে প্রসাধন সামগ্রীর চাহিদা আকাশচুম্বী। ভালো ভেষজ বা প্রাকৃতিক প্রসাধনী পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে যা প্রচুর পরিমানে উৎপাদন হয়।
সবথেকে প্রয়োজনীয় বস্তু। ওষুধ। এখানে আজ অবধি আমি যত ওষুধ কিনেছি সব ইয়োরোপ বা আমেরিকা থেকে আমদানি করা। এখানের স্থানীয় কোনও ওষুধ আমি এখনও পর্যন্ত দেখতে পাইনি। প্রতিটি ওষুধই অতিরিক্ত দামি। তা সে সর্দি - জ্বরের ওষুধই হোক বা কঠিন কোনো অসুখের ওষুধ ই হোক না কেন। তুলনায় আমাদের দেশে ওষুধ প্রচুর সস্তা। কোনও বিশেষ কারণে হয়ত ভারত থেকে ওষুধ আমদানি করা হয় না।
আপাতত এই কয়েকটাই মনে পড়ল। প্রসঙ্গত বলি এখানে জলের তুলনায় তেল সস্তা। এক লিটার জলের দাম ভারতীয় মুদ্রায় এখানে প্রায় ৪২ টাকা।এক লিটার পেট্রোলের দাম ৩৪ টাকা। এটা এখানের ভারতীয় মহলে খুব কৌতুকের বস্তু ।
seeamkhan publisher