বাংলাদেশের পাসপোর্টে, "This passport is valid for all countries of the world except Israel." - এই উক্তিটা যোগ করেন কে, শেখ মুজিব নাকি মেজর জিয়া? তথ্যসূত্রসহ উত্তর দেবেন কি?

1 Answers   2.6 K

Answered 3 years ago

আবার সেই মুজিব জিয়া বিতর্ক! প্রশ্নেই যেখানে গলদ সেখানে উত্তর সঠিক কিভাবে হবে?


"This passport is valid for all countries of the world except Israel." এই পর্যবেক্ষণটা শুরুতে ছিল না। শুরুতে সাউথ আফ্রিকা, তাইওয়ান এবং ইসরায়েল তিনটা দেশের নামই ছিল। পরবর্তীতে সাউথ আফ্রিকার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের কারণে এই নাম বাদ যায় এবং তাইওয়ান বাদ যাওয়ার কারণ; তাইওয়ান চীন প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত। পৃথক কোন সার্বভৌম রাষ্ট্র না হওয়া।


ইসরায়েলের নাম থাকার কারণ হলো বঙ্গবন্ধু বরাবরই নিপীড়িত ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলেন এবং ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ হওয়া স্বত্তেও সেটা নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। একই সাথে বাংলাদেশ এখন অবধি ইসরায়েলকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। যেকারণে পাসপোর্ট এর উপরে এই লেখাটা সপ্তাহখানেক আগেও ছিল। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে বাংলাদেশ কি স্বীকৃতি অবশেষে দিয়েই দিল? উত্তর হচ্ছে না।


পাসপোর্ট হচ্ছে একটা পরিচয় পত্র। বিদেশ বিভূইয়ে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় পরিচয়পত্রের কোন মূল্য নেই, সব দেশের ক্ষেত্রে একই। পাসপোর্ট সেখানে একজন ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের জাতীয়তাসহ পরিচয় বহন করে। কোন দেশে ভ্রমণ করতে যেটা লাগে তা হচ্ছে ভিসা। এখানে বোঝার বিষয় হচ্ছে পাসপোর্ট এর পাতাতেই ভিসা এ্যাপ্রুভ করা হয়; আলাদা ডকুমেন্টেশন থাকলেও বিদেশ বিভুইয়ে কেউ আপনার ভিসা আলাদাভাবে দেখতে চাইবেনা। "শো মি ইওর পাসপোর্ট" দিয়ে শুরু হবে, যেহেতু আপনার পাসপোর্ট এর পাতাতে আপনার ভিসার অনুমোদন আছে।

আবার পাসপোর্ট না থাকলে আপনি চাইলেও অন্য কোন দেশের ভিসা নিতে পারবেন না। পাসপোর্ট আর ভিসা একে অপরের পরিপূরক নয়, তবে একটা ছাড়া অন্যটা খুব কমই কাজে লাগে।


বাংলাদেশের পাসপোর্ট এ কি লেখা থাকলো না থাকলো সেটা কোন ভ্যালু ক্যারি করেনা। এখানে মূল ব্যাপার হচ্ছে কূটনৈতিক। বাংলাদেশ যদি ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে ইসরায়েল বাংলাদেশীদের জন্য সরাসরি বাংলাদেশ থেকেই ভিসা আবেদন করার জন্য ভিসা অফিস খুলবে। আর যদি বাংলাদেশ সম্মতি না দেয় তাহলেও ইসরায়েল চাইলেও অন্য কোন দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের ভিসার ব্যবস্থা করতে পারবে। উদাহরণস্বরুপ, বাংলাদেশ থেকে কিউ নিউজিল্যান্ড ভ্রমণ করতে চাইলে তাকে ভারতে অবস্থিত নিউজিল্যান্ড এর ভিসা সেন্টার এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। কেননা নিউজিল্যান্ড এর সাথে বাংলাদেশে সম্পর্ক থাকলেও বাংলাদেশে তাদের কোন ভিসা অফিস নেই।


তবে বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি ইসরায়েল যেতে চায় তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ আনা হয়। যেহেতু বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই বাংলাদেশীদের জন্য ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।


গিলাড কোহেন এর টুইট এর সাথে এ্যাটাচ করা সংবাদ দেখে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। এমনকি জেরুজালেম পোস্ট ও বাংলাদেশী ওই সাপ্তাহিক ব্লিৎজ এর বরাত দিয়ে লিখেছে "বাংলাদেশ ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে"। সাপ্তাহিক ব্লিৎজ এর সম্পাদক সালাহ চৌধুরী ২০০৩ সালে ইসরায়েল ভ্রমণের চেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং দেশদ্রোহীতার অভিযোগ এনে ৭ বছরের কারাবাস দেয়া হয়।


সালাহ চৌধুরী এখনো ইসরায়েলী লবিস্ট/পেইড এজেন্ট হিসেবে বিবেচিত এখানে।


তবে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে ব্রিফ করা হয়েছে। পাসপোর্টের পর্যবেক্ষন পরিবর্তনের সাথে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া বা তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কোন সম্পর্ক নেই। অতীতের মত এখনো ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আছে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবরের মতই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।


বাংলাদেশের জন্মের সাথে জিয়ার জড়িত থাকার প্রমাণ ওই মুক্তিযুদ্ধেই আছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রথম সরকার গঠন করেন আওয়ামিলীগ। দেশে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব নীতি বা আইনের প্রণয়ন আওয়ামিলীগ সরকারের আমলেই হয়েছে। জিয়া অনেক পরের কথা, আর তিনি এসেও কোন কিছু যুক্ত করেন নি, বরং পরিবর্তন করেছেন। সেই বিতর্কে যেতে চাচ্ছিনা। এবং এর জন্য কোন রেফারেন্স এর ও প্রয়োজন নেই। জন্মের আগে কারোর বার্থ সার্টিফিকেট চাইতে নেই।

Munni Khatun
munnikhatun
429 Points

Popular Questions