Answered 3 years ago
এক শীতের বিকেলে আমি চীনের তিয়ানজিন শহরের একটা বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভার্সিটি থেকে আমার বাসায় যাওয়ার দিনের শেষ বাস ছয়টায় ছেড়ে যায়। এরপর আর কোনো বাস নেই। ক্লাস শেষ করে সাধারণত আমি দিনের শেষ বাসটাই ধরি। এই বাস মিস হলে তারপর উপায় হলো ট্যাক্সি বা পায়ে হেটে বাসায় ফেরা,যা কিনা প্রায় সাত কিলোর পথ।
বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। সময় পেরিয়ে গেলেও বাস আসছেনা। বাস কেন আসছেনা তা নিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক চীনা ভদ্রলোককে প্রশ্ন করায় তিনি বেশ ফ্লুয়েন্ট ইংরেজিতে জবাব দিলেন যে আজকে বাস লেট করে আসবে, বাস আসতে এখনো পনেরো মিনিট। তাই অগত্যা আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলনা।
এবার ভদ্র লোক আমার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি বললাম আমি এই ভার্সিটির ফ্রেশম্যান। তিনিও জানালেন তিনি এই ভার্সিটির প্রফেসর। এরপর তিনি আমার দেশ কোথায় জানতে চাইলেন। আমি বললাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ শুনার পর ভদ্রলোক উৎসাহ নিয়ে জানালেন তার এক বাংলাদেশি বন্ধু আছে, কানাডার ব্রিটিশ কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করাকালীন তারা একসাথে ল্যাবে কাজ করতো। তিনি এরপর বললেন, তোমরা বাংলাদেশিরা খুব মেধাবী। আমি শুনে খুশি হলাম আবার একটু অবাকও হলাম। আমরা বাংলাদেশিরা কি আসলেই মেধাবী?
পরে কয়দিন এই চিন্তাটা আমার মাথা থেকে সরাতে পারলাম না। কয়েকদিন পর আমার এক ইন্দোনেশীয় বান্ধবী একই কথা বললো, যে আমরা বাংলাদেশিরা নাকি খুব মেধাবী। শুনে খুশি হলেও, আমার মনে একটা চিন্তার উদ্রেক হলো। আমরা বাংলাদেশিরা যদি এতই মেধাবী হয়ে থাকি, তাহলে আমরা সুইজারল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুর এর মত এত উন্নত নই কেন?
অনেক চিন্তার পর একটা উত্তর খুঁজে বের করেছি। বাংলাদেশিরা আসলেই খুব মেধাবী। স্যার এফ.আর রহমান খান যাকে বলা হয় আধুনিক স্থাপত্যকলার জনক, তিনি একজন বাংলাদেশি; জামাল নজরুল ইসলাম, যিনি স্টিফেন হকিংস এর সাথে তাল মিলিয়ে রিসার্চ করেছেন তিনি একজন বাংলাদেশি, ড. মুহম্মদ ইউনুস যাকে নিয়ে কানাডার পাঠ্যবইয়ে লেখা হয় তিনি বাংলাদেশের আলো বাতাসে বেড়ে উঠেছেন।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বাংলাদেশিরা তাদের মেধা আর তাদের পটেনশিয়াল এর ৫% ও যদি কাজে লাগাতে পারতো, তাহলে তারা হতো বিশ্বের সব দেশের মানুষের জন্য রোল মডেল।
আমাদের মেধার বিকাশের মূল অন্তরায় হলো ছাত্র রাজনীতি। আমাদের ভার্সিটি গুলোতে ছেলেমেয়েরা উদ্ভাবনের কথা না বলে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রস্তুতি নেয়; আমাদের ক্যাম্পাস গুলোতে গবেষণার কথা হয়না, কথা হয় পলিটিক্স, দলবাজি, মিছিল মিটিং এর মত আনপ্রোডাক্টিভ জিনিস নিয়ে।
বাংলাদেশিরা মেধাবী। আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা? তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখুন বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ল্যাবরেটরিতে। শতশত স্বপ্নালু বাংলাদেশি ছেলেমেয়ে রাতদিন গবেষণা করে যাচ্ছে সেখানে।
riyazulislam publisher