বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ও কৌশলী নেতা বলে আপনি কাকে মনে করেন

1 Answers   14 K

Answered 2 years ago

নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজের বিশ্লেষিত কয়েকটি কথা বলতেছি। ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন।

যাইহোক, স্বাধীনতার পর ওনার বাবা দেশে একনায়কতন্ত্র ও বাকশাল কায়েম করেছিলেন এটা তো সবাইই জানি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট উনার বাবাকে হত্যার পর দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। উনার আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল উনার বাবা যেটা করতে পারেননি, সেটা উনি করবেন।

এজন্য যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। যথেষ্ট কষ্টের মধ্যে দিয়েই উনি সময় পাড় করেছিলেন কিন্তু প্রতিজ্ঞা কখনও হারাননি।

জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় নেমে আসা আওয়ামীলীগ, যারা ৮৬ তে প্রথমে অস্বীকার করে পরে ক্ষমতার লোভে নির্বাচন করেছিলো তারা নিজ কৃতকর্মের জন্য তওবা করে হাতে তসবি, মাথায় পট্টি বেঁধে ভোট চেয়ে এগিয়ে গেল। ১৯৯৬ সালের ওই শাসনামলেই খালেদা জিয়া টের পান শেখের বেটি হাসিনা ক্যেয়া চিজ হ্যাঁয়। ইসলামি লেভাসে জনগণের সাথে কিভাবে নাটক করতে হয়, তা জনগণ সর্বপ্রথম ওই ১৯৯৬ সালে টের পায়।

২০০৮ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী কিভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন তা তো অনেকেরই জানা। সে ব্যাপারে না হয় কিছুই বললাম না। ক্ষমতায় এসে উনি যা করলেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অবাক করার ঘটনা।

উনি উনার বাবার আদর্শ পূরণ করার উদ্দেশ্যেই নেমেছিলেন। যথেষ্ট ঘাটাঘাটি করেছেন বাবার পরিকল্পনা নিয়ে। বাবা যে ভুল করেছেন, সেই ভুল উনি করেননি। বাবা সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, সেজন্য আগে উনি সেই সেনাবাহিনীকেই শায়েস্তা করলেন। বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়ে বিলুপ্ত করলেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যারা উনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারতেন।

সেনাবাহিনী তো দমন করলেন, এখন বিরোধী দল কিভাবে দমন করবেন? এজন্য উনার যে কৌশল এটা চিন্তা করলে আমি নিজেই অবাক হই। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন করে উনি যুদ্ধাপরাধীর নামে জামায়াতের এবং বিএনপির উর্ধ্বতন নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলালেন, অপরদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদস্বরূপ যারা আন্দোলনে নেমেছে তাদেরকেও কঠোর হাতে দমন করেছেন। আন্দোলনে উর্ধ্বতন নেতারা (বিএনপি ও জামায়াত) জড়িত ছিল, এই অভিযোগে তাদেরকেও মামলা, রিমান্ড, গুম করে শায়েস্তা করলেন। এক ঢিলে দুই পাখি।

উনি জানতেন যে জনগণ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলবে। এজন্য সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আগেই বিলুপ্ত করলেন। যেখানে সংবিধানেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কথা নেই, সেখানে জনগণ তো সংবিধানের বিরুদ্ধে যেতে পারবেনা। কি টেকনিক ভাই !!

নিজস্ব দলীয় লোকও কখনও কখনও কর্তার বিরুদ্ধে যায়, এটাও উনি বুঝতে পেরেছিলেন। সেজন্য সংযোজন করলেন সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ। যেখানে বলা আছে,

কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-

(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা

(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,

তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।

উনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রশাসন উনার বিরুদ্ধে যেতে পারে। এজন্য প্রশাসনিক পদে পদে তৈরি করলেন আওয়ামীলীগ সমর্থক। এমনকি চাকরিতে ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামীলীগ না থাকলে, চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। উনি জানেন যে, রক্ত কখনও কখনও বেইমানি করলেও সেই রক্তের গুণগানই গাইবে।

জামায়াত দমন হওয়ার পরেও যখন হেফাজত আবির্ভাব হলো, তাকেও সেদিনকার সময়ে দমন করেছিলেন। এমনকি, গত বছর মোদি বিরোধী আন্দোলনে আপনি খেয়াল করবেন, আন্দোলনের সময় প্রশাসন তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু মোদি চলে যাওয়ার পরেই মোদিবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে মামলা দিয়ে, হেফাজতকে এমন কোনঠাসা করলেন যে, অবশেষে হেফাজত তাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করলেন।

ভারতে উপহার পাঠানোর পরে উনি বুঝতে পেরেছিলেন যে পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া না করলেও পাকিস্তানের বন্ধু চীন ঠিকই করবে। কিছুদিন পরেই পাকিস্তানেও উপহার পাঠালেন। স্বামীর সংসারও ঠিক রাখলেন আবার বন্ধুকেও রাগান্বিত করলেননা।

পুলিশের আইজি হিসেবে তৈরি করলেন নিজের লোক। সেনাপ্রধান, নৌপ্রধান, বিজিবি প্রধান সব তৈরি করলেন নিজের মনের মতো। এমনকি সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি পযর্ন্ত নিজের মার্জি অনুযায়ী তৈরি করেছেন। এখন সবাইই পদে আসীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, টুঙ্গিপাড়ায় শ্রদ্ধা জানাতে যায়। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, কিছুদিন আগে বিজিবি পরিচালিত স্কুল ও কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে গিয়েছিলাম। সেখানে শপথ বাক্যেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারন করার কথা পাঠ করানো হয়। কি টেকনিকের সাথে ঢেলে সাজিয়েছেন নিজের মতাদর্শ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজিয়েছেন। কারন বিরোধী দলের যেকোনো কর্মসূচি পঙ্গু করতে ছাত্রলীগের চাইতে ভালো কেউ পারবেনা। সেদিন পত্রিকায় দেখলাম, "যত বড় অপরাধ ততবড় ছাত্রলীগের বড় পদ"। আগামী নির্বাচনে ফ্রি তে ব্যালটে সিল মারার জন্য এদেরকেই লাগবে।

ডিজিটাল যুগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ অনেক কিছু বলবে, লিখবে, এগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলে গেলে কুকীর্তি ফাস হয়ে যাবে, ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এজন্য তৈরি করলেন তথাকথিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এটা শুধু একটা আইনই নয় বরং জনগণের মাথায় বন্দুক ঠেকানোর মতো একটা অবস্থা।

এগুলো তো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পয়েন্ট ছিল। এরকম আরো শত শত পয়েন্ট আছে যেগুলো শুধুমাত্র শেখ হাসিনা'ই পরিকল্পনা করতে পারবেন যা উল্লেখ করে শেষ করা যাবেনা।

Dipty Khatun
diptykhatun
420 Points

Popular Questions