Answered 3 years ago
বলিউড ভারতের মুম্বাই ভিত্তিক একটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এ ইন্ডাস্ট্রিতে মূলত হিন্দী ভাষার ফিল্ম তৈরি হয়। আমাদের জেনারেশনের সব বাচ্চাকাচ্চারা টেলিভিশনের সুবাধে বলিউড ফিল্ম দেখেই বড় হয়েছে। সুতরাং, আমাদের মনে বলিউডের জন্য একটা সফট কর্নার থাকবে। যাইহোক, গত এক দশকে বলিউডের প্রযোজকরা রিমেক করে, কাহিনি ছাড়া ফিল্মে শুধু হিরোর স্টারডমের জোরে, আইটেম সং দিয়ে মুভি থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর নেশায় বুদ হয়ে ছিলেন। এদিকে প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় দর্শক ক্রমেই সচেতন হয়ে উঠেছে। দর্শক এখন হলিউডের নামকরা মুভিগুলো ইন্টারনেট থেকেই দেখতে অয়ারে। এছাড়াও তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম আর কান্নাড়া ইন্ডাস্ট্রির উত্থান হলো। যেখানে এসব ইন্ডাস্ট্রি নিত্য-নতুন জনরা ও গল্পের মুভি দর্শকদের উপহার দিয়ে তাদের দিকে আকৃষ্ট করতে থাকলো, বলিউড সেই দুই দশক আগের রোমান্স, আইটেম সং ফর্মুলাতেই সীমাবদ্ধ থাকলেন। এসবের কারণে দর্শক দিন দিন বলিউডের প্রযোজকদের প্রতি বিরক্ত হচ্ছিলো। কফিনের শেষ পেরেক ঠুকে দিলো সুশান্ত সিং এর অকালপ্রয়ান। আজকে যে বলিউড এর থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তার অন্যতম কারণ হলো নেপোটিজম। অনেকের বিশ্বাস সুশান্ত সুং এর অকাল প্রয়াণের জন্য নেপোটিজমই দায়ী।
স্বাভাবিকভাবেই বয়কট বলিউড নামে যে ট্রেন্ড চলছে তার তাৎক্ষণিক প্রভাব খুবই খারাপ। একটা মুভির সাথে হাজার হাজার কলাকুশলী জড়িত থাকে। এখন মানুষ যে দলে দলে বলিউডকে বয়কট করছে, তাতে তাদের রুজিরুটির দরজা টা বন্ধ হয়ে গেলো। এতে হাজার হাজার পরিবার সমস্যায় পড়বে।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদীভাবে চিন্তা করলে এই বয়কট ট্রেন্ড দর্শক আর কলাকুশলী উভয়ের জন্যই ভালো। কিভাবে ভালো হবে তা বুঝার জন্য কিছু জিনিস জানতে হবে।
২০১৬ সালের ফিল্ম ফেয়ার এওয়ার্ডে সুরাজ পাঞ্চোলি আর ভিকি কৌশন দুজনেই সেরা নবাগত অভিনেতার জন্য মনোনীত হন। ভিকি কৌশল যেখানে "মাসান" এ অভিনয়ের জন্য ক্রিটিক্স আর অডিয়েন্সদের প্রশংসা কুড়াচ্ছিল, সেখানে সালমান খানের এন্ডোর্সমেন্ট পাওয়া সত্ত্বেও সুরাজ পাঞ্চোলির মুভিটি ফ্লপ হলো। দিনশেষে ফিল্ম ফেয়ারের সেরা নবাগত পুরষ্কারটি পেলো সুরাজ পাঞ্চোলি, যেখানে পুরষ্কারটির জন্য ভিকি কৌশলই যোগ্য দাবীদার। এই সিদ্ধান্তটি দর্শকদের চোখে ফিল্মফেয়ার এর ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছিল।
কাহোনা প্যায়ার হে মুভির কথা মনে আছে? যে মুভিতে হৃত্তিক রোশান এর হার্টথ্রোব পারফরমেন্স আর আমিশা প্যাটেল এর মিষ্টি মেয়ের অবতার পুরো বলিউডকে দিওয়ানা করে ফেলেছিল।এটি ছিল বলিউডে আমিশা প্যাটেলের ডেবিউ মুভি। একই বছর জনপ্রিয় অভিনেতা রানধীর কাপুর এর মেয়ে কারিনা কাপুর ও ডেবিউ করেছিল রিজিউজি মুভিতে।যেখানে আমিশা প্যাটেল তার অভিনয়ের জাদুতে সেবছর ন্যাশনাল ক্রাশে পরিণত হলো, কিন্তু সেরা নবাগত অভিনেত্রীর পুরষ্কারটি পেলো অভার এক্টিং এর জন্য খ্যাত কারিনা কাপুর। এবারো জনতা ফিল্মফেয়ারের উপর খুব হতাশ হলো।
রেহনা হে তেরে দিল মে নিঃসন্দেহে বলিউডে নির্মিত অন্যতম সেরা লাভ স্টোরি। অভিনেতা আর মাধাবান এর স্বপ্নের মত এক ডেবিউ হলো। তার পাগলাটে অভিনয় দিয়ে সে লাখ লাখ দর্শকের মনে জায়গা করে নিলেন। এরপরও সে ফিল্মফেয়ার সেরা নবাগত অভিনেতার পুরষ্কারটি পেলেন না। পুরষ্কারটি পেলেন বিখ্যাত অভিনেতা জতিন্দ্র কাপুরের ছেলে তুষার কাপুর। তুষার কাপুরের অভিনয়কে যদি এক শব্দে বর্ণনা করতে হয়, তাহলে বলবো "রোবোটিক"।
যাইহোক, এবার তাহলে বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলতে চাচ্ছি। কারান জোহারের মত কিছু প্রযোজক বলিউডকে বাপ-দাদার সম্পত্ত্বি বানিয়ে ফেলেছেন। অথচ বলিউড চলে সাধারন জনগনের টাকায়। অর্জুন কাপুরের মত স্টারকিডরা বস্তাপচা মুভি করেও দিনের পর দিন বলিউডে টিকে যায়, আর সুশান্ত সিং রাজপুতের মত ট্যালেন্টেড অভিনেতারা বলিউডে অবহেলিত থেকে যায়। এর ফলে, বলিউড দর্শকদের বস্তাপচা কন্টেন্ট গিলিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, ওইযে বলে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। যেসব স্বার্থান্বেষী প্রযোজক দিন দিন বলিউড কে টক্সিক করে তুলেছিল, জনগণ তাদের বয়কট করেছে। এতে করে হবে কি, তাদের টনক নড়বে। তারা বুঝতে পারবে ক্ষমতা এখনো জনগণের হাতে। তখন তারা ভালো কন্টেন্ট বানানোর চেষ্টা করবে। বাপ-দাদার জোরে যারা এতদিন বলিউডে টিকে ছিল তাদের রাজত্বের শেষ হবে এবং প্রকৃত ট্যেলেন্টেড শিল্পীরা বলিউডে জায়গা পাবে।
Anower publisher