Answered 3 years ago
Terracotta Army-কে চীনের প্রথম সম্রাট কিং শি হোয়াং-এর মৃত দেহের সঙ্গে দাফন করা হয়েছে।
ইতিহাস এমন এক মহাসাগর যার গভীরতা পরিমাপ করা অসাধ্য। যদি চীনের কথা বলা যায়, চীনের ইতিহাস খুব পুরাতন। চীনের ইতিহাসে এত সভ্যতা এসেছে, এত রাজা-সম্রাট-সম্রাজ্ঞী এসেছে যে ওদের সম্পর্কে জানা মানে কোনো পর্বত আরোহন করার চেয়ে কম কিছু নয়। এই রাজাগুলি নিজ নিজ সময়ে নিজেকে অমর বানানোর জন্য এমন কিছু কাজ করেছে তার মধ্য এক হচ্ছে Terracotta Army-র কবরস্থান ।
চীনের সংশি প্রান্তে ১৩ বছরের এক কিশোর রাজা কিংঝিং তার কবরস্থান বানানোর আদেশ জারি করে। কিংঝিং ৩৮ বছর বয়সের মধ্য ছোট ছোট রাজ্যগুলিকে একত্রিত করতে সফল হন। তারপরেই চীনের প্রথম সম্রাট কিং সি হোয়াং রূপে সিংহাসনে অবতীর্ণ হন। সম্রাট কিং সি হোয়াং খ্রিস্টপূর্ব ২২১ থেকে ২০৭ পর্যন্ত শাসন করেছেন।
ধীরে ধীরে সম্রাটের শক্তি ও সম্পদের পরিমান বাড়তে থাকে, তখনি সম্রাট তার নিজের মৃত্যুর পর কবরের সুরক্ষার চিন্তায় অস্থির হতে লাগলেন। তারপর তিনি পুনরায় আদেশ জারি করেন তার জন্য যেন সুরক্ষাসম্পূর্ণ একটি রাজকীয় কবরস্থান বানানো হয়। এই কবর মাটির নিচে হবে, সেখানে তার পুরা সেনাবাহিনীর মাটির মূর্তি থাকবে। পৃথিবীতে এতবড়ো কবর এর আগে কখনো বানানো হয় নাই।
রাজার আদেশকে মান্য করা হলো, কবরস্থানের জন্য শিয়াং শহরের উত্তরদিকে পাহাড়ের পর মুরুভুমির মতো একটি অঞ্চলকে বেছে নেয়া হয়। যেখানে মাটির নিচে খনন করে রাজার কবর বানানো হয়েছে, তার সাথে Terracota Army, ঘোড়ার গাড়ি ও ঘোড়াকে সেখানে রেখে রাজার মৃত্যুদেহের সঙ্গে রেখে দাফন করা হয়। আর পুরো ২২০০ সাল পর্যুন্ত এই কবর মানুষের নজরের বাইরে ছিল।
১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে একজন কৃষক এই জায়গায় কুয়া বানানোর জন্য খোদাই করছিল, তখনি তার চোখ মাটির নিচে দাফন করা এই কবরের উপর পড়েছিল। চীনের ইতিহাস সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলির মধ্য এটি তার হাতেই পুনরুদ্ধার হয়। এরপর পরবর্তী ১০ বছর প্রত্নতান্তিকগণ এই জায়গা ও এর আশেপাশে বিশাল জায়গাজুড়ে খনন করেন। এর ভিতরে প্রায় ৮ হাজারের বেশি Terracota Army পাওয়া যায়, যাকে খুব সুন্দর করে বানানো হয়েছে ও রং করা হয়েছে। খনন কার্যের কাজ আরো চালানো হলে জানা যায় সম্রাটকে মৃততুর পর এখানেই রাখা হয়েছে।
হুয়াং -এর ৩৮ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এই কবরে সম্রাটের রাজকীয় জীবনযাপনের প্রতিটি অংশই উপস্থাপনা করা হয়েছে। Terracotta Army- এর নির্মাণ চীনের প্রথম সম্রাটের কবরকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বানানো হয়েছিল। এই মূর্তি খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৬ থেকে ২২১ পর্যুন্ত যুদ্ধের সময় চীনের ঐক্য সেনা রূপে প্রতিনিধিত্ব করত। যাদেরকে আলাদা আলাদা ভাবে বানানো হয়েছে, পরে সব অংশগুলিকে একত্রিত করে রং করা হয়েছে। এই অদ্ভুত কবরের নির্মাণ সময়সীমা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতভেদ রয়েছে। বেশিরভাগ গবেষক মনে করেন এই কবর নির্মাণ করতে ৪০ বছর সময় লেগেছে, কয়েকজন দাবি করেছেন এটা বানাতে ১০বছর সময় লেগেছে। তাদের তত্ত্ব অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ২২১ অব্দে রাজা কিং সি হুয়াং বাকি রাজাদের হারিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র চীন বানিয়েছিলো। সেই সময় তিনি এই নির্মাণ কাজ শুরু করেন আর খ্রিস্টপূর্ব ২০৯ অব্দে এটি বন্ড করা হয়।
কবরে পাওয়া মূর্তিগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায় Terracotta Army অনেক ধরণের পরিস্থিতির সামনাসামনি করেছে, যেমন বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি। পরীক্ষা নিরীক্ষায় পাওয়া মূর্তিগুলির উপর চিহ্ন আর প্রমান দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা অনুসারে কবর নির্মাণের সময়, কবরের চারিদিকে ৩.৫ মিটার উঁচু দেওয়াল ছিল। কিন্তু বন্যার কারণে ১.৭ মিটার রয়ে গেছে যার কারণে Terracotta Army- এর উপর বন্যার পরেছে। ঐতিহাসিকদের মত অনুসারে এই কবরকে ক্ষতি করার আরেকটি চেষ্টা, পশ্চিমা অঞ্চলের অধীপতি চু-শিয়াং-ইউ দ্বারা করা হয়েছে। খনন কার্যের সময় পাওয়া হাতিয়ারগুলি এর প্রমান দেয়। মনে করা হয় এই চেষ্টার পিছনে লক্ষ্য ছিল কবরের মধ্য অবস্থিত তামার অস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্র লুট করার লালসা ছিল। খনন কার্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা গবেষকরা পড়া মাটির কিছু অবশেষ ও সাথে আগুনে পুরা কিছু কাঠের অংশ পায়। এসবকিছু প্রমান দেয়, Terracotta Army-কে ধ্বংস করার জন্য আগুন ধরে দেওয়া হয়েছিল। এই কাজ কে করতে পারে? এর উত্তর প্রাচীন চিনি ঐতিহাসিকদের লেখায় পাওয়া যায়। তাদের মত অনুসারে, কিং-শি-হুয়াং চু রাজ্যকে ধ্বংস করে দিয়েছিল আর শিয়াং ইউ- এর পরিবারকেও শেষ করে দিয়েছিলো। এটাই এক কারণ যে শিয়াং-ইউ কিং-শি-হুয়া এর কবরকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর পর এই কবরকে তার রাজ্যের নিজস্ব সম্পদরূপে ঘোষণা করেন।
২০০৫ খ্রিস্টাব্দে চীনের সরকার Terracotta Army-কে সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ বিভাগের হাতে তুলে দেন রক্ষনা বেক্ষনেই জন্য। তার আগে UNESCO ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে Terracotta Army-কে World Heritage site ঘোষণা করেছে। এই কবরকে দেখাশোনা করার জন্য চীন সরকার কিং-সি-হোয়াং নামে একটি বিভাগ তৈয়ারি করেছে। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে এই কবরকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে Terracotta Army ও তার অবশেষ মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
যাই হোক চিনি ইতিহাসের এই কবর আজ সারা পৃথিবীর লোকের জন্য একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সমাদৃত। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসে, এর নির্মাণ সম্পর্কিত কাহানি শোনার জন্য।
popykhatun publisher