Answered 3 years ago
বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। রাত ১২ টার দিক এক থানার ওসি সাহেব ফোন করে জানালেন, স্যার এএসআই কবিরকে (ছদ্ম নাম) পাওয়া যাচ্ছে না। থানাটা অনেক নতুন জেলার চেয়েও উন্নত এবং বড়। এএসআই কবিরের ইপিজেড ফাড়িতে পোস্টিং ছিল। রাতেই গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। ওসি সাহেব কে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে খুঁজে পেলাম।
টর্চ দিয়ে ঝোপ ঝার দেখছে। কবিরের মোবাইল সন্ধ্যা থেকে বন্ধ। মোবাইলের ডাটা চেক করে যাদের তালিকা পেলাম তারা বাড়িতে নেই। ওসি সাহেব বেশ অভিজ্ঞ মানুষ, তার থমথমে মূখ দেখে বোঝার চেষ্টা করছি তিনি কি আশংকা করছেন। আমার মনে পড়ে গেল কবিরকে মাসখানেক আগে তার এলাকায় মাদক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলাম। ছেলেটা বলেছিল স্যার বাঁচাতে পারবেনতো! আমি বলেছিলাম তুমি কাজ করো সব হেল্প পাবা। ও কেন একথা বলেছিল? রাত প্রায তিনটা পর্যন্ত এলোমেলো খোঁজা-খুঁজি করে বাসায় চলে এলাম। সকালে ৭টার দিক ওসি সাহেব ফোন করলেন।বেদনার্ত গলায় বললেন,
স্যার যা ভেবেছিলাম তাই ঘটেছে হলুদ বাগানে কবিরের লাশ পাওয়া গেছে। কোন-রকম গায়ে পোশাক চড়িয়ে হাজীর হলাম। আহা! আহা, এভাবে মানুষকে মারে। ইউনিফর্মটা পাশে ফেলানো। হাত দুটি বাঁধা। মুখ বাঁধা। শরিরে এমন সব নির্যাতনের চীহ্ন, যা বর্ণনা করতে চাই না। আহারে ওর একটি ছোট বাচ্চা আছে। কবিরের বয়স ৩০ এর মত। ঘরে স্ত্রী, আবার কনসীভ করেছে। আহারে বেচারী। এসপি, জিআইজি সাহেব এলেন। এলাকায় ঘরে ঘরে অভিযান হলো। সাসপেক্ট একটাকেও পাওয়া গেল না। যাদের খুঁজলাম তারা রাতে বাসায় ফেরেনি। এসপি সাহেব শপথ করালেন। ২৪ ঘন্টার ভিতর দুটোকে ধরা গেল। মাদক ব্যবসায়ি। ২০/২১ বছর বয়স। কাহিনীটা পেলাম। কবির মাদকের বিরুদ্ধে এ্যাকশন শুরু করায় কবিরকে ৭/৮ জন মিলে শিক্ষা দেয়ার শপথ নেয়। নেপথ্যে ইন্ধন দেয় এক মহিলা নেতার ছেলে। কবির কে তার এক বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে মাদকের খবর আছে বলে বাগানের পাশের রাস্তায় রাত ৮টার দিকে ডাকায়। সেখানে এসে সোর্সকে না দেখে মটর সাইকেলে চলে যেতে উদ্যত হলে পিছন থেকে একজন লাঠি দিয়ে মাথায় বাড়ি মেরে ফেলে দেয়। এরপর ৪ জন মিলে টেনে হলুদ বাগানে নিয়ে যায়। ইলেক্ট্রিক তার দিয়ে ফাঁস দিয়ে মারার আগে ১ ঘন্টা ধরে নির্যাতন করে।
এই ঘটনার ৭/৮ দিন পর ঐ ৪ জনের নেতা পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। মহিলা নেতার ছেলে এবং অন্য একজন বন্দুক যুদ্ধে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পা হাড়ায়। একজন সব স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়ায় এখোনো জেল খাটছে।
shezakhan publisher