Answered 3 years ago
ন্যাপথলিন আর কেরোসিনের গন্ধ ভালোবাসার মতো মানুষের সংখ্যা সুবিশাল এবং সেই দলের আমিও একজন অন্যতমা সদস্যা।
ন্যাপথলিন এবং কেরোসিন এই যৌগগুলিকে মূলত হাইড্রোকার্বন যৌগ বলা হয়। এদের মধ্যে হাইড্রোজেন ও কার্বন উপস্থিত থাকায় , এদেরকে হাইড্রোকার্বন যৌগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রকার যৌগের মূল বৈশিষ্ট্য হল এদের মিষ্টি সুগন্ধ ।
তাই আঠারো শতকে বেঞ্জিনকে ( একপ্রকার হাইড্রোকার্বন যৌগ) দাঁড়ি কাঁটার ক্রিম এবং অন্যান্য প্রসাধন দ্রব্যে ব্যবহার করা হত । কিন্তু পরে এর কারসিনোজেনিক ক্ষমতা সম্বন্ধে জ্ঞাত হওয়ার পর এটিকে এই প্রসাধন দ্রব্য প্রস্তুতির তালিকা থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়।
তবে ন্যাপথলিন ও কেরোসিনের গন্ধ এত আকর্ষক হওয়ার পিছনে দুটো স্বীকৃত যুক্তি রয়েছে -
গন্ধ ও স্মৃতির সংযোগ
কোন একটা গন্ধের মধ্যে জড়িয়ে থাকে আমাদের স্মৃতির আভাস । যেমন প্রথম দেখার সময় যে পারফিউমটা পরে আপনার প্রেমিকা এসেছিল । সেই পারফিউমের গন্ধটা পরবর্তীকালে আপনার নাকে এলেই কেমন "সেই প্রথম দেখার দিনগুলোর কথা" মনে পড়ে যায় না ?
আসলে গন্ধ বহনকারী অলফ্যাক্টরি স্নায়ুর সংযোগ রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা এবং হিপ্পোক্যাম্পাসের ( আবেগ সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণে সহায়তাকারী অংশ ) ।
এইজন্যই ন্যাপথলিন আর কেরোসিনের গন্ধ আমাদের স্মৃতির এক বিশেষ অংশকে নাড়া দিয়ে যায় । যেমন আমার ক্ষেত্রে - ন্যাপথলিনের গন্ধ আমাকে মনে করিয়ে দেয় ঠাকুমার ট্রাঙ্কে গুছিয়ে রাখা জামা গুলোর কথা । কেরোসিনের গন্ধে মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় লোডশেডিঙের সময় লম্ফ জ্বেলে ভূতের গল্প শোনার স্মৃতি ।
স্মৃতি যেহেতু সবসময়ই বড় প্রিয় আমাদের কাছে । তাই এই গন্ধগুলিও আমাদের অজ্ঞাতসারেই আমাদের প্রিয় হয়ে উঠেছে । [1]
ন্যাপথলিন ও কেরোসিন যৌগের বাহ্যিক প্রভাব
ন্যাপথলিন , কেরোসিন জাতীয় হাইড্রোকার্বন যৌগের আমাদের স্নায়ুর উপর ভিন্ন স্নায়বিক প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়েছে । এই হাইড্রোকার্বন যৌগের সুমিষ্ট গন্ধের প্রভাবে আমাদের স্নায়ু শিথিল হয়ে যায় এবং ডোপামিন ক্ষরিত হয় যা আমাদের মধ্যে খুশির উদ্দীপনা সৃষ্টি করে ।
নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য সেবনের প্রভাবে মস্তিষ্কের যে মেসোলিম্বিক পথ উন্মোচিত হয়ে যায় , হাইড্রোকার্বন জাতীয় যৌগের প্রভাবে সেই একই জিনিস হয় ।
এই তীব্র আকর্ষণী ক্ষমতার প্রভাবে হয়ত আমাদের কাছে এই গন্ধ এত প্রিয় হয়ে উঠেছে ।
Moushumi Hamid publisher