দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা জার্মানিতে পরমাণু বোমা না ফেলে কেন জাপানে ফেলেছিলো?

1 Answers   11.8 K

Answered 3 years ago

সফল নিউক্লিয়ার বোমা বানানোর সিক্রেট মিশনটা শুরু হয়েছিলো আমেরিকার ম্যানহাটন প্রজেক্টের মাধম্যে।



মূলত জার্মানীকে শায়েস্তা করার চিন্তায় এ প্রজেক্টটা হাতে নেওয়া হলেও, ভাগ্য শেষমেশ জাপানের উপর তা ফেলতে আমেরিকাকে প্ররোচিত করে।


নিউক্লিয়ার বোমা বানানোর কাহিনীটি শুরু হয় এক মিথ্যা প্রোপাগান্ডাকে কেন্দ্র করে।


ঘটনার সূত্রপাত ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বরের কোনো একদিনে।জার্মানের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী otto hann ও তার সহযোগী fritz strasmann জার্মান ন্যাশনাল জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।যেখানে উল্লেখ করেন যে, তারা নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ার সাহায্যে নিউট্রনের মাধ্যমে ইউরোনিয়াম হতে বেরিয়ামে রূপান্তরিত করেন। এর ফলে যে বিপুল ধংসাত্নক শক্তির উদ্ভব হয়, তার ও ইংগিত দেয়া হয়েছিলো এই জার্নালে।


এ জার্নালটা এমন এক সময় প্রকাশ হক যখন হিটলার বিশ্বজয়ের প্রস্তুতিস্বরূপ তার সেনাবাহিনীকে নানা ধরনের আধুনিক যুদ্ধস্ত্রে আধুনিকায়ন করছিলেন।


হিটলারের এ বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়।আরো ভালোভাবে বলতে গেলে,তার বিশ্বস্ত সহযোগী গোয়েরিং-এর দৃষ্টিগোচর হয়।হিটলার তাই এ সুযোগটা নিতে চাইলেন।


১৯৩৯ সালের এপ্রিলে, যখন বিশ্বযুদ্ধ তুংগে এবং জার্মানির অনূকূলে এবং ইতিমধ্যে ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধ নরওয়েও নাজি বাহিনীর আওতায় চলে আসে। হিটলার তার সর্বোচ্চ মহলে আদেশ দেন যে, পারমাণবিক বোমা বানানোর কার্যক্রম শুরু করতে।



ছবিতে জার্মান পারমানবিক শক্তিকেন্দ্র


বোমা বানানোর কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু জার্মান শেষমেষ এই প্রজেক্ট সফল হতে পারেনি।


(মাঝখানে অনেক ঘটনা ঘটে যা আলোচনা করলে প্রশ্নটির সার্থকতা লংগিত হতে পারে)


১৯৪৪ সালের মাঝামাঝিতে নাজি হাইকমান্ড এই প্রজেক্টটি বন্ধ করে দেয় অতিরিক্ত ব্যয়বহুলতার ও আশানূরূপ ফল অর্জিত না হওয়ার কারনে।


এদিকে জার্মান হতে বিতারিত হওয়া অনেক বিজ্ঞানী এবং গবেষক আমেরিকাকে পারমানবিক কর্মসূচি গ্রহনের জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে আমেরিকা তেমন কোনো কর্মসূচিতে যেতে চাইছিলোনা।


কারন, তখন সবেমাত্র ১ম বিশ্বযুদ্ধের মন্দাবস্থা কাটিয়ে আমেরিকার অর্থনীতি আশার আলো দেখছিলো।


কিন্তু সে আলোয় অন্ধকারের মেঘের মত ধেয়ে এলো জাপানের পার্লহারবার এটাক। যা আমেরিকাকে চূড়ান্ত সিধান্ত নিতে বাধ্য করে।



ছবিতে জাপানের পার্ল হারবার আক্রমন


১৯৪২ সালের শরৎকালে অতন্ত্য গোপনীয়তার সাথে ম্যানহাটন অংগরাজ্যে গৃহিত হয়, মানবইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃন্যতম অধ্যায়টি।


২য় বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকেই মিত্রশক্তি আচ করতে থাকে, জার্মানী এমন এক বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছে, যা মিত্রশক্তিকে নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে।


এরইমধ্যে মিত্রবাহিনীর সর্বত্রই একটা ভুল খবর প্রচার হয়ে যায় যে,জার্মানি নিউক্লিয়ার উইপেন তৈরি করে ফেলেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে নিক্ষেপ যার সময়ের ব্যাপারমাত্র (কিন্তু তখন ও জার্মানির এক্সপেরিমেন্ট শিশু পর্যায়ে,এবং জার্মানের হাইকমান্ড ও এই প্রজেক্ট নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন)। যুদ্ধক্ষেত্রে নিক্ষেপ যার সময়ের ব্যাপারমাত্র।


ফলে আমেরিকা মরিয়া হয়ে ওঠে,আর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মানেলে ১৯৪৫ সালের শেষদিকে তারা পারমাণবিক বোমা প্রস্তুত করে ফেলে।


কিন্তু ততদিনে জার্মান বা অক্ষশক্তি যুদ্ধে আত্নসমর্পণ করে ফেলে।



তাই জার্মানিতে আর আমেরিকার সাধের বোমাটা ফেলা হয়নি।প্রজেক্ট আর বিলিয়ন ডলার হালাল করার জন্য অক্ষপক্ষের আরেক শক্তি জাপানের উপরিই তাই বোমা নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।



এই সেই বিখ্যাত বিমান (Enola-gay)যেটাতে করে জাপানের উপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিলো


কিন্ত জাপানের বোমা ফেলার জন্য শুধুমাত্র একটা কারনেই যথেষ্ট নয়।এর পিছনে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফেক্টর কাজ করেছে।


এই যুদ্ধে সবচেয়ে একরোখা জাতি ছিলো জাপানিজরা৷ যুদ্ধের শুরু থেকেই তারা বর্বরতার পরিচয় দিলেও,শেষদিকে তাদের বর্বরতা যেকোনো সময়ের চেয়েও হার মানাচ্ছিলো। আমেরিকা তাদের বিপুল পরিমান শক্তি প্রয়োগ করেও জাপানকে হার মানাতে পারছিলোনা।

যুদ্ধ পরবর্তী এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে,আমেরিকা যদি সে সময় বোমা না ফেলে জাপানকে আত্নসমর্পণে বাধ্য না কর‍তো তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বোমা আরো বেশি হতো।

ইউরোপে যুদ্ধের ফলে আমেরিকাসহ সকল মিত্রবাহিনীর রিজার্ভ টান পড়ছিল। তাই মিত্রবাহিনক চাইছিল দ্রুততম সময়ে যুদ্ধ শেষ করতে। সেসময় আমেরিকার কাছে পারমাণবিক বোমা ব্যাতিত আএ কোনো অপশন হাতে ছিলো না।

মিত্রবাহিনীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্র হলেও তাদের মধ্যে মনঃস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ লেগেই থাকতো। ২য় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে জাপানের অবস্থা যখন খুব একটা সুবিধার নয়।সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন জাপান দখলের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে মূলত আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্মকাণ্ডে পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে।

১৯৪৫ সালে লাইফ (ম্যগাজিন) একটি নিবন্ধে উল্লেখ করে যে হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার আগে, হয়তো ১০ থেকে ১২ জন মানুষ জানত এই প্রজেক্টের আসল অর্থ কি, এবং হয়তো এক হাজারের খুব বেশি মানুষের বিন্দুমাত্র ধারণাই ছিল না পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে। ম্যাগাজিনের মতে প্রোজেক্টের ১ লাখ এর মত কর্মচারী অন্ধকারে ইঁদুরের মত কাজ করত। কোন তথ্য পাচারের শাস্তি ছিল, ১০ বছরের জেল অথবা ১০ হাজার ডলার জরিমানা।

Tonmoy Shek
tonmoyshek
536 Points

Popular Questions