তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলবেন? এর উত্থান ও পতন সম্পর্কে কিছু বলুন।

1 Answers   3.7 K

Answered 2 years ago

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের অধুনালুপ্ত একপ্রকারের শাসন ব্যবস্থা, যার অধীনে দুইটি নির্বাচিত সরকারের মধ্যবর্তী সময়কালে সাময়িকভাবে অনির্বাচিত ব্যক্তিবর্গ কোন দেশের শাসনভার গ্রহণ করে থাকে। সাধারণত নির্বাচন পরিচালনা করাই এর প্রধান কাজ হয়ে থাকে। ২০১১ সালের ১০ মে বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেয়। এছাড়াও বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনী অনুসারে দুই নির্বাচনের মধ্যকার সময়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৩ মাসের জন্য ক্ষমতা গ্রহণ করে। এসময় সুপ্রিম কোর্ট হতে সর্বশেষ অবসর গ্রহণকারী প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে এক দল নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলী সাহায্য করে থাকে। তবে এসময় সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব রাষ্ট্রপতির হাতে থাকে।

আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত

একটি মত অনুসারে এ অভিনব পদ্ধতি প্রথম প্রস্তাব করেন আশির দশকে জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম। তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে জামায়াত আয়োজিত এক জনসভায় এ ফর্মুলা পেশ করেন। আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর পক্ষ থেকে দাবী করা হয় এই পদ্ধতির উদ্যোক্তা তারাই। বিএনপির নেতা নাজমুল হুদাও নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাবক হিসেবে দাবি করেন। তিনি বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য বিএনপি তাকে পঞ্চম জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করে। সাম্প্রতিককালে ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সিএম শফি সামী বলেন, বাংলাদেশের সমস্যাগ্রস্ত আমলাতন্ত্রের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়েছে।

বিল উত্থাপন:

সর্বপ্রথম জামায়াত এবং তারপর আওয়ামী লীগ ১৯৯৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিল সংসদ সচিবালয়ে পেশ করে৷ এতে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ ও নির্বাচনের সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবমুক্ত করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করা উচিত৷ কিন্তু বিএনপি প্রথম থেকেই এ দাবি অসাংবিধানিক বলে অগ্রাহ্য করতে থাকে। ১৯৯৪ সালে সংসদ ভবনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ, জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ওই রূপরেখাকে অসাংবিধানিক ও অবাস্তব বলে ঘোষণা করেন৷। বেগম জিয়া বলেন, একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। কমনওয়েল মহাসচিব সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মাঝে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ এরপর নভেম্বরে কমনওয়েলথ মহাসচিবের প্রতিনিধি স্যার নিনিয়ান সমঝোতা প্রচেষ্টা চালান; কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন।

সংবিধান হতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল:

২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনী বিলের ২০ ও ২১ নম্বর প্রস্তাবনায় বলা হয়, সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইবে। সংবিধানের ২(ক) পরিচ্ছেদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হইবে। প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পদসংক্রান্ত ১৫২ অনুচ্ছেদ সংশোধন ও ক্রান্তিকালীন এবং অস্থায়ী বিধানাবলী সংক্রান্ত ১৫০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নব্বই দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন: সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব রেখে বিলে বলা হয়, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে—ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; এবং খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে’ প্রতিস্থাপিত হবে।

Mahbub Alom
mahbubalom
389 Points

Popular Questions