Answered 2 years ago
একবার ফেসবুকে এক নারী নামধারী ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল যার প্রোফাইলে দেওয়া ছিল তিনি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। আমি ভাবলাম ঢাকা কলেজ হয়তো মেয়েদের জন্যও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমার ঢাকা কলেজের বন্ধুকে এ কথা জানাতেই ওর মন দুঃখ ও ভারাক্রান্ত হয়ে গেল, কারণ বান্ধবীহীনা জীবন নাকি তার আর ভালো লাগে না
আরেকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জুনিয়র মেয়ে দাবি করেছিল তার বয়ফ্রেন্ড নাকি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করে। আমি তাকে সাবধান করে দিতে চেয়েছিলাম যে এ কথা যেন সে কাউকে না বলে। কারণ বাংলাদেশে সমকামিতার বৈধতা নেই। কিন্তু তার আগেই সে এক সুদর্শন তরুণের ছবি দেখিয়ে দিল। আমি ভাবলাম ইডেন কলেজ হয়তো নীতি পরিবর্তন করে ছেলেদেরও পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছে। মনে মনে ভাবছিলাম ঢাকায় গেলে কোনো পরিচিতি খুঁজে নিয়ে ইডেনের হোস্টেলে কয়েক রাত থাকা যাবে। কিন্তু এবারও আমায় হতাশ হতে হলো। ইডেন কলেজের সামনে গিয়ে দেখলাম কোনো ছেলের পড়াশোনা তো দূরের কথা গেটের ভিতরেই প্রবেশ করতে দেয় না। বেচারা ছেলেগুলোর নিরুপায় হয়ে সন্ধ্যার পর প্রেয়সীর সাথে একটু সময় কাটানোর ফুটপাতেই আস্থা রাখতে হয়। এই কলেজের খালাদের সাথে কথা বললে একেকজনকে আপনার নবাবদের আত্মীয়-স্বজনও মনে হতে পারে।
ইডেন কলেজ আদিতে ছিল ব্রাহ্ম মেয়েদের একটি পাঠশালার মতো। পরে এটি ঢাকা ফিমেল স্কুলে রূপান্তরিত হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এটিকে তৎকালীন গভর্নরের নামানুসারে ইডেন গার্লস স্কুল নামে নামকরণ করা হয়। এটি ছিল বাংলা এবং আসামের মধ্যে প্রথম ও সেরা গার্লস স্কুল। পরে এটিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত করা হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮ সালে ইডেন কলেজ ও কামরুন্নেছা স্কুলের কলেজ শাখা একীভূত হয়ে বকসীবাজারে ইডেন গার্লস কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯৬২ সালে আজিমপুরে ১৮ একর জমির উপর গড়ে ওঠে ইডেন কলেজ। কলেজটি নতুন প্রাঙ্গণে স্নাতক কার্যক্রম চালু করে, কিন্তু এর উচ্চ মাধ্যমিক শাখা বকসীবাজারেই অব্যাহত থাকে। পর্যায়ক্রমে কলেজটির আজিমপুর শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাস এবং বকসীবাজার শাখায় ডিগ্রি ক্লাস চালু হয়। পরবর্তী সময়ে বকশিবাজার শাখার নামকরণ হয় সরকারি বালিকা মহাবিদ্যালয়। এরই পরিবর্তিত নাম বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলজ। ১৯৬৩ সাল থেকে আজিমপুরের ইডেন কলেজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইডেন মহিলা কলেজ নামে পরিচালিত হয়।
ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠারও মূল কৃতিত্ব ইংরেজদের। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ইংলিশ সেমিনারী স্কুলকে একটি কলেজে বা একটি আঞ্চলিক উচ্চতর ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়, যার নাম দেয়া হয় ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ বা সংক্ষেপে ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা ইংলিশ সেমিনারী স্কুলের নাম দেওয়া হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। বলাবাহুল্য, এ কলেজ প্রতিষ্ঠার পরপরই বদলে যায় সমগ্র ঢাকার চিত্র। ঢাকা হয়ে ওঠে সমগ্র পূর্ববাংলার ইংরেজি শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। কেমব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং হিন্দু কলেজের শিক্ষক জে. আয়ারল্যান্ডকে ঢাকা কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়। তার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে থাকে ঢাকা কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক এবং শিক্ষাগত ব্যবস্থাপনার ভিত্তি। সে অর্থে আয়ারল্যান্ডই ঢাকা কলেজের সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। তিনি কলেজের শিক্ষাদান ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। মজার বিষয় হচ্ছে ইংরেজরা ঢাকা কলেজের জন্যই কার্জন হল তৈরি করেছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ঢাকা কলেজের অনেক অবকাঠামো ও জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয়। মূলত ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা কলেজের কাছে ঋণী। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান আমলে ঢাকা কলেজ বর্তমান জায়গায় চলে আসে। ২৪ একর জমির ওপর ছিল ঢাকা কলেজ। তবে এরশাদ সরকারের সময় ৬ একরর জমি ছেড়ে দিতে হয়।
কারণ এই ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তখন ছেলে-মেয়ে সহশিক্ষা তো দূরের কথা, একসাথে দেখা করারও রীতি ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র যদি কোনো আত্মীয় ছাত্রীর সাথে দেখা করতো তবে এর জন্য লিখিত দরখাস্ত দিতে হতো। দরখাস্ত অনুমোদন হলে দেখা করতে দেওয়া হতো তবে সাথে একজন শিক্ষক থাকতেন।
sohag360 publisher