সম্পর্কিত
লগ্ন কুন্ডলী ও ভাব চলিত কুন্ডলীকে কেমনভাবে দেখা হয় প্রাধান্যতার বিচারে?
ধরুন একজন জাতকের জন্ম হয়েছে, ৫° তে। মানে লগ্ন ডিগ্রি ৫। ধরুন এই জাতকের বৃহস্পতি ২৯°তে চতূর্থ ভাবে।
এবার আপনি ধরুন যে জাতকের ছকের সূত্রপাত হচ্ছে ৫° তে, তাহলে সেটা হলো প্রমুখ বিন্দু। কুষ্ঠির একটি ভাব, ৩০°। এবার যদি আপনাকে বলা হয় যে একটি ভাবে ৩০ টি দাগ কেটে ৩০ ডিগ্রি দেখান।এই ভাবে প্রত্যেকটি ভাবে, যদি ৩০ টি দাগ কাটেন তাহলে একটি ঘড়ির ডায়েলের মতন বৃত্ত তৈরী হয়ে যাবে। এবার এই বৃত্তের উপর যেই গ্রহ যেই ভাবে যেই ডিগ্রিতে আছে, তাকে বসিয়ে দিন। তাহলে এবার এই লগ্নের ৫ ডিগ্রি আপনি কোথায় দেখাবেন। যদি ডান দিক থেকে বাম দিকে সব গ্রহের ঘূর্ণায়মান পথ হয়, তাহলে লগ্নের এই পাঁচ ডিগ্রী আপনি দেখাবেন, প্রথম ঘর/ ভাবের ডান দিকে। কারণ এটি হলো প্রারম্ভের ডিগ্রি। আর বৃহস্পতিকে কোথায় দেখাবেন? চতূর্থ ঘরে একদম শেষের দিকে।
এবার ধরুন আপনাকে বলা হলো যে যেহেতু লগ্নের এই পাঁচ ডিগ্রি হলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই একে ভাব মধ্য করে নিতে হবে। তাই আপনি এই পাঁচ ডিগ্রির বিন্দুকে ভাবের মধ্যে নিয়ে আসুন। তাহলে আপনি এই বৃত্তকে বাম দিকে ঘুরিয়ে দেবেন। তাহলে এই পাঁচ ডিগ্রী প্রথম ভাবের মধ্যে চলে আসবে। তাহলে এবার এই প্রথম ভাব আরম্ভ হবে ৫টিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি আগে থেকে আর শেষ হবে ৫ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি পরে। তাহলে আপনার প্রথম ভাব ২০ ডিগ্রি মীন থেকে শুরু হলো আর ২০ ডিগ্রি মেষ রাশিতে শেষ হলো।
এই কথা বলার সহজ অর্থ হলো আপনার একটি ভাব নির্ভেজাল একটি রাশির ফল না দিয়ে দুটি রাশির মিশ্রিত ফল দেবে। এবং তাতে কোনো নির্দিষ্ট গ্রহ যেখানে অবস্থিত তার অনুরুপ তার ফল হবে।
রাশি চক্রে একজনের জন্মের দিন গ্রহরা যেই অবস্থানে ছিলো, তা তো আপনি নিজের ইচ্ছায় পরিবর্তন করতে পারেন না। অনেকের ধারণা এই দিয়ে আপনি তাই করছেন। কিন্তু আসলে আপনি তা করছেন না। রাশি চক্র ও গ্রহ নিজের যায়গাতেই আছে। আপনি ভাবকে, কুষ্ঠির ঘরের অবস্থানকে পরিবর্তিত করছেন।
নোট: উপরের ছবিতে(৪ ও ৫) ক্ষেত্র মাপন রেখাগুলির স্থান পরিবর্তন করলেও গ্রহদের স্থান(ক্ষেত্র সংখ্যা) পরিবর্তিত হয়েছে বলে প্রতীত হচ্ছে যদিও গ্রহ সেই সমান স্থানেই আছে।
ধরুন একজনের লগ্ন ডিগ্রী ২১। এবার একে যদি ভাব মধ্য করতে হয়, তাহলে আপনি এই বৃত্তকে ডান দিকে ঘোরাবেন। তখন যেই গ্রহরা কোনো ভাবে একদম প্রারম্ভের ডিগ্রিতে ছিলো, তারা পিছিয়ে গিয়ে যেই ভাবে ছিলো তার আগের ভাবে চলে যাবে। এখানে আপনাকে বুঝতে হবে যে দেখতে মনে হচ্ছে, যে আপনি রাশি চক্রকে ঘোরাচ্ছেন, কিন্তু আসলে আপনি ভাবের কাঠামোকে চালাচ্ছেন, বা তাকে নড়িয়ে দিয়ে ভাবের মধ্যে ভাগে রাশির একটি বিন্দুকে আনছেন। কুষ্ঠির ঘরের যে কাঠামো, তাকে আপনি রাশি চক্রের উপর ঠিক যায়গায় বা আকাঙ্খিত স্থানে বসাচ্ছেন।
এই জন্য আপনি লক্ষ করবেন যে লগ্ন ছকে গ্রহদের রাশি ও ডিগ্রি লেখা থাকে, কিন্তু ভাব চলিত ছকে গ্রহদের ডিগ্রি বা রাশি লেখা থাকে না। তার অর্থ গ্রহ রাশি চক্রে যেখানে ছিলো সেখানেই আছে। কিন্তু যেহেতু আপনি রাশি চক্রের একটি বিন্দু কে নির্দিষ্ট ভাবের ‘মধ্যে’ আনতে চাইছেন, তাই আপনি এই চলন movement ‘ভাবের’ করছেন। তাতে কোনো কোনো গ্রহ অন্য ভাবে চলে যাচ্ছে।এবং এই জন্য এই পদ্ধতির নাম ‘ভাব চলিত’।
ধরুন আমাদের উদাহরণে লগ্ন মেষ রাশি পাঁচ ডিগ্রী ছিলো। যখন এই পাঁচ ডিগ্রি ভাবের মধ্যে যাবে, তখন বৃহস্পতি কর্কট রাশিতে অবস্থিত হয়ে পঞ্চম ভাবে যাবে। এবার আপনি তার ফলাফল বলার সময় বৃহস্পতি কর্কট রাশিতে ও পঞ্চম ভাবে হওয়ার ফলাফল বলবেন। আপনি বৃহস্পতি সিংহ রাশিতে পঞ্চম ভাবের ফল বলবেন না। বৃহস্পতির রাশি কর্কট-ই থাকবে, কিন্তু ভাব চতূর্থ না হয়ে পঞ্চম হয়ে যাবে।
ঠিক এই ভাবে অন্য গ্রহদের বিষয়েও হবে। ফল কথনের সময় আপনি বৃহস্পতির ফলাফল পুরোপুরি পঞ্চম করে বলতে পারবেন না। বা তা মিলবে না। আপনি দুটোকে মিশিয়ে বলবেন।
জ্যোতিষে অনেকে এই পদ্ধতিকে আলাদা করে কোনো গুরুত্ব দেয় না। তার কারণ যখন কোনো গ্রহ প্রারম্ভিক বা শেষের ডিগ্রিতে থাকে তখন সে আগের ঘরের ফলাফল অথবা পরের ঘরের ফলাফল-ও দেবে, তা এমনিতেই প্রযোজ্য নিয়ম। গ্রহের দিপ্তাংশের নিয়ম অনুযায়ী।
তাই এখানে প্রাধাণ্যতার কোনো বিষয়ই নেই। একটি গ্রহ যেই রাশিতে যেই ঘরে আছে, তা তো আছেই, উপরন্তু আরো একটি ভাবের ( রাশির নয়) ফলাফল তার সাথে যুক্ত হবে।
এই রকম সময়ে যেই গ্রহরা ১০ থেকে ২০ ডিগ্রির মধ্যে আছে তাদের উপর তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায় না
এটি হলো একটি পন্থা। এর আরো বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা হয়ে থাকে। একটি পন্থা আছে, অসমান রাশির পন্থা। কিন্তু তাতে কিছু বিশিষ্ট ক্ষেত্রের জন্ম নেওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনো কোনো রাশি অত্যধিক সঙ্কুচিত হয়ে যায়।
ব্যক্তিগত ভাবে, আমি এই পদ্ধতিকে ততক্ষণ খুব গুরুত্ব দেই না, যতক্ষণ না অঙ্ক ইঙ্গিত করছে না, যে এই পদ্ধতি ধরতে হবে। তার মানে, যদি একাধিক বা বেশীর ভাগ গ্রহ যদি প্রারম্ভের ডিগ্রি অথবা শেষের ডিগ্রিতে আছে, তাহলে এই পদ্ধতি একবার জাচাই করে জাতককে প্রশ্ন করে দেখে নিতে হয়। তা না হলে শুধু নতুন কিছু বলার অভিপ্রায় নিয়ে এই পদ্ধতি অবলম্বন করার মানে নেই। অনেকেই জ্যোতিষের প্রারম্ভিক সময়ে, কোনো কিছু খারাপ দেখে, এই পদ্ধতি দিয়ে গ্রহের অবস্থান কোনো ভালো ভাবে দেখে খুশী হওয়ার চেষ্টা করেন। এর আরেকটি কারণ হয়ে থাকে, যে একটি ছকে গ্রহদের যা অবস্থান তা দিয়ে কয়েকটি নির্দিষ্ট ফল কথন করে, তারপর আর বুঝতে পারেন না যে আর কি বলা যায়। তখন কোনো নতুন পদ্ধতি খুঁজে নেন।
যদি আপনি জ্যোতিষে দশা, নক্ষত্র পাদ দশা, ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে এই একটি ছক, আপনার সামনে প্রতি বছরের জন্য নতুন ছক হয়ে আসবে। একটি বছরের জন্য আপনি একটি ছক আট বা তার বেশী ঘরকে লগ্ন বানিয়ে দেখতে পারবেন।
তারপরেও, হ্যাঁ একবার ভাব চলিত ছক অবশ্যই দেখা উচিত। ক্ষেত্র বিশেষে এটি বেশী সঠিক হতে পারে, কিন্তু তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু এর প্রাধান্য বলতে আলাদা বা বিশেষ কিছুই নেই।
abdullahalnafi publisher