চুল পড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় কী?

1 Answers   13.5 K

Answered 2 years ago

হেয়ার ড্রপ বা চুল পড়া একটি অতি সাধারণ সমস্যা। সুস্থ্যাবস্থায়ও হেয়ারড্রপ হয়, কিন্তু যখন তা মাত্রাতিরিক্ত তখনই এটি সমস্যার কারণ হয়।

অপরিমিত হেয়ারড্রপ বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। তবে সাধারণত: অন্য কোন জটিল সমস্যা না থাকলে আমলা (আমলকি) তৈলের ব্যবহার চুলের গোড়া শক্ত করে, চুলে পুষ্টি যোগায় এবং হেয়ারড্রপ স্বাভাবিক রাখে।

আমলা তৈল বাজার থেকে না কিনে নিজে তৈরী করা উত্তম। কারণ বাজারে যে সকল আমলা তৈল আছে তাতে অনেক ক্যামিকেল ও ভেজাল থাকার কারণে তা হীতে বিপরীতও হতে পারে।

আপনি চাইলে খুব সহজে বাড়িতেই তৈরি করে ফেলতে পারেন আমলা তেল। একাধিক পদ্ধতি রয়েছে তবে তার মধ্যে অন্যতম সহজ উপায় এখানে তুলে ধরা হল। কম খরচে সহজেই আমলা তেল বানিয়ে ফেলুন এভাবে :

১ম পদ্ধত

কী কী উপকরণ প্রয়োজন

১টি আমলা

১ চামচ নারকেল তেল

কীভাবে তৈরি করবেন

প্রথমে আমলাটি গ্রেড অথবা ব্লেন্ড করুন এবং সেটা থেকে নিংড়ে রস বের করে নিন।

এক পাত্রে নারকেল তেল এবং আমলকির রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।

একটি বড় পাত্রে গরম জল নিয়ে তার উপর মিশ্রণের বাটি রেখে দিন। নারকেল তেল ভালো করে গলে গেলে মিশ্রণটি স্কাল্প ও চুলে মালিশ করতে পারেন।

২য় পদ্ধতি

কাঁচা আমলকি ছাড়া শুকনো আমলকি দিয়েও আমলা তেল বানিয়ে ফেলতে পারেন।

কী কী উপকরণ প্রয়োজন

১ চামচ শুনো আমলা

৫ চামচ নারকেল তেল

কীভাবে তৈরি করবেন

এক স্টেনলেস স্টিলের পাত্রে শুকনো আমলা এবং নারকেল একসঙ্গে দিয়ে হালকা আঁচে গরম করুন। মাঝে মাঝে মিশ্রণটি নাড়তে থাকুন। ৮-১০ মিনিট পর দেখবেন সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে পাত্রটি গ্যাস থেকে নামিয়ে ঢাকা দিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর ভালো করে মিশ্রণটি মিশিয়ে ও ছেঁকে নিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে ঢেলে রাখুন। এভাবে বাড়িতেই আমলা তেল তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন।

৩য় পদ্ধতি

কী কী প্রয়োজন

১২০ গ্রাম আমলা পাউডার অথবা শুকনো আমলকি

১ লিটার জল

২৫০ml নারকেল তেল অথবা তিলের তেল

কীভাবে বানাবেন

একটি পাত্রে ১০০ গ্রাম আমলা পাউডার ১ লিটার জলে মিশিয়ে গরম করতে দিন। মিশ্রণটি ফুটে গেলে আঁচ কমিয়ে দিন। যতক্ষণ না জল কমে যায় মিশ্রণটি নাড়়তে থাকুন। তারপর গ্যাস থেকে নামিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিন।

এরপর একটি মোটা স্টেনলেস স্টিলের পাত্রে নারকেল তেল, বাকি ২০ গ্রাম আমলা পাউডার এবং আগে থেকে তৈরি করে রাখা মিশ্রণটি একসঙ্গে মিশিয়ে আবার গরম করতে দিন। ফুটতে শুরু করলে আঁচ কমিয়ে দিন এবং মিশ্রণটি আসতে আসতে নাড়তে থাকুন। জল একেবারে শুকিয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। দেখবেন হলুদ রঙের তেল উপরে উঠে এসেছে। কাঁচের পাত্রে তেল ঢেলে এমন জায়গায় রাখুন যাতে সরাসরি সূর্যরশ্মি না পৌঁছায়।

কীভাবে আমলা তেল ব্যবহার করবেন

চুল পড়া রোধ করতে ২ চামচ আমলা তেলের সঙ্গে ২ চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে স্কাল্পে মালিশ করুন। কিছুক্ষণ রেখে হালকা গরম জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

আমলা তেল চুলের জন্য দুর্দান্ত কনডিশনার। স্কাল্পে তেল ভালো করে মালিশ করুন। ১৫ মিনট পর হালকা গরম জল দিয়ে চুল ধরয়ে ফেলুন। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চমৎকার এই তেল নারী পুরুষ উভয়েই যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে। নারকেল তেলের সঙ্গে আমলা তেল মিশিয়ে ব্যবহার করুন, চুলে প্রোটিনের ঘাটতি পূর্ণ হবে।

আমলা তেলের পুষ্টিগত মান

আমলার মধ্যে কম পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, কার্বোহাইড্রেট, সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

প্রতি ১০০ গ্রাম আমলা তেলে ৮১.৮% আদ্রতা এবং ০.৫ মিলিগ্রাম মিনারেল থাকে। এটিতে কার্বোহাইড্রেট ১৩.৭% এবং ক্যালসিয়াম ৫০%, ক্যারোটিন ৯ মাইক্রোগ্রাম এবং ৯৬ ug ক্যালোরি রয়েছে (৯)।

পুষ্টি

প্রতি ১০০ গ্রামে পুষ্টিমান

ক্যালোরি ৪৮, টোটাল ফ্যাট ০.৫ গ্রাম, পটাসিয়াম ০.০৬, টোটাল কার্বোহাইড্রেট

১০ গ্রাম, প্রোটিন ১গ্রাম, আমলা তেলে উপস্থিত ভিটামিন এবং মিনারেল:

ভিটামিন ৬ %, ক্যালসিয়াম ০.০৩, ভিটামিন সি ৮০০ %, আয়রন ৬ %, ভিটামিন B-6 ৪ %, ম্যাগনেসিয়াম ২ %

এ ছাড়াও কাঁচা বা শুকনো অথবা তৈল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এই তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। এবার আমলা তেলের স্বাস্থ্যগুণ গুলো জেনে নিন

১. খুশকি দূর করে : আমলা তেল চুলে পুষ্টি জোগায় সেইসঙ্গে চুলের নানান সমস্যা দূর করে। এই ব্যবহারে খুশকির সমস্যা দূর করতে পারবেন । নিয়মিত এই তেল স্কাল্পে ম্যাসাজ করতে পারেন। স্কাল্পের শুষ্কভাব দূর হবে এবং খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন ।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান : আমলা তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে । চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে আমলা তেলের সঙ্গে তিলের তেল এবং মিনোক্সিডিল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। টাক পড়া রোধ করতে এটি অন্যতম ওষুধ।

৩. হার্টের সুস্বাস্থ্য : আমলা তেল ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যান্টোসায়ানিন, পটাসিয়াম এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের অন্যতম উৎস, যা রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে আমলা তেল ।

৪. চুল পড়া কমায় : আমলা তেলে রয়েছে ভিটামিন সি এবং এটি চুল পড়ার সমস্যা কমায়, চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । চুলে এর পুষ্টি পৌঁছে দিতে সামান্য তেল নিয়ে স্কাল্পে ভালো করে মালিশ করে নিন।

৫. প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : আমলা তেল ভিটামিন সি-এর অন্যতম উৎস যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নানা রকম সংক্রমণ যেমন, সর্দি, কাশি এবং ফ্লু ইত্যাদি বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা জোগায় শরীরে। এর অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান অন্ত্রে সংক্রমণ রোধ করে এবং নিরাময়ে সাহায্য করে ।

৬. অকাল বার্ধক্য রোধ করে : ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি-এর ঘাটতি অকালেই চুলে পাক ধরাতে পারে। এই ঘাটতি পূরণ করতে আমলা তেল ব্যবহার করুন। এটি শরীরকে পুষ্টি জোগায় এবং বার্ধক্য রোধ করে ।

৭. ত্বকের সুস্বাস্থ্য : আমলা ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে। এই তেলের ব্যবহার লোমকূপ মুখ বন্ধ হওয়া আটকায় এবং ব্রণ, ফুসকুড়ির সমস্যা এড়াতে পারবেন। আমলা তেলে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকে ময়েশ্চেরাইজ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

৮. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে : আমলা তেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায় এবং তা নিরাময় করতেও সাহায্য করে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রেটিনাকে রক্ষা করে ।

৯. ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী : ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম ওষুধ হল আমলা তেল, যার ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ।

তাই, আর দেরী নয়। এখন থেকেই কাঁচা আমলা খাওয়া শুরু করতে পারেন। রাস্তার পাশে দোকান থেকে 5 টাকার আমলকি কিনে একটি গালের ভেতর ঢুকিয়ে রাখুন এবং একটু একটু করে রস নিতে থাকুন।

মনে রাখবেন, এটি একটি অভ্যাসে পরিণত করুন।

ধন্যবাদ।

Ahona Sardar
ahonasardar
463 Points

Popular Questions