Answered 3 years ago
অন্য সবাই খুব ভালো লিখেছে। আমি ভাবলাম একটু অন্য জিনিস বলি যারা কোয়ান্টাম মেকানিক্স জানতে আগ্রহী তাদের জন্যে ।
দেখ একটা কথা আছে যে, জিনিস চোখে দেখলে বিশ্বাস হয় । তা ভাবলাম এই কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি জিনিস সেটা একটু খালি চোখে দেখলে কেমন হয় ? আমার ছেলে (দশম শ্রেণীতে পড়ে) একদিন জিজ্ঞেস করছিলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি (গেম খেলতে গিয়ে শুনেছে মনে হয়) ? । আসলে বুজতে পারছো এই জিনিসটা এতটাই বিমূর্ত (অ্যাবস্ট্রাক্ট) যে তাকে বলে বোঝানো খুব মুশকিল । অংক কষে করলে তো আরো মাথা গুলিয়ে যায় । তাই ভাবলাম একটা সত্যিকারের এক্সপেরিমেন্ট করে চোখের সামনে দেখালে ওই কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি সেটা অনেক ভালো অনুভূত হবে । সত্যিই কি দেখা যায় ? হ্যাঁ যায় । তাই সেটা করে দেখাচ্ছি তোমাদের । ভিডিও দিলাম না, কারণ অন্ধকার ঘরে এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে ওই একই হাতে ভিডিও রেকর্ড করা খুব শক্ত। তাই শুধু ছবি রইলো।
আমার কাছে একটা সীল করা কাঁচের টিউব আছে দেখো, যাতে ৩ টে মেটাল এর পাত বা জাল (ইলেক্ট্রোড) আছে । অর্থাৎ একটা সাদা 'চাকতি (১) ', একটা 'ইলেকট্রন এমিটার" (যা ইলেকট্রন ছাড়ে), (২) সাদা চাকতির গায়ের খুব কাছে আছে একটা 'জাল' (৩), আর তার সঙ্গে ভেতরে একটু মার্কারি (পারদ) ফোঁটা দেওয়া আছে (ওই যে কাঁচের গায়ে লেগে থাকা চক চকে ছোট ফোঁটা গুলো) । চাকতি কে একটা ব্যাটারীর নেগেটিভ লাগিয়েছি , জাল ও ইলেকট্রন এমিটার কে ব্যাটারীর পজেটিভে লাগিয়েছি । এবারে বাইরে থেকে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে টিউবটা একটু গরম করলাম যাতে ভেতরের মার্কারি ফোঁটা গুলো বাস্প হয়ে গিয়ে গ্যাস হয়ে যায় । এবারে ঘরের লাইট নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে দিলাম । এবারে চাকতির নেগেটিভ ভোল্টেজ একটু একটু করে বাড়াচ্ছি, কিন্তু যেই ওই ভোল্টেজ ৪.৯ ভোল্ট হবে তখন জাল আর ইলেকট্রন এমিটার এর মধ্যে প্রথমে একটা নীল রং এর পোটি (ব্যান্ড) দেখতে পাবে । এবারে আবার ভোল্টেজ বাড়াতে থাকলে আস্তে আস্তে পরের পোটি (ব্যান্ড) তৈরি হবে এবং প্রতি ৪.৯ ভোল্ট পর, একটা করে নতুন পোটি (ব্যান্ড) আসবে । মানে দ্বিতীয়টা আসবে ৯.৮ ভোল্টএ । এই পোটিগুলো মার্কারির শক্তি পটি (এনার্জি লেভেল), সেই যে বিজ্ঞানী নিলস বোর কল্পনা (হাইপোথিসিস) করে যার তত্ত্ব বের করেছিলন । তার মানে মার্কারির শক্তি ঐরকম আলাদা আলাদা আলাদা পোটি (মানে ডিসক্রিট) হিসাবে থাকে, একটানা থাকে না, একটানা থাকলে তুমি পুরো জায়গাটায় টানা আলো দেখতে পেতে, ওরকম ছাড়া ছাড়া পোটি নয় । তাহলে চোখের সামনে দেখতে পেলে যে ওই মার্কারির শক্তি, পোটি হিসাবে থাকে, মানে মার্কারির শক্তি কোয়ান্টাইসড মানে ডিসক্রীট (পোটি হিসাবে) হিসাবে থাকে একটানা হিসাবে থাকে না । ব্যাপারটা একদম চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে । আসলে হচ্ছে কি এখানে ইলেকট্রন মার্কারি পরমাণু কে ধাক্কা দিয়ে প্রথম শক্তি পোটি থেকে (n =১) থেকে দ্বিতীয় শক্তি পোটি (n =২) বা এনার্জি লেভেল এ তুলে দিচ্ছে, কিন্তু সেই মার্কারি পরমাণু আবার যখন প্রথম শক্তি পোটি n=১ এ নেমে চলে আসছে তখন শক্তিটা আলো হিসাবে ছেড়ে দিচ্ছে বা যাকে বলে বিচ্ছুরিত করছে আর আমরা পোটিগুলো চোখে দেখতে পাচ্ছি ।
কিন্তু কি ভয়ঙ্কর গায়ে কাঁটা দেওয়া ব্যাপার দেখলে ভাব, ওই ছোট্ট ইলেকট্রন বা মার্কারি পরমাণু যারা এত ছোট (অ্যাংস্ট্রম মাপের) যে যাদের সাদা চোখে কেন, মাইক্রোস্কোপেই দেখা যায় না, তারা আবার ধাক্কা ধাক্কি করছে না কি করছে কে জানে, আর শক্তি তো কোনো জিনিস নয় যে হাতে ছুঁয়ে দেখা যাবে । কিন্তু এমন এক এক্সপেরিমেন্ট ডিজাইন করা হলো যে তাতে ওই ধাক্কা ধাক্কির মাধ্যমে অদৃশ্য শক্তি পোটি গুলো চোখের সামনে দৃশ্যমান ও 'বড়' (magnify) করে যেন ছবির মতো এঁকে দেখিয়ে দেওয়া হলো ('ইলেকট্রন এমিটার' থেকে 'জাল' পর্যন্ত জায়গাটা প্রায় ৪ cm লম্বা ! পুরো জায়গাটা জুড়ে শক্তি পোটি দেখা যায়) ।
এই এক্সপেরিমেন্টটা প্রথম করেছিলেন জার্মান পদার্থবিদ জেমস ফ্রান্ক ও গুস্তাভ হার্টজ (১৯১৪ সালে) এবং এটাই কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর প্রথম ডাইরেক্ট এক্সপেরিন্টাল প্রমান, মানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স যে সঠিক ও পরমাণুর শক্তি স্তর যে ঐরকম পোটির মতো থাকে (কোয়ান্টাইসড) এবং নিলস বোর এর তত্ত্ব ((হাইপোথিসিস) যে সঠিক ছিল হাতে নাতে তার প্রথম ডাইরেক্ট এক্সপেরিমেন্টাল প্রমান (কারণ কষলে দেখা যাবে মার্কারির n =১ ও n =২ শক্তি স্তরের তফাৎ (E২ -E১) এক্সাক্টলি ৪.৯ eV মানে যে ভোল্টেজ এ ওই পোটি দেখা গেলো) । এই অসামান্য কাজের জন্যে জেমস ফ্রান্ক ও গুস্তাভ হার্টজ ১৯২৫ সালে পদার্থবিদায় নোবেল প্রাইজ পান । এই এক্সপেরিমেন্ট দেখে আইনস্টাইন এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে বলেছিলেন, এই এক্সপেরিমেন্টটা এতটাই ভীষণ রকমের সুন্দর যে ওটা দেখলেই ওনার কান্না পায় । যাইহোক এই শক্তি পোটি নিজের চোখে দেখে আমার ছেলে বললো যে হ্যাঁ সে এবারে ব্যাপারটা বুজতে পেরেছে । (তবে কান্না নাকি এখনো পাইনি, তবে খুব সুন্দর মনে হয়েছে তার !) । এবারে তোমরাও বলতে পারবে যে হ্যাঁ ওই সব খাতার অংক বা মনের কল্পনা ছাড়ো, আমি নিজের চোখে দেখেছি যে পরমাণুর শক্তি স্তর কোয়ান্টাইসড মানে ডিসক্রীট (পোটি হিসাবে) হিসাবে থাকে । এর থেকে আর বড় প্রমাণ কি আছে !
aabonti publisher