কোয়ান্টাম টানেলিং কী, এটি কীভাবে হয়?

1 Answers   14.5 K

Answered 3 years ago

কোয়ান্টাম মেকানিক্স হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর বহুল আলোচিত বিষয়বস্তুগুলোর একটা। সাধারণ ক্লাসিক্যাল ফিজিক্সে যেসব কাজ আমরা অসম্ভব বলে জানি সে সব কাজ কোয়ান্টাম জগতে কেবল সম্ভবই নয়, তাদের ছাড়া কোয়ান্টাম জগতই অচল। কোয়ান্টাম টানেলিং হচ্ছে তেমনি একটি কাজ।


অনেকেই এই ব্যাপারে জানতে আগ্রহী যে এই কোয়ান্টাম টানেলিং জিনিসটা আসলে কি, আর আমাদের প্রতিদিনের জীবনে এর দরকারই বা কি। তাহলে চলুন ঘুরে আসা যাক কোয়ান্টাম জগতের সেই অত্যাশ্চর্য দুনিয়া থেকে।


আমাদের চারপাশের বস্তুগুলোর ওপর সাধারণত ফিজিক্সের দুইটা নিয়ম কাজ করে। সাইজে বড়সড় জিনিসের গতি প্রকৃতি আমরা ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স দিয়ে খুব সহজেই নির্ভুল ভাবে পরিমাপ করতে পারি। এর সাহায্যে একটা বল কিভাবে ছুড়ে মারলে তা কতদুর যাবে থেকে শুরু করে গ্রহ-নক্ষত্র কিভাবে একে অপরকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াচ্ছে সে সবই একদম ঠিকঠাক বলে দেয়া যায়।


কিন্তু গন্ডগোলটা বাঁধে ছোট জিনিসের বেলায়। একটা ইলেকট্রন বা তার চেয়েও ক্ষুদ্র কোয়ার্কের আচার-আচরণ ব্যাখ্যা করতে গেলে কিছু কিছু জায়গায় ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স আটকে যায়। সেখানেই শুরু হয় কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কেরামতি।


শুনতে ম্যাজিক বা অবাস্তব কাহিনীর মত মনে হলেও কোয়ান্টাম জগতের নিয়মকানুন আমাদের বাইরের বড়সড় বস্তুদের জগতের থেকে একদম আলাদা। কোয়ান্টাম টানেলিং হচ্ছে কোয়ান্টাম জগতের এমনই একটা নীতি যা আমাদের কমন সেন্স দিয়ে চিন্তা করতে গেলে আমাদের মাথায় জট লেগে যাবার গুরুতর সম্ভাবনা থাকে। তারপরও আমি চেষ্টা করছি যাতে যতটা পারি সহজ কথায় বিষয়টা বুঝিয়ে দিতে পারি।


কল্পনা করে নিন আপনি একটি পাহাড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন। নিচের ছবিতে দেখানো জায়গা থেকে আপনি একটি বল খাদে ফেলে দিলেন। তাহলে কি হবে? বলটা খাদের নিচে পৌঁছে সামনের বাঁধা বেয়ে খানিকটা ওপরে উঠবে কিন্তু আপনি যে উচ্চতা বরাবর বলটা ছেড়েছিলেন তার থেকে বেশি উচতায় উঠতে পারবে না।


কারণ শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি অনুযায়ী তার ওপর সঞ্চিত হওয়া স্থিতিশক্তি পুরোটাই গতিশক্তিতে পরিণত হবে আর অভিকর্ষ তাকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টানবে। ফলে বলটা খানিকটা গড়াগড়ি করে শেষমেশ খাদের তলায় গিয়ে স্থির হবে। জোরে বলেন ঠিক কি না?


এখন বলের সামনে যেই বাঁধাটা আছে, বলটাকে বাইরের থেকে কোন রকম ফোর্স না দিলে সেটা কোনভাবেই সেই বাঁধা অতিক্রম করে অন্যপাশে যেতে পারবে না। তাই না?


আমাদের কমন সেন্স কিন্তু এটাই বলে আমাদের। কিন্তু আগেই বলেছি, কোয়ান্টাম জগতের নীতি আমাদের কমন সেন্স দিয়ে চিন্তা করতে গেলে আমাদের মাথায় জট লেগে যেতে পারে। এখানে কোয়ান্টাম টানেলিং অনুযায়ী, বলটা কোন এক সময় সেই বাঁধার ওপর পাশে চলেও যেতে পারে, এমনকি যদিও তা ওপর কোন বাহ্যিক ফোর্স প্রয়োগ করা না হয় তবুও।


কি, মাথা ঘুরে গেল? এখানেই কোয়ান্টাম ফিজিক্স সাকিব খানের মত বলে ওঠে, "জ্বি এটাই সায়েন্স"। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের নীতি অনুযায়ী, মাঝখানের বাঁধাটা যথেষ্ট পাতলা হলে এমন একটা সম্ভাবনা থেকেই যায় যে কোন না কোন ক্ষেত্রে বলটা সোজা সেই বাঁধা ভেদ করে ওপর দিকে চলে যেতে পারবে।


এ যেন ম্যাজিকের ভেল্কি। এই নীতি আমাদের ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স এর জগতে কাজ করলে ব্যপারটা কেমন হত একবার ভেবে দেখুন। আমাদের সবার তখন যখন যেখানে খুশি চলে যাওয়ার সুপার পাওয়ার থাকতো। পাতলা দেয়াল ভেদ করে আমরা অনায়াসে অপর সাইডে চলে যেতে পারতাম। আমাদের তখন কেউ আটকাতে পারতো না। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে দুনিয়ার কোন জেলখানাই কোন কয়েদিকে আটকে রাখতে পারতো না। তারা জেলের দেয়াল ভেদ করে বাইরে পালিয়ে যেত। সে দিক দিয়ে ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স আর কোয়ান্টাম ফিজিক্সের জগত আলাদা হয়ে ভালোই হয়েছে। তাই না?


এখন আসা যাক আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কোয়ান্টাম টানেলিং এর কাজ/দরকার কি? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কোয়ান্টাম টানেলিং না থাকলে আপনি, আমি, আপনার ক্রাশ, আপনার হাতের স্মার্টফোন, এই সুন্দর পৃথিবী কিংবা সূর্য —- কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকতো না।


Tonmoy Shek
tonmoyshek
536 Points

Popular Questions