কীভাবে প্রথম তিন ছাত্রের একজন হব? বিঃদ্রঃ আমি সপ্তম শ্রেণীর।
0
0
1 Answers
9.9 K
0
Answered
2 years ago
ব্যাপারটা খুবই সহজ, আবার খুবই কঠিন। তোমার ক্লাসের দুইজন স্টুডেন্ট আছে আমার তাদেরকে যেসব মোটিভেশান দিয়ে থাকি সেগুলো থেকে কিছু তোমাকেও বলছি।
তোমাদের ক্লাসগুলোতে ভালো রেজাল্ট করা খুবই সহজ। যাস্ট পরীক্ষার সময়টায় একটু সিরিয়াসলি পড়লে আর বছরের অন্য সময়গুলোতে অল্প অল্প পড়লেই ভালো রেজাল্ট করা যায়। তোমার প্রশ্নটা আমার ভালো লেগেছে কারন তুমি শুধু ভালো রেজাল্ট করতে চাওনি বরং প্রথম তিনজনের একজন হতে চেয়েছ। প্রথম তিনজনের একজন হওয়াটা মোটেও সহজ কোন কাজ না। এর জন্য তোমাকে নিজের সাথে কয়েকটা কমিটমেন্টে যেতে হবে। সেই কমিটমেন্টের অন্যতম শর্ত হলো সততা।
তোমাকে অবশ্যই নিজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। আম্মুর ভয়ে/টিচারের ভয়ে/কারো কাছে কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য পড়া যাবে না। পড়তে হবে নিজের জন্য। যদি পড়ায় কোন ফাঁকিবাজি করে থাকো তা আম্মু/টিচারের কাছে মিথ্যা বলে অস্বীকার করা যাবে না। সবসময় সত্যিটা বলতে হবে।
আমি শুরুতেই বলেছি ভালো রেজাল্ট করাটা সহজ। তুমি প্রায় সাবজেক্টেই ৮০+ নাম্বার তুলতে পারবে মোটামুটি পড়ে। এটাকে ভালো রেজাল্ট বলা যাবে। কারন ক্লাসের অনেকেই তোমার চাইতে অনেক কম নাম্বার পাবে। কিন্তু তোমাকে মাথায় রাখতে হবে তুমি শুধু ভালো রেজাল্ট করতে চাচ্ছ না তুমি প্রথম তিনজনের একজন হতে চাচ্ছ। প্রথম তিনজনের একজন হতে হলে যেসব কাজ তোমাকে অবশ্যই করতে হবে সেগুলো হলো-
হার্ড ওয়ার্ক
সফলতা কখনোই হার্ড ওয়ার্ক ছাড়া আসে না। তুমি তোমার সামনে যতজন সফল ব্যক্তি দেখতে পাও, যতজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি দেখতে পাও, যাদেরকে দেখলে তাদের মত হতে ইচ্ছা জাগে তোমার তাদের কেউ হার্ড ওয়ার্ক ছাড়া সফল হয়নি। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের দুই একবছর পর ফর্ম চলে যায় আর গেইল এখনও ছক্কা হাকায় কেন জানো? কারন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা অবসরে টিকটক ভিডিও বানায় আর গেইল তার ফিটনেস বাড়ায়। রোনালদো প্রতিদিন রাত ৯ টায় ঘুমায় আর রাত তিনটায় উঠে বিচে জগিং করে। সালমান খান শাহরুখ খান সারাদিন জিমে পরে থাকে ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য। সবচেয়ে বিনোদনের জায়গা খেলাধুলা আর মুভি। যারা এসব বিনোদন দেয় তাদেরকেই যদি এত পরিশ্রম করতে হয় তাহলে বিনোদন ছাড়া পড়াশোনার মত ব্যাপারে কি আর হার্ড ওয়ার্ক ছাড়া সফলতা আসা সম্ভব? তোমাকে প্রতিদিন খাওয়া, গোসল, ঘুমের মত করে একটা নির্দিষ্ট টাইম পড়তে হবে। প্রতিদিন মানে প্রতিদিন এখানে একদিনও মিস যাওয়া যাবে না। হোক সময়টা কম কিন্তু প্রতিদিন পড়তে হবে।
রেসপন্সিবিলিটি
পড়াগুলোকে মাথার উপর বোঝা হিসেবে মনে করবে। মনে করবে এই বোঝা মাথায় উপর থেকে নামিয়ে ফেলতে পারলেই বাঁচি। মানে পড়াগুলো শেষ করে ফেলতে পারলেই বাঁচি। যতদিন পড়া শেষ হচ্ছে না ততদিন মাথা থেকে বোঝাগুলোও কমছে না।
ফ্রি ফায়ার, টিকটিক
ফ্রি ফায়ার টিকটক এগুলো হচ্ছে বস্তি এপ। বস্তির বখাটে ছেলেরা টোকাইয়ের কাজের ফাঁকে ফ্রি ফায়ার নিয়ে বসবে, চুল বড় রাখবে টিকটকে এসে কান্নাকাটির ভিডিও বানাবে। বস্তির মেয়েরা উদ্ভট উদ্ভব সাজ দিয়ে টিকটকে এসে নাচাগানা করবে এটার জন্যই এই এপ। আমার কথা বিশ্বাস না হলে নিজে অবজার্ভ করে দেখো ফ্রিফায়ার কারা বেশি খেলে, টিকটকে কারা বেশি ভিডিও বানায়৷ তোমার ফোনে এই ধরনের কোন এপ থাকলে এখনই আনইন্সটল করে দেও। তুমি একজন স্টুডেন্ট এবং টপ একজন হতে চাচ্ছ সুতরাং তোমাকে এগুলো থেকে হাজার মাইল দূরে থাকতে হবে।
বন্ধু নির্ণয়
বন্ধু নির্ণয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে তোমাকে৷ আমি সোসাইটির মত তোমাকে বলবো না যে খুঁজে খুঁজে ভালো স্টুডেন্টদের সাথে মিশবে। আমি তোমাকে বলবো খুঁজে খুঁজে ভালো ছেলেদের সাথে মিশবে। ভালো ছেলে আর ভালো স্টুডেন্ট এক কথা না। ভালো ছেলে স্টুডেন্ট হিসেবে ভালোও হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে। তুমি মিশবে ঐসব ছেলেদের সাথে যারা গালি দিতে গেলে মুখে আটকে যায়, যারা অশ্লীল কথা শুনতেও লজ্জা পায়, যারা সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না, যাদের ফ্রি ফায়ার/টিকটকে কোন ইন্টারেস্ট নাই, যারা মেয়েদেরকে অসম্মান করে কোন কথা বলে না। আর যারা তোমাকে এপ্রিশিয়েট করবে না, ইন্সপায়ার্ড করবে না বরং ডিমোটিভেট করবে তাদেরকে এভোয়েড করে চলবে।
আপাতত এসব ব্যাপার মাথায় রেখে হার্ড ওয়ার্ক শুরু করে দেও। এগুলো আগে ঠিক করে নেও এগুলো সব ঠিকঠাক হলে বইলো তখন বলে দিবো কিভাবে পড়তে হবে। এগুলো হচ্ছে পড়া শুরু করার আগের প্রিপারেশন। এগুলো ম্যান্টেইন করে চলতে পারলে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই নিজের লক্ষে পোঁছাতে পারবে। আমার স্টুডেন্ট একজন ৪০+ থেকে ৩ এ এসেছে অন্যজন ৮ থেকে ৫ এ এসেছে। ইনশাআল্লাহ এবার আরো ভালো কিছু করবে। তুমিও পারবে। এই বয়সে এক থেকে তিন কিভাবে এই প্রশ্ন মনে এসেছে এটাই বেশি। ফ্রি ফায়ার না খেলে কোরায় প্রশ্ন করেছ এটাই যথেষ্ট। দুই কিংবা তিন নয় ক্লাসে প্রথম হবে তুমি ইনশাআল্লাহ। অনেস্টি>হার্ড ওয়ার্ক>রেসপনসেবলিটি
আর একটা কথা, বন্ধু, খেলাধুলা, রিলেটিভস এসব ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সবার মধ্যে থেকে সবকিছুর টাচে থেকেই ভালো করতে হবে। বন্ধুর সময় বন্ধু, খেলার সময় খেলা, পড়ার সময় পড়া। পড়ার টাইমে বন্ধু/মোবাইল/খেলা নয়, খেলার/বন্ধুর টাইমে পড়া নয়।
rockyahmed publisher