Answered 3 years ago
কিভাবে ছোট ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে?
আপনি যদি ছোট করে ব্যবসা শুরু করতে চান অথবা আপনি যদি ভয় পেয়ে যান যে ব্যবসা শুরু করছি লাভ হবে কিনা লস হবে? বা বিনিয়োগ করছি সেটা কি আমি তুলে নিয়ে আসতে পারবো? বা একদম স্বল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে এই পোস্ট-টা আপনার জন্য একটা বৈপ্লবিক পোস্ট হবে।
পুরো বিষয়টাকে আমি তিনটা গল্প দিয়ে শুরু করব এবং এই তিনটা গল্পের মধ্য দিয়েই আপনি উত্তর পেয়ে যাবেন আসলে আপনাকে কোন ঘটনা টা ফলো করতে হবে।
পুরো পোস্টটি খুবই শিক্ষামূলক পোস্ট হতে চলছে। পোস্টটি পুরোটা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন এবং অনুরোধ থাকলো পোস্ট টা ভালো লাগলে শেয়ার করবেন আপনার সেই সমস্ত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বোনদের কাছে যারা সত্যি তাদের ব্যবসা নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন এবং যারা শুরু করতে অনেক ভয় পাচ্ছে এবং যারা চিন্তা করতেছে আমার কাছে তো পুঁজি নাই আমি কিভাবে একটা ব্যবসা শুরু করতে পারি?
বা যার কাছে পুঁজি আছে কিন্তু সে কীভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না তাদের জন্য এই পোস্টটি হবে একটা সোনার হরিণ।
ঘটনা ১:
রাহুলের কয়েকটা বন্ধু রাহুলের কাছে আসলো এবং রাহুলের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইল যে রাহুল তোমার ব্যবসা কেমন চলছে?
রাহুল মাথায় হাত দিয়ে বলছে আমার ভাগ্য অনেক খারাপ আমি যে ব্যবসা শুরু করি, যেখানেই টাকা বিনিয়োগ করে সেখানেই আমি লোকসানের মুখে পড়ে যাই। আমার মনে হয় ভাগ্য খারাপ। আমি আর কিছুই করতে পারবোনা।
তখন রাহুলের বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করল কেন কি হয়েছে? দেখো না আমি কয়দিন আগে বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করার জন্য একটা ব্যবসা শুরু করেছিলাম এর জন্য আমি একটা দোকান ভাড়া করেছিলাম।
তারপর বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করে পুরো দোকানটাকে আমি সুসজ্জিত করেছিলাম তারপর আরো কিছু টাকা বিনিয়োগ করে আমি দোকানের জন্য কিছু পণ্য নিয়ে আসে ব্যবসা শুরু করলাম।
আর আমার পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। আমি মার্কেটিংয়ের জন্য খরচ করছি তারপরও আমি ভালো কাস্টমার আমার দোকানে নিয়ে আসতে পারছিনা। এখন আমার পুরো লোকসানের মধ্যে ব্যবসা চলছে।
ঘটনা 2:
শিপন একটা খেলনার ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছে এবং এর জন্য সে তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং আশপাশ এলাকার সবার কাছে জানতে চাওয়া শুরু করল যে খেলনার ব্যবসা করলে কেমন লাভ হবে? আর কী রকম পণ্য আমি নিয়ে ব্যবসা করলে ভালো সফলতা অর্জন করতে পারব ?
শিপন এখানে ব্যবসা শুরু করার আগে কি পন্য নিয়ে ব্যবসা করবে এবং ব্যবসায় সে পণ্যগুলো কেমন বিক্রি হবে সেটার জন্য সে আগেই বেশকিছু কাস্টমারের কাছে তথ্য সংগ্রহ করে রাখল।
এবার শিপন সেই তথ্য অনুযায়ী ব্যবসা কে তৈরি করা শুরু করলো ব্যবসার জন্য প্ল্যান করল এবং কিছু টাকা ইনভেস্টমেন্টের জন্য খুঁজে পেল এবং সে একটা দোকান ভাড়া করল এবং দোকানকে সুসজ্জিত করার জন্য টাকা বিনিয়োগ করলো এবং পণ্য কিনে নিয়ে আসার জন্য টাকা বিনিয়োগ করলো।
শিপন কিছুদিন পর দেখতে পেল সে সবকিছু ঠিকঠাক তার বাজার গবেষণা অনুযায়ী করল তার পরেও তার ব্যবসা থেকে সে প্রত্যাশিত ফলাফল পাচ্ছে না। সে বিজ্ঞাপন করছে সেখান থেকেও সে কাঙ্খিত ফলাফল পারছেনা তার কাছে মনে হচ্ছে সে যা বিজ্ঞাপন করছে এবং সে যা বিনিয়োগ করেছে এ পর্যন্ত ব্যবসার জন্য তার সবই ব্যর্থ হতে শুরু করেছে।
ঘটনা 3:
তিন নাম্বার এবং শেষের ঘটনাটা নিলয়ের যে কাউকে কোনো কিছু না বলে একটা বুদ্ধি মাথায় পেল। যেটা হলো, সে দু'চারটা খেলনা সংগ্রহ করলো যা বাচ্চাদের পছন্দ হবে বলে সে মনে করলো তারপর সে ইউটিউবে ভিডিও দেখে একটা ফেসবুক পেজ তৈরি করল যা আসলে একদম ফ্রিতে তৈরি করা যায়।
তারপর সে তার এক পরিচিত বড় ভাই এর সাহায্যে সে পণ্যগুলোর ছবিকে সুন্দর করে ডিজাইন করে তার পণ্যের সঠিক কাস্টমারকে টার্গেট করে সে একটা বিজ্ঞাপন দিল। কিন্তু সে শুরুতেই কোন দোকান ভাড়া করলোনা। শুরুতেই সে বেশি পণ্য কিনে নিয়ে আসলো না সে শুধু মার্কেটের অবস্থান বোঝার জন্য ফেসবুকে একটা বিজ্ঞাপন দিল।
তিন দিনের মধ্যে তার কাছে ১৫০ টি অর্ডার চলে আসলো এবং ১৫০ থেকে ৮০ প্রি বুকিং এর জন্য অফার পেল।
৩০০ - ৪০০ কাস্টমার এনগেজমেন্ট তৈরি হলো তার এড থেকে। সে তার এলাকায় এবং আশপাশের এলাকাকে টার্গেট করেছে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল সেখানে সে ২০,০০০ জন লোককে টার্গেট করেছিল সেখান থেকে সে ১২ হাজার জন লোককে বিজ্ঞাপনটি দেখাতে পেরেছিল ফেসবুকের মাধ্যমে। এবং যার জন্য সে খরচ করে ছিল ৪,০০০ টাকা
নিলয় এখানে যে কাজটা করেছিল সে আসলে বিজনেসের সেই টেকনিক কে কাজে লাগিয়ে ছিল যে কাকে বলা হয় Focus Pilot Market (FPM) বা লিন স্টার্টআপ।
সে নিয়মিত বিজনেস সম্পর্কিত ভিডিও, অডিও এবং ব্লক পড়তো যার কারণে সে এই বিষয়টা সম্পর্কে সেখানে জানতে পেরেছিল আর সে কিন্তু এখন একটা অনেক বড় ধারণা পেয়ে গেল এবং সে বুঝতে পারল যে কোন পণ্যের ব্যবসা করলে সে ভালো ব্যবসা করতে পারবে?
বিজনেসের একটা লেসন আপনাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আর যেটা হলো:
Let the customer vote through their wallet
কাস্টমারের মুখের কথা কোন দাম নাই সে যতই আপনাকে প্রতিশ্রুতি ডেকে না কেন আপনার কাছ থেকে পন্য কিনব কিন্তু তখনই আপনি শিওর হবেন যখন সে তার নিজের পকেট থেকে টাকা বের করবে।
প্রথম ঘটনায় রাহুলের ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে সে নিজে যা বিক্রি করতে চেয়েছে তাই বিক্রি করেছে কাস্টমার কি কিনবে বা কাস্টমারের কি পছন্দ সে সেটা একদমই আগ্রহ দেয়নি যার কারনে সে তার ব্যবসা কে ধরে রাখতে পারল না।
দ্বিতীয় ঘটনায় শিপন মার্কেটের জন্য গবেষণা তো করেছিল এবং কাস্টমারের প্রতিশ্রুতি সে নিয়েছিল কিন্তু তারপরেও সে এত বড় বিনিয়োগ করে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছিল।
কিন্তু তৃতীয় ঘটনায় নিলয় অনেক চালাকির পরিচয় দিল এবং সে একটা ফেসবুক এড এর মাধ্যমে বুঝে ফেলল যে তাকে কোন পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে এবং সে সামান্য ১০,০০০ টাকার কম মূল্যের অর্থ দিয়ে বুঝে গেল যে তাকে কোন পণ্যের ব্যবসা করলে সে ভালো ফলাফল পেতে পারবে।
এভাবে নিলয় তার বিজনেস স্কিল কে কাজে লাগিয়ে ছোট ছোট স্টেপ নেওয়া শুরু করলো এবং আস্তে আস্তে তার ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সুন্দর একটা বড় ব্যবসা তৈরি করে ফেলল।
তাই আপনাকেও এখান থেকে একটা শিক্ষা নিতে হবে যেটা হচ্ছে যে কোন ব্যবসা শুরু করুন না কেন শুরুতেই বড় বিনিয়োগ করতে যাবেন না। আর ব্যবসা কি করবেন সেটার আইডিয়া যদি পেতে চান তাহলে এভাবে ছোট ছোট টেস্ট করে আপনি দেখতে পারেন আসলে কোন ব্যবসায় কাস্টমারের ভালো সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
আর আরেকটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন শুরুতেই আপনি বারবার ভুল করতে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক এবং ছোট মার্কেটে ভুল করে অনেক কিছু শেখা ভালো। ছোট ইনভেস্টমেন্টে ভুল করে অনেক কিছু শেখা ভালো।
আমি যদি আবার তিন নাম্বার ঘটনা নিলয়ের ঘটনাটাকে বলি তাহলে সে নিলয় যদি ভুল করতো তাহলে সে অল্প কিছু টাকার মধ্যে দিয়েই ভুল করে অনেক কিছু শিখতে পারতো। অবশ্যই আপনাকে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালো কিছু করতে হবে।
আজকে পৃথিবীতে গ্লোবাল ই-কমার্স দানব অ্যামাজন এর কথা যদি আমি বলি তারা শুরুতেই এরকম ছোট ছোট বই বিক্রি করত অনলাইনে। তারপরে কাস্টমারের সহযোগিতা এবং কাস্টমারের হিডেন সিগন্যাল বুঝতে পেরে সে তার ব্যবসা কে বড় করতে পেরেছে।
আমি রাশেদুল ইসলাম লিডারশিপ ট্রেইনার এবং বিজনেস কোচ। আমি থিউরিতে বিশ্বাস করিনা আমি গল্পকে বিশ্বাস করি। আমি চাইলে থিউরি দিয়ে আপনাদেরকে অসংখ্য কনটেন্ট দিতে পারতাম কিন্তু আসলে থিওরি এর মাদ্ধমে পড়াশোনার এখন আর তেমন কোনো দাম নেই।
পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন গল্পের মাধ্যমে পড়াশোনা শেখানো হচ্ছে। সেখানে গল্প দিয়ে পুরো কনটেন্ট তৈরি করছে। আমি যদি বলি পৃথিবীর সবথেকে বড় বিজনেস স্কুল হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল যাদের পড়াশোনার ৮০% তৈরি হয় গল্প দিয়ে।
আর আমাদের বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের পড়াশোনার কনটেন্ট তৈরি হয় থিউরি দিয়ে
rasel.rana12 publisher