উচ্চ শিক্ষার জন্য যখন দেশের বাইরে যান, প্রথম দিনটা অচেনা শহরে কী করে কাটান?

1 Answers   12.5 K

Answered 3 years ago

ব্যক্তিগত প্রশ্নগুলোর উত্তর আর দিবনা বলেই ঠিক করেছিলাম। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার লোভ সামলানো দায়।

আমি উচ্চশিক্ষার জন্যই প্রথম দেশের বাইরে বের হই সেই ২০১৬ তে। মুখচোরা স্বভাবের বলে আমি সমসাময়িক আরো কেও একই দিনে জাপানে আসছে কিনা সে বিষয়ে কোন খোঁজখবর করিনি। দেশে মাস্টার্স করার পর অন্তত এত ছোট ছিলাম না যে সঙ্গী-সাথী নিয়ে বিদেশযাত্রা করতে হবে। তবে আমি এদেশে আসবার দুই-একদিন আগে আমার দুইজন ক্লাসমেট এখানে চলে এসেছিল।

৬ঘন্টার ট্রানজিটসহ মোট ১৭ঘন্টার যাত্রার পর জাপানের New Chitose International Airport এ আমি পৌঁছাই সকাল আটটার দিকে।

ইমিগ্রেশন আর অন্যান্য শেষ করে মুক্তি পেতে পেতে প্রায় দশটার মতন বেজে যায়। বিশাল বড় লাগেজ ঠেলে সামনের দিকে এসে দেখি আমার নামের প্ল্যাকার্ড নিয়ে পিচ্চি একটা জাপানি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কথা আমাকে আগেই জানানো ছিল। আমি যে ল্যাবে যোগ দিচ্ছি ও সেখানে ব্যাচেলর ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র।

আমার জীবনের সেটাই প্রথম বিদেশযাত্রা। চারদিক দেখে আমি কুল-কিনারা করতে পারছিনা। ছেলেটার সাথে কথাবার্তা বেশি জমলো না, একদমই ইংরেজি পারেনা বলতে গেলে। এত উন্নত দেশের ব্যাচেলরে পড়া একটা ছেলে ন্যুনতম ইংরেজি বলতে পারছেনা দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম! ট্রেনে করে প্রায় একঘন্টার রাস্তা পেরিয়ে সোজা ও আমাকে নিয়ে আসল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আমার এখনো মনে আছে, অক্টোবরের ৩ তারিখ, এখানে শরৎ তখন যাই-যাই করছে। এত মন খারাপ করা ঝিরঝির বৃষ্টি পরা একটা আবহাওয়া। কাওকে চিনি না, সব রাস্তা-সাইনবোর্ড-বিজ্ঞপ্তিতে জাপানি লেখা। ল্যাবে এসে প্রথম আমার পরিচিত একজনের দেখা পেলাম, এক সিনিয়র আপু যিনি আমার একই ল্যাবের সদস্য! তিনি ছাড়াও আরো তিন-চারজন পরিচিত সিনিয়রেরা ছিলেন তাই এর পর আর বেশি খারাপ লাগেনি। ক্যাফেটেরিয়ায় লাঞ্চ করিয়েছিলেন এক বড় ভাই। স্টিকি রাইস, আগুনে ঝলসানো সাবা মাছ আর ঐতিহাসিক মিসো স্যুপ! ইশ! কী ভয়ঙ্কর স্বাদ -_- অনেকটা এরকম দেখতে-

এরপর ল্যাবে কিছু সময় কাটাবার পর যেহেতু রাস্তাঘাট কিছুই চিনিনা ওই ইংরেজি না জানা পিচ্চি ছেলেটাই আমাকে আমার আগে থেকে ঠিক করে রাখা ডরমেটরিতে পৌছে দিল। সেসময় প্রায় বাজে পাঁচটার মত। ডর্মে সব আচার-ব্যবহার বুঝে নিয়ে আগের দিন আসা আমার ক্লাসমেটদের সাথে দেখা হলো। ওরাও একই ডর্মে ছিল, এসে রাতে খাওয়ার জন্য কিছু খাবার দিয়ে গেল।

দেশে কথা বলতে পেরেছিলাম কিনা সেদিন আর মনে পরছে না, ক্লান্ত হয়ে খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে গেছিলাম সেদিনের মত!

পিঠাপিঠি দু'বোন হওয়াতে আমি কখনোই একা ঘুমাতাম না আগে, সেদিন থেকে একা ঘুমানো তো বটেই, আব্বুর অনেক আশায় লালিত স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় একলা-একাই চলতে শিখতে শুরু করলাম!

Dorud Uddin
dorududdin
459 Points

Popular Questions