ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে বর্বর উপনিবেশবাদীগণ কারা কারা ছিলেন?

1 Answers   5 K

Answered 2 years ago

বর্তমান সময়ের গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো(The Democratic Republic of Congo) নিয়ে এই ইতিহাস হলেও এর সূচনা হয়েছিল ইউরোপের একটি সম্মেলনে। ১৮৮৪-৮৫ সালের বার্লিন সম্মেলনে[1]
ইউরোপীয় শক্তি গুলো কঙ্গো বেসিন কে একটি বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাছে সমর্পণ করে। ঘটনা চক্রে এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি ছিল তত্কালীন বেলজিয়ান রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড[2]
। তত্কালীন ইউরোপীয় উপনিবেশের দেখাদেখি রাজা অভিষিক্ত হবার আগে থেকেই দ্বিতীয় লিওপোল্ড বেলজিয়ামের বাইরে একটি উপনিবেশ স্থাপনের ইচ্ছা পুষে রেখেছিলেন। তার এই ধারণা বেলজিয়ামের স্থানীয় রাজনীতিতে খুব একটা জায়গা করে নিতে পারেনি। বার্লিন সম্মেলন থেকে তিনি যেন নিজের ইচ্ছা পূরনের একটা পথ খুঁজে পেলেন। সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২.৪ লক্ষ্য বর্গ কিলোমিটার জায়গা হয়ে গেলো রাজা লিওপোল্ডের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এই বিরাট এলাকা তখন কঙ্গো মুক্ত রাজ্য(Congo Free State)[3]
নাম নিয়ে সরাসরি রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ডের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়।

ছবি: রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড ,উৎসঃ উইকিপিডিয়া

যদিও এই অধিগ্রহণের কারণ হিসেবে রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড মানবিক সাহায্যের মাধ্যমে সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করার ইচ্ছেকেই পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছিলেন, বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে এই অধিগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকায় ইংরেজ এবং ফরাশি ঔপনিবেশের মাঝে একটি বাফার অঞ্চল প্রতিষ্ঠা আর রাজা লিওপোল্ডের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান থেকে যথাসম্ভব লাভ বের করে আনা। প্রতিষ্ঠার প্রথম কয়েক বছর গেছে গোষ্ঠিগত সংঘাত নিরসনে এবং ক্ষমতার পালাবদলে। এরপরই শুরু হয় স্বেচ্ছাচারী শাসন। রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড কঙ্গো থেকে হাতির দাঁত এবং রাবার সংগ্রহ করতে শুরু করেন। সেখানে তখন রাবার সংগ্রহ করার জন্য কোন পরিকল্পিত রাবার বাগান ছিল না। বন্য রাবার গাছ থেকেই রাবার সংগ্রহ করা হতো। আর সময়কালটা ছিল যান্ত্রিক গাড়ি ইউরোপে জনপ্রিয় হবার মুহুর্তে। গাড়ির চাকার জন্য রাবারের প্রয়োজন তখন বেড়েই চলছিল। এই সময়েই রাজা দ্বিতীয় লিওেপোল্ড কঙ্গো থেকে মুনাফা লাভের হাতিয়ার করে তুলতে পেরেছিলেন।

কঙ্গোর বনাঞ্চলের রাবার গাছ থেকে মানুষকে রাবার সংগ্রহ করতে পাঠানো হতো। রাবার সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হতো। বিভিন্ন গোত্র প্রতিবেশী গোত্রের উপর হামলা করতে শুরু করে লক্ষ্য পুরণ করতে না পারায় এবং ঘাটতি পুরণে তাদের সংগৃহীত রাবার লুট করার জন্য। লক্ষ্য পুরণে ব্যর্থ হলে শাস্তি হিসেবে হাত কেটে নেয়া হত। কাটা হাত তখন অর্থের মত ব্যবহার করা যেতো। রাবারের লক্ষ্য পুরণে ব্যর্থ হলে কাটা হাত জমা দিলেও তা ক্ষতিপুরণ হিসেবে গন্য হতো(এই বিষয়টার রেফারেন্স আমি মনে করতে পারছি না, কারো জানা থাকলে মন্তব্যে উল্লেখ করার অনুরোধ রইলো)।

কর্তৃপক্ষের কাছে কঙ্গো মুক্ত অঞ্চলের ঐ কালো জীবেরা মানুষ বলে গন্য হতো বলে মনে হয় না। লক্ষ্য পুরণ ব্যর্থ হলে গুলি করার অনুমতি ছিল। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিটি গুলির পরিবর্তে একটি হাত প্রমাণ স্বরুপ উপস্থাপন করতে হত। এটা কর্তৃপক্ষের সামনে এটা প্রমাণ করত যে তাদের কর্মচারীরা ঐ বুলেট কাজের জন্যই ব্যবহার করেছে, শিকার বা ব্যক্তিগত আনন্দ ফুর্তির জন্য নয়।

Saker
Saker
463 Points

Popular Questions