আমি একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী (বিজ্ঞান বিভাগ)। এইচএসসি পরীক্ষার পর আমি এক বছর গ্যাপ ইয়ার নিয়ে নিজের আত্ম উন্নয়ন করতে চাই। এক বছরে আত্মোন্নয়নের জন্য আমি কী কী কাজ করতে পারি?

1 Answers   12.8 K

Answered 3 years ago

আপনাকে অভিনন্দন এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। গ্যাপ ইয়ার নেয়ার ধারণাটা উন্নত দেশগুলোতে খুবই কমন হলেও বাংলাদেশে জিনিসটা খুব একটা দেখা যায়না। চলুন জেনে নেয়া যাক এক বছরে আপনি কি কি কাজ করতে পারেন যাতে আপনার আত্মোন্নয়ন হয়ঃ


জিঞ্জিরাতে ইন্টার্নশিপঃ শুনে হয়তো অবাক হবেন। কিন্তু আমি মজা করছিনা। বটি থেকে সমুদ্রগামী জাহাজ, পিঠ চুলকানোর প্লাস্টিকের লাঠি তৈরির ছাঁচ থেকে শুরু করে পাটকল-বস্ত্রকলের যন্ত্রপাতি। কী তৈরি হয় না এই জিঞ্জিরায়। আপনি যদি ভবিষ্যতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তাহলে এখানে হাতে কলমে যা শিখতে পারবেন তা আপনার ইউনিভার্সিটির প্রফেসররা চার বছর কেন চল্লিশ বছরেও শিখাতে পারবেনা।


বুড়িগঙ্গার এ পারে ঢাকার ধোলাইখাল আর ও পারে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা। সাত দশক আগে এখানে হালকা প্রকৌশলশিল্পের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তাতে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণ তো দূরের কথা, এখানকার কারিগরদের কেউ কেউ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্নও নন। শুধু দেখে দেখে শিখে এই মানুষগুলো দেশের হালকা প্রকৌশল খাতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন।


একসময় শিল্পের যন্ত্রাংশের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি বিদেশনির্ভর ছিল। তবে বুড়িগঙ্গার দুই পারের কারিগরেরা জানালেন, তাঁরা এখন কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, গাড়ি, রেলওয়েসহ বিভিন্ন খাতের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করেন। কেবল যন্ত্রাংশই তৈরি করেন না, যন্ত্রাংশ তৈরির মেশিন বানিয়েও বেচছেন তাঁরা। সারা দেশে সেই যন্ত্রের ব্যবহার আছে, যার কারণে যন্ত্রের জন্য বিদেশনির্ভরতা কিছুটা হলেও কমেছে।


আমি বলবো যদি সম্ভব হয়, সেখানে গিয়ে তাদের থেকে কাজ শিখুন। এসব শিক্ষা বইতে পাওয়া যায়না ভাই। বিশ্বাস করুন, আপনার জীবনটা বদলে যাবে। জীবন যুদ্ধে অনেক এগিয়ে যাবেন আপনি।


রেস্টুরেন্টের ওয়েটারঃ কর্মক্ষেত্রে আরেকটা বড় স্কিল যেটা লাগে সেটা হলো কমিউনিকেশন স্কিল। আমি দেখেছি রেস্টুরেন্টের ওয়েটারদের কমিউনিকেশন স্কিল অনেক ভালো। কারণ তাদের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলতে হয়। মানুষের সাথে নম্রভাবে কথা বলা, পারসুয়েসিভনেস, টাইম ম্যানেজমেন্ট, লিডারশিপ স্কিল, স্কেজিউল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি স্কিল শিখতে পারবেন এই জবে। শুধু কর্মক্ষেত্র কেন, জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে এসব স্কিল কাজে লাগবে।


বুক স্টোরে বুক সেলারঃ বই আমাদের জীবনে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মানসিক ম্যাচুরিটি আসার জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কোটি কোটি বইয়ের থেকে এই সংক্ষিপ্ত জীবনে সব বই তো আর পড়তে পারবেন না। তাই আমাদের জানতে হবে কোন বই গুলো পড়ার যোগ্য। সেটা জানার জন্য বুকস্টোরে জব করার থেকে ভালো বিকল্প কি বা হতে পারে? একটা প্রবাদ আছে "আতর বিক্রেতার সাথে বন্ধুত্ব করলে, আপনি গায়ে আতর না মাখলেও তার সাথে থাকার ফলে আপনার গা থেকে আতরের গন্ধ আসবে, আবার কামারের সাথে বন্ধুত্ব করলে আগুনের আচ কিছুটা হলেও আপনার গায়ে আসবে। এবার আপনিই ঠিক করুন আপনি কি চান আপনার গায়ে বইয়ের গন্ধ লেগে থাকুক? তাহলে বুক স্টোরের জব আপনার জন্য।


কোনো প্রতিষ্ঠান বা ইউনিভার্সিটিতে ইন্টার্নশিপঃ এই কাজটা আমি করেছি। আইআইটি মাদ্রাজে তি মাসের একটা ইন্টার্নশিপে যোগ দিয়েছি। বিশ্বাস করুন, এই ইন্টার্নশিপে যোগ দেয়ার আগে আমি যে মানুষ ছিলাম, বর্তমানে আমি সেই মানুষ নেই। এত এত জিনিস শিখেছি, জীবনকে এত নতুন এঙ্গেল থেকে দেখেছি যে নিজের ব্যাপারে আমি এখন আগের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। আমি কোন ক্যারিয়ারে যেতে চাই তা নিয়ে আমার এখন একটা স্পষ্ট ধারণা আছে। আপনিও চাইলে যে কোনো একটা প্রতিষ্ঠান কিংবা ভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করে ইন্টার্নশিপ করতে পারেন।


Anika Banu
anikabanu
286 Points

Popular Questions