Answered 2 years ago
যাদের ফোন সম্পর্কে নিম্নমানেরও ধারণা আছে তারা নিশ্চয়ই এই ফোনটিকে চিনেন! ২০২২ সালের সকল ফোনকে পিছনে ফেলে s22 ultra নিজের জায়গা শীর্ষে করে নিল। শুরুর দিকে এর দাম ছিল ছুঁই ছুঁই ২ লক্ষ টাকা! গল্প শুরু এখান থেকেই!
প্রায় ২ সপ্তাহ আগে। s22 ultra ফোনটির কেনার উদ্দেশ্যে তাদের অফিসিয়াল দোকানে গেলাম। আমার আবার একটা স্বভাব যে কোনো ফোন কিনতে গেলে আমি একটা সিটে বসে ১৫-৩০ মিনিটের জন্য এটা আগে চেক করে নিই। বাস, একটা এক্টিভ সিম ফোনটিতে ঢুকিয়ে পুরা ফোনটির আনাচা-কানাচা চেক করলাম। যতটা না ইউটুবারের রিবিউ শুনে এ মোবাইলের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল, মোবাইলটা নিজ হাতে চালানোর পর এই ভালোবাসা যে কত গুণ বেড়ে গেল তা আমার অন্তর্যামীই জানে। এত ফাস্ট সার্ভিস, এত ফিচারস, ক্যামেরার কথা তো আর বললামই না। ১৪৩০০০ টাকা দিয়ে ফোনটি কিনে নিলাম।
ওভারে করে বাসায় যাওয়ার চিন্তা ছিল, কিন্তু মন বদলে গেল। ভাবলাম যে ফুফাতো বোনের সঙ্গে একটু দেখা করে আসি। ওর আবার আইফোনের ক্যামেরার উপর ক্রাশ ছিল। s22 ultra এর ক্যামেরাটা দেখানোর জন্যই মূলত সেখানে যাওয়া ঠিক করলাম। এত ভালো স্মার্টফোন কিনলাম, তো মনের মধ্যে তো ফুল ফুটবেই।
১৫ মিনিটের রাস্তা। যেতে যেতে ফোনটি দিয়ে অনেক ফটোশুটও করতে লাগলাম। ওদের বাসায় আমার যাওয়া হয় না। সেই কুরবানি ঈদে একবার যাওয়া। আর আজকে আরেকবার। রাস্তাঘাটও অত মনে নেই। নতুন ফোনে গুগল ম্যাপ ওপেন করে রাস্তায় হাঁটছি।
দুপুর প্রায় ১ টা। শীতকাল হলেও সূর্য ওই দিন একটু ভালোই তাপ দিতে লাগলো। তার জন্যই মনে হয় রাস্তা এত ফাঁকা। একজন লোকও নাই। যে কয়টা দোকান ছিল ওইগুলোও বন্ধ। ৩-৪ মিনিট হাঁটতেই পিপাসা লেগে গেল। ব্যাগের পানির বোতল থেকে পানি খাওয়ার জন্য একটা বেঞ্চের উপর বসলাম।
এমন সময় ভদ্র পরিবারের একজন ছোট ছেলে এসে আমাকে বলল, 'ভাইয়া, নারারাপুর জায়গাটা কোথায় বলতে পারেন?'আমি সচরাচর এক ফুফাতো বোন ছাড়া এ জনকূলে কারোর সাথেই কথা বলতে পছন্দ করি না। কিন্তু ওইদিন মনটা বেশ আনন্দিত ছিল। এজন্য আমি বললাম, 'আমি তো এখানে নতুন, জানি না। তবে অপেক্ষা কর একটু।' বলে গুগল ম্যাপে তার জায়গাটা সার্চ করলাম। এ নামে কোনো জায়গা না পেয়ে বললাম যে, 'তুমি মনে হয় ভুল জায়গার নাম বলেছ। এখানে কোনো জায়গা শো করছে না।' তখন ও বললো যে, 'ভাইয়া আমারও তাই মনে হচ্ছে, যাকে জিজ্ঞেস করি সে-ই জানে না। এখন কি করব? আপুর বাসায় সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।'
আমি বললাম যে, 'তুমি তোমার মা-বাবাকে ফোন দিয়ে ভালো করে এড্রেসটা জেনে নাও। ' ও বললো যে, 'ভাইয়া আমার কাছে তো ফোন নেই, আপনি আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন, প্লিজ? ' এই প্লিজ শব্দটা শুনেই হাতের s22 ultra স্মার্টফোনটি তাকে দিয়ে বললাম, 'সিউর, কল দাও।' তো সে একটা নাম্বারে ডায়াল করে আস্তে আস্তে বললো, 'পাইছি, ৬ নম্বর রোড।'
যেখানে সে আম্মু বলে ঠিকানাটা জানতে চাইবে সেখানে এ কথার মর্ম বুঝতে না পেরে আমি তার দিকে অন্যভাবে তাকাতেই এক দৌড় দিল। ' এইইইইই….' বলে বসে থেকেই ভাবলাম যে হচ্ছেটা কি? এতো ভদ্র পরিবারের ছেলে… কোনোদিন এমন অভিজ্ঞতা আমার হয়নি তাইতো অবুঝের মতো এত কিছু ভাবতে লাগলাম। এতো কিছু ভাবার সময় নেই বলেই জান-জীবন দিয়ে চোরটার পিছন পিছন দৌড়ালাম। অল্প সময়েই আমি তার নাগালে এসে পড়েছি। পিছন থেকে একটা বাইক আসছে। বুকে জল ফিরে এলো। চলন্ত বাইকারকে বললাম যে, চোর! ওকে ধরেন, আটকান। বাইকওয়ালা সাথে সাথে ওর সামনে এসে ওকে ধরে ফেলল।
মুখে হাসি এলো। ওর কাছে যেতেই দেখি যে, ওই লোকটা ওকে ধরে তার বাইকে উঠিয়ে নিয়েছে, বুঝতে বাকি রইল না। ওই ছেলেটা এই বাইকওয়ালাকেই ফোন দিয়েছিল ওই সময়। বাইক চলে গেল আর আমি রাস্তার উপর বসে পড়লাম। কি হলো! সেন্সলেস হচ্ছি এমন মনে হয়। এতদিনের আশা, স্বল্পক্ষণের অর্জন, ফুফির বাসায় যাওয়ার উদ্যোগ, জ্বলন্ত টাকা, পরিশ্রম সবকিছু এক মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল।
পুরো পানির বোতলটা শেষ করলাম। থানায় গিয়ে বললাম। ওরা বললো যে আপনি যদি ফোনটিতে নিজের ইনফরমেশনগুলো সেটাপ করে নিতেন তাহলে খুব সহজেই উদ্ধার করা যেতো। তারা সিমটাও আপাতত খুলে নিয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করবো। তারা যে কতখানি চেষ্টা করবে তা তাদের বাণী শুনেই বুঝলাম।
খালি মনে নিজের বোকামির কথা মনে করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রাস্তায় হাটতে শুরু করলাম। যে ছেলে সারাজীবন তার ইমোশনকে কন্ট্রোল করে আসছে আজ সে এই ক্ষুদ্র ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।
মনের মধ্যে নোট করে নিলাম: [ আপনারাও চাইলে করে নিতে পারেন ]
কারোর উপর আর বিশ্বাস করবো না। যত-ই আলেম-মাওলানা, ভদ্র লোকই হোক না কেন! অন্তত এই চোরের খনির প্রাণীদের উপর আর বিশ্বাস করব না। কখনো না।
Anika publisher