Answered 3 years ago
লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের অনেক কারণ রয়েছে, সেখান থেকে কিছু নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। (কারণ গুলি আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সবার সাথে মিলতে হবে এমন কথা নেই।) লেখাটা একটু বড় হবে হয়তো।
১. অন্য কিছু চাওয়া:
সবসময়ই লক্ষ্য করেছি নতুন এবং অন্যরকম কিছু আমার মনে আগ্রহ সৃষ্টি করে। যখন আমার আশেপাশে সবাই উইন্ডোজ নিয়ে মেতে আছে, আমার পছন্দ ভিন্ন কিছুর। সেই ভিন্নতা রয়েছে লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমে। উইন্ডোজ যেখানে একটি তে আটকে রয়েছে লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমের সংখ্যা সেখানে শত শত। রয়েছে প্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের ভিন্নতা, যা কখনো একঘেয়েমি আসতে দেয় না।
২. নীতিবোধ / নৈতিকতা:
ছোট বেলা থেকেই মনের মধ্যে প্রবল নীতিবোধ খুঁজে পেয়েছি, কথা দিয়ে কথা রাখা, অন্যের জিনিসের প্রতি লোভী না হওয়া, নিজের অল্পতে সন্তুষ্ট থাকা এসব আমার ভাল লাগত। বড় হয়ে কম্পিউটার যখন হাতে এল তখন ক্র্যাকিং উইন্ডোজ কিংবা সফটওয়্যার চালাতে মোটেই ভাল লাগত না। নিজেকে চোর মনে হত। আবার টাকা দিয়ে (প্রায় ৩৫ হাজার) অপারেটিং সিস্টেম, অফিস টুল এবং অ্যান্টিভাইরাস কেনারও সামর্থ্য ছিল না। এরপর যখন বিকল্প খুঁজে পেলাম তখন ওটা আমায় অনুপ্রাণিত করল। মুগ্ধ করল। বেছে নিলাম লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম।
৩. একঘেঁয়েমি দূর করতে:
ক্র্যাক উইন্ডোজ চালানোর সময় লক্ষ্য করতাম এখানে নতুন কিছু নেই, সেই ২০০২ সালের উইন্ডোজ ৯৮ এ যেমনটা ছিল, এখানেও সেই একই জিনিস। খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। বিষয়টা ভাল লাগেনি। বলতে গেলে একঘেঁয়ে লাগত। অপর দিকে লিনাক্স মিন্ট (আমার প্রথম অপারেটিং সিস্টেম, উবুন্টুর ইউনিটি এনভার্নমেন্ট ভাল লাগত না) বেশ বৈচিত্র্যময় ছিল। একঘেঁয়ে লাগত না। সিনামনের টাইটেল বার থেকে অনেক কিছু পরিবর্তন করতে পারতাম। ভাল লাগত।
৪. রিচার্ড স্টলম্যানের অনুপ্রেরণা:
যখন ডুয়াল বুটে চালাতাম তখন বেশ দ্রুত লিনাক্স মিন্টের ভক্ত হয়ে যাই। এবং এই জাতীয় অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করি, তখন জানতে পারলাম এই মহামানবের নাম। আরো ঘাঁটাঘাটির পর জানতে পারলাম এই GNU অপারেটিং সিস্টেমের ইতিহাস এবং কীভাবে এটি GNU/Linux হল সেই কথা। আরো ভাল লাগলো রিচার্ড স্টলম্যানের বিভিন্ন বক্তব্য শুনে। উইন্ডোজকে পুরোপুরি বিদায় জানালাম।
৫. আদি বিষয়ের প্রতি আগ্রহ:
শুরুর দিকে অপারেটিং সিস্টেম কেমন ছিল? কীভাবে মানুষ কাজ করত? এই যুগেও কী সেই স্বাদ পাওয়া যাবে? পুরোপুরি পেলাম না বটে, তবে কমান্ডলাইন আমার প্রেমিকা হিসেবে দেখা দিল। এর সাথে সময় কাটাতে খুব ভাল লাগত।
৬. লিনুস তোরভাল্দসের অনুপ্রেরণা:
এই লোকটা একাই কম্পিউটার সিস্টেমের কার্নেল লিখে ফেলেছে, এরপর ব্যবসার দিকে না গিয়ে একে উন্মুক্ত করার মত মহানুভবতা দেখিয়েছে, এর জন্যই বর্তমানে লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমের এত জনপ্রিয়তা। বলতে গেলে তুলনাহীন মহান মানুষ। ভাল লাগল তার কথা, তার চিন্তা ভাবনা, আরো বেশি অনুপ্রাণিত হলাম।
৭. শিক্ষা ক্ষেত্রে কার্যকর:
ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যদি চুরি টুরি করে চালিয়ে প্রপ্রায়েটরি সফটওয়্যার গুলোতে হারিয়ে যাই এরপর যখন কপিরাইটের আইন আমাদের দেশে চালু হবে, তখন বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েই ওগুলো ব্যবহার করতে হবে। কী দরকার এত হাঙ্গামার? যেখানে চমৎকার বিকল্প কিছু রয়েছে!
৮. সাহায্যের মানসিকতা:
মানুষ হিসেবে যেমনই থাকি, যতটা নিকৃষ্ট হয়ে থাকিনা কেন, সহযোগিতা করার মনোভাব নিজের মাঝে খুঁজে পাই। আর এটার সুযোগ পেয়েছি লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে। লক্ষ্য করেছি যারা এটা ব্যবহার করে তারা সবাই অপরকে সহযোগিতার ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী! আমার এটা খুবই ভাল লাগে।
৯. পরিচালক/নিয়ন্ত্রক:
আসলে আমি বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করি, নাকি সফটওয়্যার আমাকে ব্যবহার করে? বুঝব কীভাবে? আমি কাউকে অযথা বিশ্বাস করতে ভালবাসি না। দরজা জানালা খোলা রেখে ঘুমাতেও চাইনা। আমার তথ্য কেউ আমার অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করবে সেটিও চাইনা। এ ব্যাপারে স্বাধীনতা লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমে পাওয়া যায়। অহেতুক কোন শর্ত নেই, যা আমার কম্পিউটারের নিরাপত্তা ব্যহত করতে পারে।
১০. নিরাপত্তা:
লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমগুলোর সোর্সকোড উন্মুক্ত এজন্য এর জন্য কেউ খুব একটা কষ্ট করে ভাইরাস তৈরী করে না। আর তৃতীয় পার্টির সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজনও হয় না। একের ভেতর সব। আমার নিরাপত্তা ব্যবহত হবার কিছু নেই। ভাইরাস টাইরাসের ঝামেলা নেই, দুশ্চিন্তাও নেই।
অবশেষে বলা যেতে পারে লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম বেছে নেওয়া কোনো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা দুর্বল ল্যাপটপ কিংবা ডেক্সটপেও ভালো পারফরমেন্স দেয়। তুলনামূলক ঝামেলামুক্ত। বারবার আপডেট আপগ্রেডের ঝামেলা নেই, নিজেকে চোরও মনে হয়না, কারণ এটা আমার জন্য উন্মুক্ত। আমার, একান্তই আমার। বাড়ির মতোই নিরাপদ স্থান।
fiazfuad publisher